Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Teacher

St. Lawrence High School: শরীর চালু রেখেই ‘ফিট’ শতায়ু স্যর

শতায়ু ‘তরুণ’ স্কুলের প্রাক্তনীদের পুনর্মিলন উৎসবে যোগ দিয়ে দেখলেন, প্রাক্তন ছাত্রদের কাছে তিনি এখনও সেই পুলিন স্যরই আছেন।

পুলিন স্যরকে সংবর্ধনা সেন্ট লরেন্স স্কুলের প্রাক্তনীদের।

পুলিন স্যরকে সংবর্ধনা সেন্ট লরেন্স স্কুলের প্রাক্তনীদের। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০২১ ০৫:১৩
Share: Save:

বয়স যখন ছিল ষাট ছুঁইছুঁই, তখনও গোলপোস্ট থেকে এক শটে বল অন্য গোলপোস্টে পাঠিয়ে দিতেন তিনি। আগুনের বড় রিংয়ের ভিতর দিয়ে ফায়ার জাম্পেও ছিলেন সবার আগে। শারীরিক ভাবে যিনি এতটা ‘ফিট’, তরুণদের মধ্যে তাঁর জনপ্রিয়তা যে গগনচুম্বী হবে, তাতে আর সন্দেহ কী!

সেন্ট লরেন্স হাইস্কুলের শারীরশিক্ষার শিক্ষক পুলিনবিহারী মাখাল স্বভাবতই ছাত্রদের মধ্যে বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন। সেই পুলিন স্যর বয়সে সেঞ্চুরি করেছেন। এবং সেই শতায়ু ‘তরুণ’ স্কুলের প্রাক্তনীদের পুনর্মিলন উৎসবে যোগ দিয়ে দেখলেন, প্রাক্তন ছাত্রদের কাছে তিনি এখনও সেই পুলিন স্যরই আছেন। গঙ্গা-ভাগীরথী দিয়ে অনেক জল গড়িয়ে গেলেও তাঁর জনপ্রিয়তায় একটুও ভাটা পড়েনি। এবং যে-বিস্ময়কর ফিটনেসের জন্য তিনি এত জনপ্রিয়, পুনর্মিলন উৎসবে তার রহস্য ফাঁস করে পুলিনবাবু জানালেন, সুস্থ থাকতে হলে শরীর চালু রাখা চাই। পুলিন স্যারের ছোট মেয়ে বনলতা নায়েক বলেন," বাবা এখনো অসম্ভব ফিট। বাড়ির সামনে নর্দমা আবর্জনা জমে গেলে মাটি কেটে তা পরিষ্কার করে দেন। রাস্তায় আবর্জনা জমে থাকলে তা পরিষ্কার করে দেন।"

সেন্ট লরেন্স হাইস্কুলের ১৯৮২ সালের মাধ্যমিকের ব্যাচের ছাত্রদের উদ্যোগেই পুনর্মিলনের আয়োজন করা হয়েছিল। হাজির ছিলেন তার আগে মাধ্যমিক পাশ করা পড়ুয়ারাও। ১৯৭৫ সালের মাধ্যমিক ব্যাচের ছাত্র, বর্তমানে দুর্গাপুরের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এনআইটি) ডিরেক্টর তথা আইআইটি খড়্গপুরের অধ্যাপক অনুপম বসু বলেন, “এমনিতে স্কুলে ওঁকে দেখা যেত নীল শার্ট আর ধুতিতে। কিন্তু খেলার ক্লাসে মাঠে নামতেন গেঞ্জি ও শর্টস পরে। সার্কাসে যেমন আগুনের রিংয়ের ভিতর দিয়ে ঝাঁপ দেয়, সেই ঝাঁপ শিখিয়েছিলেন আমাদের। উনি আগে আগুনের রিংয়ে ঝাঁপ দিতেন, তার পরে আমরা। ফুটবলের মাঠে ওঁর কোচিং সারা জীবন মনে থাকবে। শিক্ষকদের সঙ্গে ছাত্রদের ম্যাচে উনি হতেন গোলকিপার। চূড়ান্ত ফিট সেই পুলিন স্যর এই শতবর্ষেও দেখলাম, একই রকম তরুণ রয়েছেন।”

শতবর্ষের পুলিন স্যর এখন কানে একটু কম শোনেন। এ দিনের অনুষ্ঠানে স্যরের লিখিত ভাষণ পড়ে শোনান তাঁর মেয়ে। ১৯৮২ সালের মাধ্যমিক, পার্থসারথি সরকার বলেন, “মগরাহাট থেকে আট কিলোমিটার দূরে একটি গ্রাম থেকে উনি আমাদের সেন্ট লরেন্স স্কুলে আসতেন। প্রথমে আট কিলোমিটার হেঁটে পৌঁছতেন মগরাহাট স্টেশনে। তার পরে ট্রেন ধরে বালিগঞ্জ স্টেশন। সেখান থেকে তিন কিলোমিটার হেঁটে স্কুলে।’’

পার্থসারথিবাবু জানান, পুলিনবাবু তাঁদের শিখিয়েছিলেন হিউম্যান পিরামিড খেলা। ওঁর হাতের লেখাও ছিল অসাধারণ। পড়ুয়াদের বলতেন, সার্কাসে বাঘকে আগুনের গোলার মধ্য দিয়ে ঝাঁপাতে দেখেই ফায়ার রিং জাম্প দিতে অনুপ্রাণিত হন তিনি। এ দিন ওঁর জন্য হুইলচেয়ারের ব্যবস্থা থাকলেও সেটা উনি ছুঁয়েও দেখেননি। একশো বছর বয়সেও তিনি এ দিন হেঁটে হেঁটেই স্কুল-চত্বরে ঘুরে বেড়িয়েছেন।
ওই স্কুলের আর এক প্রাক্তন ছাত্র অমিতাভ গুপ্ত জানান, কী ভাবে ফিট থাকা যায়, জানতে চাইলে পুলিন স্যর বলতেন, শরীরকে চালু রাখতে হবে। নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। খেতে হবে অল্প। এ দিনেও দেখা হতে তাঁকে সে-কথা বলেছেন পুলিন স্যর। অমিতাভবাবু বলেন, “আমাদের দেখে স্যর খুবই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলেন। আমরাও এত দিন পরে স্যরকে পেয়ে ভীষণ খুশি।”

অন্য বিষয়গুলি:

Teacher tribute
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy