Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
Jawaharlal Nehru Memorial Hospital

‘অপ্রয়োজনীয়’ পরীক্ষা? জেএনএমে সরকারি টাকা গচ্চা

জেএনএম সূত্রের খবর, প্রতি মাসে ওই পিপিপি মডেলে চলা পরীক্ষাকেন্দ্রে গড়ে দেড় হাজার এমআরআই হয়। এক-একটি এমআরআইয়ের বিল ২৫০০ টাকা। টাকা মেটায় স্বাস্থ্য দফতর।

JNM Hospital.

জওহরলাল নেহরু মেডিক্যাল কলেজ (‌জেএনএম) হাসপাতাল। —ফাইল চিত্র।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়, অমিত মণ্ডল
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০২৩ ০৯:১৯
Share: Save:

রোগীর আদৌ এমআরআই বা সিটি স্ক্যানের প্রয়োজন নেই। অথচ অভিযোগ, সিনিয়র চিকিৎসকদের সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখে ‘রিকুইজিশন’ চলে আসছে হাসপাতালে ‘সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে’ (পিপিপি মডেল) চলা পরীক্ষাকেন্দ্রে।

কখনও সেই পরীক্ষা হচ্ছে, কখনও হচ্ছেও না। অভিযোগ, কিন্তু বিল তৈরি হয়ে চলে যাচ্ছে স্বাস্থ্য দফতরে। সেই ‘অপ্রয়োজনীয়’ পরীক্ষার লক্ষ লক্ষ টাকার বিল মেটাতে হচ্ছে অর্থসঙ্কটে ভোগা রাজ্য সরকারকে। এমনই দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে কল্যাণীর জওহরলাল নেহরু মেডিক্যাল কলেজ (‌জেএনএম) হাসপাতালে।

হাসপাতালেরই কিছু সিনিয়র চিকিৎসকের অভিযোগ, কিছু জুনিয়র ডাক্তার কমিশনের বদলে এই চক্র চালাচ্ছেন। ১৭ জুন মেডিসিন বিভাগের সিনিয়র চিকিৎসকদের (যাঁদের মধ্যে রয়েছেন ভিজ়িটিং কনসালটেন্ট এবং আরএমও-রা) তরফে জেএনএম কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ জানানো হয়। মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সোমককুমার দাস বলেন, “অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত কমিটি গঠন হয়েছে।” অধ্যক্ষ অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘অভিযোগ পেয়েছি। ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে।’’

জেএনএম সূত্রের খবর, প্রতি মাসে ওই পিপিপি মডেলে চলা পরীক্ষাকেন্দ্রে গড়ে দেড় হাজার এমআরআই হয়। এক-একটি এমআরআইয়ের বিল ২৫০০ টাকা। টাকা মেটায় স্বাস্থ্য দফতর। অর্থাৎ শুধু এমআরআইয়ের জন্য প্রতি মাসে ওই হাসপাতালে সরকারের খরচ ৩০-৩৫ লক্ষ টাকা। সিটি স্ক্যানে মাসে বিল হয় প্রায় ১৫-১৬ লক্ষ টাকা।

অভিযোগকারী চিকিৎসকদের একাংশের দাবি, এর অনেকটাই অপ্রয়োজনীয়। সব ক্ষেত্রে পরীক্ষা যে হচ্ছে, তা-ও হয়তো নয়। কিন্তু বিল মেটাতে হচ্ছে সরকারকে। যদিও ওই পিপিপি মডেলের চলা কেন্দ্রের ব্যাপারে চুক্তিবদ্ধ বেসরকারি সংস্থার কর্তা অভিরূপ বিশ্বাস বলেন, “সরকারি নিয়ম অনুযায়ী হাসপাতাল থেকে চিকিৎসকেরা স্ট্যাম্প, সই দিয়ে লিখে ‘রিকুইজিশন’ পাঠান। তবেই আমরা পরীক্ষ‌া করি। স্বাস্থ্য দফতর পুরো বিষয়টার নজরদারি করে।”

মেডিসিন বিভাগের একাধিক বরিষ্ঠ চিকিৎসকের অভিযোগ, ‘‘আমাদের সঙ্গে পরামর্শ না-করে অনেক জুনিয়র ডাক্তার কাগজে বিভিন্ন দামি পরীক্ষা লিখে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। নীচে এমন ভাবে সই করা হচ্ছে, যাতে কারও নাম বোঝা না যায়। কোনও বেড টিকিট পাঠানো হচ্ছে না। রাতের দিকে রোগীর প্রেসক্রিপশন বদলে এমন বিভিন্ন পরীক্ষা ও ওষুধ লেখা হয়ে যাচ্ছে যেটা আমরা বলিনি।’’

যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তেমনই এক জনের বক্তব্য, ‘‘মেডিসিন বিভাগে যা চলছে, তা বিভাগীয় প্রধান ও সুপার অনেক দিন ধরেই জানেন।’’ আর এক অভিযুক্তের কথায়, ‘‘আমার দু’মাসের হাউসস্টাফশিপ শেষ হয়েছে। এখন আমি কলেজের কেউ নই।’’ যদিও অভিযোগ, সপ্তাহে বেশির ভাগ দিন তিনি জেএনএমে আসেন, যেমন এই বৃহস্পতিবারও এসেছিলেন।

২০ জুন মেডিসিন বিভাগের প্রধান নোটিস জারি করে জানান, এ বার থেকে বরিষ্ঠ চিকিৎসকেরাই রোগীর বেড টিকিটে এমআরআই বা সিটি স্ক্যানের মতো পরীক্ষা লিখবেন। স্পষ্ট করে পুরো স্বাক্ষর ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর লিখতে হবে। জরুরি প্রয়োজনে কোনও জুনিয়র চিকিৎসককে এমআরআই, সিটি স্ক্যানের রিকুইজিশন দিতে হলে সিনিয়রদের জানিয়ে পুরো সই করে, নিজের স্থায়ী বা অস্থায়ী রেজিস্ট্রেশন নম্বর লিখে তবে পাঠাতে হবে।

অন্য বিষয়গুলি:

JNM Hospital Kalyani
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy