রেজাল্ট হাতে পাওয়ার পর উচ্ছ্বসিত ছাত্রীরা। ফাইল চিত্র।
২০২৩-এর ১৪ মার্চ শুরু হয়েছিল উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা। তা চলেছে ২৭ মার্চ পর্যন্ত। প্রায় দু’মাসের মাথায় ফল প্রকাশিত হল। এ বছর মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৮ লক্ষ ৫২ হাজার, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ১ লক্ষ ১০ হাজার বেশি। তার মধ্যে পরীক্ষায় বসেছিলেন ৮ লক্ষ ২৪ হাজার ৮৯১ জন। পাশ করেছেন ৭ লক্ষ ৩৭ হাজার ৮০৭ জন। উচ্চ মাধ্যমিকের পাশের হার ৮৯.২৫ শতাংশ। ছাত্রদের পাশের হার ৯১.৮৬ শতাংশ। ছাত্রীদের পাশের হার ৮৭.২৬ শতাংশ। পাশের হারে রাজ্যের অন্যান্য জেলার মধ্যে উচ্চ মাধ্যমিকেও এগিয়ে পূর্ব মেদিনীপুর। এই জেলার পাশের হার ৯৫.৭৫ শতাংশ। মাধ্যমিকেও পাশের হারে সবার আগে ছিল এই জেলাই। পাশের হারে গোটা রাজ্যে দশম স্থানে রয়েছে কলকাতা। এই বছর মেধাতালিকায় রয়েছেন মোট ৮৭ জন। গত বছর এই সংখ্যা ছিল ২৭২। এই ৮৭ জনের মধ্যে শুধু হুগলি জেলা থেকে রয়েছেন ১৮ জন। নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের পড়ুয়াতেই ছয়লাপ এ বারের উচ্চ মাধ্যমিকের মেধাতালিকা। প্রথম দশে শুধুমাত্র ওই স্কুলের ৯ পড়ুয়া। চোখধাঁধানো ফল করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন সকলে। প্রথম স্থানের রয়েছেন নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের শুভ্রাংশু সর্দার। যুগ্ম ভাবে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন বাঁকুড়া বঙ্গ বিদ্যালয়ের সুষমা খাঁ এবং উত্তর দিনাজপুরের রামকৃষ্ণপুর প্রমোদ দাশগুপ্ত মেমোরিয়াল হাই স্কুলের আবু সামা। তৃতীয় স্থানাধিকারীর সংখ্যা ৪। চতুর্থ স্থানে রয়েছেন ৩ জন। পঞ্চম স্থানে ৫ জন, ষষ্ঠ স্থানে ১২ জন, সপ্তম স্থানে ১৩ জন, অষ্টম স্থানে ১১ জন, নবম স্থানে ১৮ জন এবং দশম স্থানে রয়েছেন ১৭ জন।
২০২৪ সালে পরীক্ষা শুরু হবে ১৬ ফেব্রুয়ারি। চলবে ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। পরের বছর থেকে পাল্টে যাচ্ছে পরীক্ষার সময়। ২০২৪-এর উচ্চ মাধ্যমিক শুরু হবে বেলা ১২টা থেকে। চলবে বিকেল ৩টে পর্যন্ত। পরীক্ষার্থীদের রেজাল্ট সংক্রান্ত বিষয়ে রিভিউ বা স্ক্রুটিনির জন্য আবেদন করার দিনক্ষণও জানানো হয়েছে পর্ষদের তরফে। ৩১ মে মধ্যরাত থেকে ১৫ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত করা যাবে রিভিউ বা স্ক্রুটিনির আবেদন। এই বছর সম্পূর্ণ অনলাইনের মাধ্যমেই আবেদন করতে পারবেন পরীক্ষার্থীরা। পাশাপাশি, এই বছর ডেবিট কার্ড/ ক্রেডিট কার্ড/ ইউপিআই-সহ অনলাইনে টাকা জমা দেওয়া যাবে, এমনটাই জানানো হয়েছে পর্ষদের তরফে। রিভিউ বা স্ক্রুটিনির ব্যাপারে পরীক্ষার্থীরা উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের নতুন পোর্টালের মাধ্যমে আবেদন করতে পারবেন। ৩১ মে মধ্যরাত থেকে রিভিউ বা স্ক্রুটিনির জন্য আবেদন করার লিঙ্ক দেখতে পারবেন পড়ুয়ারা।
উচ্চমাধ্যমিকের ফল প্রকাশের পর রাজ্য জুড়ে কোথায় কে কেমন ফল করলেন দেখে নেওয়া যাক এক নজরে—
দিনে ৪ ঘণ্টা পড়েই প্রথম পিক আপ ভ্যানচালকের পুত্র শুভ্রাংশু
উচ্চ মাধ্যমিকে প্রথম হয়েছেন নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের শুভ্রাংশু সর্দার। তাঁর প্রাপ্ত নম্বর ৪৯৬। ৯৯.২ শতাংশ নম্বর পাওয়া শুভ্রাংশু বিজ্ঞানের ছাত্র। বাংলা এবং ইংরেজি ছাড়া তাঁর বিষয় ছিল অর্থনীতি, অঙ্ক, রাশি বিজ্ঞান, এবং কম্পিউটার সায়েন্স। সারা দিনে মাত্র ৪ ঘণ্টা পড়েই উচ্চ মাধ্যমিকে প্রথম বজবজের বাসিন্দা শুভ্রাংশু। তাঁর বাবা তিন চাকার পিক আপ ভ্যানচালক। মা গৃহবধূ। শুভ্রাংশুকে শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। সোনারপুর দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক লাভলী মৈত্র শুভ্রাংশুর কাছে পৌঁছে দেন সেই শুভেচ্ছা বার্তা, মিষ্টি ও পুষ্পস্তবক।
প্রাইভেট টিউশন ছাড়াই উচ্চ মাধ্যমিকে দ্বিতীয় আবু সামা
উচ্চ মাধ্যমিকে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছেন উত্তর দিনাজপুরের চাকুলিয়ার বাসিন্দা আবু সামা। ৭ভাই-বোনের বড় পরিবার। পরের জমিতে গতরে খেটে চাষবাস করেন বাবা। দাদারাও সেই একই কাজ করেন। পরিবারের কেউই ষষ্ঠ শ্রেণির গণ্ডিও পেরোননি। বাংলা, ইংরেজি ছা়ড়াও, উচ্চ মাধ্যমিকে তিনি পড়াশোনা করেছেন ইতিহাস, ভূগোল, রাষ্ট্রবিজ্ঞান এবং দর্শন নিয়ে। ইতিহাসে ১০০-য় ১০০ পেয়েছেন আবু, ভূগোলে ৯৯, দর্শন এবং ইংরেজিতেই ১০০-য় ৯৯ পেয়েছেন আবু। রাষ্ট্রবিজ্ঞান এবং বাংলায় পেয়েছেন যথাক্রমে ৯৫ এবং ৯৮ নম্বর। আবুর প্রাপ্ত নম্বর ৫০০-এ ৪৯৫। শতাংশের হিসাবে ৯৯.২। কোনও বিষয়েই তাঁর কোনও গৃহশিক্ষক ছিল না। ভবিষ্যতে আইপিএস হতে চান আবু।
সিভিল সার্ভিসে যেতে চান দ্বিতীয় বাঁকুড়ার সুষমা
বাঁকুড়া শহরের চাঁদমারিডাঙার ছাত্রী সেই সুষমা খাঁ এ বার ৪৯৫ নম্বর পেয়ে উচ্চ মাধ্যমিকের মেধাতালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন। ভূগোল অত্যন্ত পছন্দের বিষয় বাঁকুড়া বঙ্গ বিদ্যালয়ের ছাত্রী সুষমার। তাঁর লক্ষ্য আগামী দিনে ভূগোল নিয়ে পড়াশোনা করে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া।
একই পরিবার থেকে মেধাতালিকায় দু’জন
আরামবাগ কাপসীট হাই স্কুলের কৌস্তভ কুন্ডু উচ্চ মাধ্যমিকে পেয়েছেন ৪৯২। মেধাতালিকায় তিনি রয়েছেন পঞ্চম স্থানে। সপ্তম হয়েছেন কৌস্তভের তুতো বোন কৌশিকী কুন্ডু। তাঁর প্রাপ্ত নম্বর ৪৯০। ভাই এবং বোন, দু’জনেই জানালেন তাঁরা ইঞ্জিনিয়ার হতে চান। ওই লক্ষ্যেই এগিয়ে যাচ্ছেন।
কন্টেন্ট রাইটার হতে চান গাইঘাটার প্রেরণা
গাইঘাটা ইছাপুর হাই স্কুলের ছাত্রী প্রেরণা পাল ৪৯৩ (৯৮.৬ শতাংশ) নম্বর পেয়ে চতুর্থ স্থানে নিজের জায়গা করে নিয়েছেন। আপাতত, স্নাতক স্তরে ইংরেজি নিয়ে পড়াশোনার কথাই ভেবে রেখেছেন তিনি। লেখালেখি নিয়ে আগ্রহ রয়েছে প্রেরণার। ভবিষ্যতে কন্টেন্ট রাইটার হওয়ার ইচ্ছেও প্রকাশ করেছেন প্রেরণা।
মা ও ছেলে একসঙ্গে করলেন উচ্চ মাধ্যমিক পাশ
নদিয়ার শান্তিপুর থানার নতুন সর্দারপাড়ার বাসিন্দা লতিকা মণ্ডল এবং সৌরভ মণ্ডল একসঙ্গে পরীক্ষা দিয়েছিলেন এ বছর। পরীক্ষায় কৃতকার্য দু’জনেই। সম্পর্কে তাঁরা মা-ছেলে। দু’জনের প্রাপ্ত নম্বরের ব্যবধান ৪০। লতিকা পেয়েছেন ৩২৪ এবং সৌরভ পেয়েছেন ২৮৪।
স্বপ্ন দেখছেন সাঁওতালি বিভাগে প্রথম হওয়া মৌসুমি, সরস্বতীরা
অভাবের সংসার! ২ জনেরই বাবা কাজ করেন চাষের। নুন আনতে পান্তা ফুরনোর সংসারে আলো ফোটাল মৌসুমি টুডু ও সরস্বতী বাস্কে। এ বছরের উচ্চ মাধ্যমিকে প্রথম ভাষা সাঁওতালি বিভাগে প্রথম হয়েছেন তাঁরা। ঝাড়গ্রাম জেলার রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যামন্দির পরিচালিত একলব্য মডেল রেসিডেনশিয়াল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক দিয়েছেন মৌসুমি টুডু ও সরস্বতী বাস্কে। তাঁদের প্রাপ্ত নম্বর ৪৭২। অর্থাৎ ৯৪.৪ শতাংশ। মৌসুমির ইচ্ছে আগামী দিনে ইংরেজি নিয়ে পড়ে পুলিশ হবেন। সরস্বতীর ভূগোল নিয়ে পড়াশোনা করে অধ্যাপনা করার ইচ্ছে।
মেধাতালিকায় সপ্তম রূপান্তরকামী স্মরণ্য
ঘর-বাইরে নানা বাধাবিপত্তি পেরিয়েই এ বার উচ্চমাধ্যমিকের মেধাতালিকায় একমাত্র রূপান্তরকামী পড়ুয়া স্মরণ্য ঘোষ। চণ্ডীতলার জনাই ট্রেনিং হাই স্কুলের পড়ুয়া স্মরণ্যর প্রাপ্ত নম্বর ৪৯০। প্রথম দশের ৮৭ জনের মধ্যে যুগ্ম ভাবে সপ্তম স্থান দখল করে নিয়েছেন হুগলির স্মরণ্য। ইতিহাসে পেয়েছেন ১০০-য় ১০০। ইতিহাস এবং সাহিত্যের অনুরাগী স্মরণ্য। স্বপ্ন দেখেন সরকারি আমলা বা অধ্যাপক হয়ে সমাজে রূপান্তরকামীদের উন্নয়নের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy