আবাস প্রকল্পে বন্ধ ‘আবাস বন্ধু’দের তদারকি। তাঁদের অভিযোগ, তিন বছর ধরে তাঁরা উৎসাহ ভাতা পাচ্ছেন না। প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ জানিয়েও সুরাহা হয়নি। ৮ এপ্রিল সল্টলেকে পঞ্চায়েত দফতরে স্মারকলিপি জমা দেয় আবাস বন্ধু সংগঠনের প্রতিনিধি দল। বিক্ষোভও দেখায় দলটি। রাজ্য জুড়ে প্রায় চার হাজারের কাছাকাছি ‘আবাস বন্ধু’ রয়েছেন। তাঁদের দাবি, ২০১৯-’২০, ২০-’২১, ২১-’২২ অর্থবর্ষে ভাতার টাকা মেলেনি। উৎসাহ ভাতার বকেয়া পরিমাণ কয়েক লক্ষ টাকা ছাড়িয়েছে। বাংলার বাড়ি প্রকল্পে তাঁদের নিযুক্ত করা ও ষাণ্মাসিক ভাতার দেওয়ার বিষয়েও তাঁরা দাবি জানান।
প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ‘আবাস বন্ধু’রা আবাস যোজনার ঘর তদারকি না করায় সমস্যায় পড়েছেন উপভোক্তারা। প্রকল্পের ঘর তৈরির কাজে নজরদারি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। উপভোক্তারা টাকা পেয়ে ঘরের কাজ শুরু করছেন কিনা বা কী ভাবে তা তৈরি করছেন, সে সবের উপরে নজরদারির লোকের অভাব রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার অনেক উপভোক্তা সমস্যায় পড়েছেন।
আবাস প্রকল্পের তদারকির জন্য ২০১৭ সালে পঞ্চায়েত দফতরের নির্দেশে আবাস বন্ধু নিযুক্ত করেছিল বিভিন্ন পঞ্চায়েত। ঘরের কাজ নির্দিষ্ট সময়ে, ঠিক মতো করা হচ্ছে কিনা, সে দিকে তাঁরা নজর রাখতেন। বিনিময়ে আবাস বন্ধুদের ঘরপ্রতি নজরদারির জন্য ৪০০ টাকা করে মজুরি দেওয়ার কথা। রাজ্য সরকারের আধিকারিকদের দাবি, কেন্দ্রীয় সরকার ওই প্রকল্পে বরাদ্দ বন্ধ করার পরে রাজ্যের তরফে ঘর তৈরির টাকা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তদারকির লোক না থাকায় ফাঁকির আশঙ্কা করছেন অনেকে। প্রকল্পের প্রথম কিস্তির ৬০ হাজার টাকা হাতে পেলেও তাই ঘর তৈরির তদারকির লোকের অভাবে উপভোক্তাদের অনেকে দোটানায় পড়ছেন। কতটা লম্বা, কতটা পাকা দেওয়াল বা ঘরের নকশা কেমন হবে— তা নিয়ে ধন্দ থাকছে। অনেকে নিজেদের মতো করে ঘর তৈরির পরিকল্পনা করছেন। কিন্তু তাতে ভবিষ্যতে সমস্যা হবে কিনা, সেই প্রশ্ন আছে অনেকের।
বর্তমানে প্রতিটি পঞ্চায়েতের কর্মীদের দিয়ে বিষয়টি তদারকি করা হচ্ছে। তাঁরাই বাড়ি তৈরি থেকে শেষ পর্যন্ত তদারকি করবেন। অন্য দিকে, পঞ্চায়েতগুলিতে কর্মী কম থাকায় সাগর ব্লক প্রশাসন নিজেদের উদ্যোগে আবাস বন্ধুদের কাজে লাগিয়েছে। আবাস বন্ধু সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক শেখ আবদুল্লা বলেন, ‘‘২০১৮ সালে আমাদের দিয়ে আবাসের সমীক্ষা করানো হয়। এখন আবাসের কাজ শুরু হয়েছে, কিন্তু আমাদের কাজে নেওয়া হচ্ছে না। তিন বছরের বকেয়া এখনও পাইনি। এক এক জনের ৪-৭ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বকেয়া রয়েছে।’’
দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক সুমিত গুপ্ত বলেন, ‘‘কেন ওঁরা তিন বছরের বকেয়া ভাতা পাননি, তা খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’ পঞ্চায়েত মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদারের সঙ্গে ফোন ও মেসেজে যোগাযোগের চেষ্টা হলেও তিনি উত্তর দেননি।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)