পুরস্কার নিচ্ছেন না নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন। ফাইল চিত্র।
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের দেওয়া বঙ্গবিভূষণ পুরস্কার নিচ্ছেন না নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন। তিনি তাঁর পরিবারের মাধ্যমে জানিয়েছেন, তিনি অনেক পুরস্কার পেয়েছেন। এ বার নতুন কাউকে ওই সম্মান দেওয়া হোক।
এই মুহূর্তে অমর্ত্য বিদেশে রয়েছেন। সোমবার পুরস্কার দেওয়ার দিন তিনি কলকাতায় হাজিরও থাকতে পারবেন না। বস্তুত, নবান্ন সূত্রের খবর, অমর্ত্যের অভিমত জানার পর পুরস্কারপ্রাপকদের চূড়ান্ত তালিকায় তাঁর নাম রাখা হয়নি।
অমর্ত্যের বঙ্গবিভূষণ পুরস্কার না নেওয়ার খবর যে সময়ে প্রকাশ্যে এসেছে, তখনই ঘটনাচক্রে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে খানিক ‘অস্বস্তি’তে রয়েছে তৃণমূল। ফলে বিরোধী শিবিরের একাংশ (মূলত সিপিএম) নেটমাধ্যমে বলতে শুরু করেছে, পার্থ-কাণ্ডের ‘প্রতিবাদে’ অমর্ত্য ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যদিও ঘটনাক্রম বলছে, পার্থের গ্রেফতারির ঘটনার আগেই অমর্ত্য ওই বিষয়ে তাঁর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। রাজ্য সরকারকে তা জানিয়েও দেওয়া হয়েছিল।
সোমবার রাজ্য সরকারের তরফে অন্য বিশিষ্টদের পাশাপাশিই নোবেলজয়ী দুই অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য ও অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়কে বঙ্গবিভূষণ সম্মানে সম্মানিত করার কথা ছিল। একটি সূত্রের দাবি, অভিজিৎ আপাতত ফ্রান্সে রয়েছেন। ফলে অনুষ্ঠান মঞ্চে তিনিও সম্ভবত থাকবেন না।
সোমবার বিকেলে নজরুল মঞ্চে বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশিষ্টদের হাতে বঙ্গবিভূষণ ও বঙ্গভূষণ পুরস্কার তুলে দেবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভারতীয় ফুটবলে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান ও মহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবকেও বঙ্গবিভূষণ সম্মান দেওয়া হবে। প্রতিষ্ঠান হিসাবে সেই একই সম্মান দেওয়ার কথা এসএসকেএম সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালকেও।
তবে সর্বশেষে উল্লিখিত প্রতিষ্ঠানটিকে নিয়ে বিরোধীরা আবার প্রশ্ন তুলতে পারে। কারণ, ঘটনাচক্রে, রবিবারেই পার্থের অসুস্থতা জনিত মামলায় রায় দিতে গিয়ে কলকাতা হাই কোর্ট এসএসকেএম সম্পর্কে বেশকিছু ‘বিরূপ’ মন্তব্য করেছে। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি বিবেক চৌধুরী পার্থকে ভুবনেশ্বর এমসে স্বাস্থ্যপরীক্ষার জন্য নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিতে গিয়ে এসএসকেএম সম্পর্কে লিখিত ভাবে বলেছেন, ‘এ কথা বলা নিষ্প্রয়োজন যে, চিকিৎসকেরা হিপোক্রিটিক ওথ নিয়ে যখন চিকিৎসা শুরু করেন, তখন তাঁদের চিকিৎসাপদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তোলা অনুচিত। যদিও এসএসকেএম হাসপাতালের সঙ্গে জড়িত চিকিৎসকদের ভূমিকায় আমাদের মতো সাধারণ নাগরিকরা খুশি নন। সাম্প্রতিক অতীতে শাসকদলের একাধিক উচ্চ পদাধিকারীকে যখন গ্রেফতার করা হয়েছে বা তদন্তকারী সংস্থার জেরায় হাজির হতে বলা হয়েছে, তখন তাঁরা জেরা এড়াতে এই হাসপাতালে আশ্রয় নিয়েছেন। তাঁরা জেরা এড়িয়েও গিয়েছেন। য়খন তাঁরা দেখেছেন, আর জিজ্ঞাসাবাদের সম্ভাবনা নেই, তখন তাঁরা হাসপাতাল ছেড়ে গিয়েছেন। এই হাসপাতালের তরফে দেওয়া মেডিক্যাল রিপোর্টের জোরে তাঁরা আদালতে হাজিরাও এড়িয়ে গিয়েছেন।’
তবে একইসঙ্গে এটিও সত্যি যে, যখন রাজ্য সরকারের তরফে এসএসকেএম সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালকে প্রতিষ্ঠান বঙ্গবিভূষণ সম্মান বা পুরস্কার দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল, তখন আদালতের তরফে ওই হাসপাতাল সম্পর্কে এই পর্যবেক্ষণ বা মন্তব্য করা হয়নি।
প্রসঙ্গত, শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে রাজ্যের মন্ত্রী পার্থের ইডির হাতে গ্রেফতার হওয়া এবং পার্থ-ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের ফ্ল্যাট থেকে নগদ প্রায় ২২ কোটিরও বেশি টাকা উদ্ধার হওয়ার প্রেক্ষিতে সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বিশিষ্টদের কাছে বঙ্গবিভূষণ ও বঙ্গভূষণ সম্মান প্রত্যাখ্যান করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। সিপিএমের একাংশের দাবি, সেই আহ্বানে সাড়া দিয়েই অমর্ত্য সম্মান নিতে রাজি হননি। তবে ঘটনাক্রম বলছে, তার আগেই অমর্ত্য তাঁর সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছিলেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy