অভিযুক্ত এএসআইকে ধরে চলছে বেধড়ক মার। ছবি: ভিডিয়ো থেকে নেওয়া।
স্কুলের মধ্যে এক ছাত্রীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠল হাড়োয়া থানার এক আধিকারিকের বিরুদ্ধে। সেই অভিযোগকে কেন্দ্র করে শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় হাড়োয়া থানার মোহনপুর।
পুলিশের গাড়িতে আগুন ধরানোর পাশাপাশি রাস্তাঘাট যেমন অবরোধ করেছেন ক্ষিপ্ত জনতা, তেমনই পুলিশ পাল্টা লাঠি ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটিয়েছে বলেও অভিযোগ। ওই আধিকারিককে স্কুলের মধ্যে আটকে রেখে বেধড়ক মারধর করা হয়। বিশাল পুলিশ বাহিনী গিয়ে প্রায় আট ঘণ্টার চেষ্টায় মাঝরাতে তাঁকে উদ্ধার করে। জাহাঙ্গির হোসেন নামের ওই অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব ইনসপেক্টর (এএসআই) এই মুহূর্তে বসিরহাট হাসপাতালে ভর্তি।
স্থানীয় সূত্রে খবর, মোহনপুরের বাছড়া এম.সি.এইচ হাই স্কুলে রাজ্য সরকারের উদ্যোগে ছাত্র ও যুব উৎসবের আয়োজন করা হয়েছিল। বৃহস্পতিবার শুরু হওয়া ওই উৎসবের শেষ দিন ছিল শুক্রবার। অনুষ্ঠান উপলক্ষে ওই স্কুলেই ডিউটি পড়ে হাড়োয়া থানার এএসআই জাহাঙ্গিরের। শুক্রবার সকাল থেকেই তাঁর সঙ্গে ওই স্কুলের একাদশ শ্রেণির দুই ছাত্রীকে বেশ কয়েক বার কথা বলতে দেখা গিয়েছে বলে জানান প্রত্যক্ষ দর্শীরা। কারণ হিসাবে তাঁরা জানান, ওই দুই ছাত্রীর ইচ্ছে সিভিক ভলান্টিয়ার হওয়ার। সেই বিষয়ে পরামর্শ নিতে তারা কথা বলেছিল ওই এএসআইয়ের সঙ্গে। অভিযোগ, সন্ধ্যার দিকে অনুষ্ঠান শেষ হতেই জাহাঙ্গির ওই দুই ছাত্রীর এক জনকে স্কুলেরই দোতলার একটি ঘরে ডেকে নিয়ে যান। তার পর ঘরের দরজা বন্ধ করে ওই ছাত্রীর শ্লীলতাহানি করেন।
আরও পড়ুন: বিজেপির অভিনন্দন যাত্রা ঘিরে ধুন্ধুমার নন্দীগ্রামে, লাঠিচার্জ পুলিশের
প্রত্যদর্শীরা জানিয়েছেন, সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ হঠাৎ করেই উপরের ক্লাসরুম থেকে চিৎকার শুনতে পেয়ে স্কুল চত্বরে যাঁরা ছিলেন তাঁরা ছুটে যান। ঘরের দরজা খুলে উদ্ধার করা হয় ওই ছাত্রীকে। জাহাঙ্গিরকে পাকড়াও করা হয়। তার মধ্যেই অন্যান্য পড়ুয়া ও এলাকার বাসিন্দারা পৌঁছে যান স্কুলে। জাহাঙ্গিরকে ধরে শুরু হয় বেধড়ক মারধর। কোনও ক্রমে তাঁদের হাত ছাড়িয়ে ওই এএসআই প্রথমে স্কুলের অফিসঘরের একটি আলমারির পিছনে লুকিয়ে পড়েন। সেখান থেকেও তাঁকে টেনে বার করা হয়। মাটিতে ফেলে শুরু হয় বেধড়ক মার।
আরও পড়ুন: ‘এঁদের জন্যই ধর্ষণ বন্ধ হয়নি’, তোপ নির্ভয়ার মায়ের
খবর যায় হাড়োয়া থানায়। কিন্তু সেখানকার পুলিশ কর্মীরা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেননি। তাদের উদ্দেশে ছোড়া হয় ইট-পাটকেল। ঘিরে ফেলা হয় পুলিশকর্মীদের। এর পর রাতের দিকে মাটিয়া, বসিরহাট এবং মিনাখা থানা থেকে বিশাল পুলিশ বাহিনী যায়। পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল চলতে থাকে অবিরত। ভাঙচুর চালানো হয় পুলিশের গাড়িতে। আগুন লাগানোর অভিযোগও ওঠে। জ্বালিয়ে দেওয়া হয় একটি মোটরসাইকেলও। পরে রাতে বসিরহাটের এসডিপিও ঘটনাস্থলে যান। পৌঁছন বসিরহাট পুলিশ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার। গভীর রাতে ঘটনাস্থলে পৌঁছন বসিরহাট পুলিশ জেলার এসপি কঙ্করপ্রসাদ বারুই। তাঁর উদ্যোগে রাত প্রায় দুটো নাগাদ জাহাঙ্গিরকে উদ্ধার করা হয়। তার পর তাঁকে পাঠানো হয় বসিরহাট হাসপাতালে। এই ঘটনায় আহত হয়েছেন বেশ কয়েক জন পুলিশকর্মী।
শনিবার সকালে ফের উত্তেজনা ছড়ায় গ্রামে। জাহাঙ্গিরের কঠোর শাস্তির দাবিতে পোস্টার সেঁটে স্কুলের সামনের রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন গ্রামবাসীরা। জাহাঙ্গিরের বাইক ভাঙচুর করে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। নির্যাতিতা ছাত্রীর বাবা বলেন, ‘‘ওই পুলিশ অফিসার মেয়ের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করার পরে শিক্ষকেরা মিটমাট করে নিতে বলেছিলেন। এতে আরও উত্তেজনা ছড়ায়।’’ প্রধান শিক্ষকের মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় শনিবার তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।
যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছেন জাহাঙ্গির। তাঁর কথায়, ‘‘আমার কাছে চাকরির জন্য এসেছিল দু’টি মেয়ে। চাকরি দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয় বলায় মিথ্যে অপবাদে ফাঁসানো হল।’’
বসিরহাটের এসপি কঙ্করপ্রসাদ বারুই বলেন, ‘‘এলাকা আপাতত শান্ত। কোথাও কোনও সমস্যা নেই। ওই এএসআইয়ের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছে। দোষী প্রমাণিত হলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy