প্রতীকী ছবি।
ডেবিট কার্ড ‘ব্লক’ করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে বা প্রলোভন দেখিয়ে কথার ফাঁদ পেতে গ্রাহকদের কাছে কার্ডের পিন নম্বর জেনে অ্যাকাউন্ট থেকে নিমেষে টাকা গায়েব করে দেওয়ায় কুখ্যাত ‘জামতাড়া গ্যাং’। ‘লকডাউন’ পর্বে রাজস্থানের আলওয়ারের একটি দলও সাইবার-প্রতারণার কাজে জড়িত বলে জানতে পেরেছে পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশ।
সোমবার জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “জামতাড়া গ্যাংয়ের মতো অপারেশন চালায় না আলওয়ারি গ্যাং। তারা মূলত সোশ্যাল মিডিয়ায় যে সব মহিলা-বিক্রেতারা দ্রব্যের প্রচার চালান, তাঁদের টার্গেট করে। তারপরে মোটা অঙ্কের দ্রব্যের বরাত দেওয়ার নাম করে অনলাইন-ওয়ালেট থেকে টাকা গায়েব করে নেয়।’’ ‘লকডাউন’-এর সময়ে ওই দলের উৎপাত নজরে এসেছে পুলিশের। বর্ধমানের সাইবার-অপরাধ থানা তদন্তও শুরু করেছে। একই রকম ভাবে প্রতারণা করে অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা নেওয়ার নজির রয়েছে উত্তরপ্রদেশের একটি দলেরও। তবে পূর্ব বর্ধমানে তাদের কার্যকলাপের এখনও কোনও হদিস পায়নি পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে খবর, ‘লকডাউন’-এ অনেকের বাড়িতেই টাকার টানাটানি দেখা দিয়েছে। বাড়তি আয়ের খোঁজে ‘সোশ্যাল মিডিয়া’র নানা ‘গ্রুপে’ যোগ দিচ্ছেন মহিলারা। আবার পরিচিতদের মধ্যে নানা রকম জিনিস বিক্রির উদ্দেশ্যে নিজেরাই কোনও ‘পেজ’ খুলে সেই জিনিসের ছবি-ভিডিয়ো দিয়ে পরিচিতদের ‘ট্যাগ’ করছেন অনেকে। ওই প্রচার দেখে অনেকে ছোট ব্যবসায়ী বলে পরিচয় দিয়ে মহিলা-বিক্রেতার সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। তারপরে মোবাইল নম্বর নিয়ে হোয়াটসঅ্যাপে দ্রব্যের বরাত দিচ্ছেন। অগ্রিম বাবদ অনলাইন-ওয়ালেটে টাকা পাঠানোর জন্য ‘কিআউ আর কোড’ পাঠানো হচ্ছে। অভিযোগ, ওই কোড ‘স্ক্যান’ করা মাত্রই অ্যাকাউন্ট থেকে গায়েব হয়ে যাচ্ছে টাকা।
সোমবারই বর্ধমানের সাইবার থানায় অভিযোগ জানাতে গিয়েছিলেন রাজবাটী এলাকার এক বধূ। তাঁর বাপের বাড়ি গুজরাতের সুরাতে। তিনি জানান, ‘লকডাউন’-এর সময়ে সুরাতে তৈরি জামাকাপড় পরিচিতদের মধ্যে বিক্রি করার জন্য ‘ফেসবুক’, ‘হোয়াটসঅ্যাপে’ ভিডিয়ো ‘পোস্ট’ করেছিলেন তিনি। ওই মহিলার কথায়, “সেনাবাহিনীর জওয়ান পরিচয় দিয়ে আমার কাছ থেকে কাপড় কিনতে চান এক জন। বরাতও দেন। অগ্রিম বাবদ অর্ধেক টাকা দিতে চান। সে জন্য অনলাইন-ওয়ালেটে একটি কোড পাঠান। আমি তাঁকে বলি, এই কোড স্ক্যান করলে তো আমারই টাকা কেটে নেবে। উনি বলেন স্ক্যান করার পর রিসিভ বলে একটা অপশন আসবে। তাতে চাপ দিলেই আমি টাকা পেয়ে যাব। সেই মতো করতেই কয়েকহাজার টাকা আমার অ্যাকাউন্ট থেকে চলে যায়।’’ কয়েকদিন আগে বর্ধমান শহরের লোকো-কলোনিতেও এক জন দর্জিকে ‘মাস্ক’ তৈরি করার বরাত দিয়ে প্রতারকেরা ৭৫ হাজার টাকা গায়েব করে দেয় বলে অভিযোগ।
জেলা পুলিশ সূত্রে খবর, গত কয়েকমাসে এই ধরনের বেশ কিছু অভিযোগ জমা পড়েছে। যার তদন্তে নেমে রাজস্থানের আলওয়ারি গ্যাংয়ের হদিশ মিলেছে। পুলিশের দাবি, এখন অনেক মহিলা হাত খরচ তোলার জন্য বা ছেলেমেয়েদের বাড়তি জিনিস কিনে দেওয়ার জন্য পরিবারকে লুকিয়ে ব্যবসা করছেন। ফলে প্রতারিত হলেও অভিযোগ জানাতে চাইছেন না অনেকে। ‘লকডাউন’ পর্বে ওই গ্যাং শুধু বর্ধমান শহরেই লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে তদন্তকারীরা মনে করছেন। তা হলে উপায়? এক পুলিশ কর্তার পরামর্শ, “অপরিচিতদের সঙ্গে লেনদেন করলে সব সময়ে প্রতারণার সম্ভাবনা থেকে যায়। ভার্চুয়াল-জগতে পরস্পরের মুখও কেউ দেখছে না। সে ক্ষেত্রে তো ঝুঁকি বেশি থাকেই। সে কারণে পরিচিতদের মধ্যে ব্যবসা করলে বা অনলাইন ওয়ালেটে লেনদেন করলে ঝুঁকি কম থাকবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy