Advertisement
E-Paper

‘ক্ষমতাশালী’ ব্যবসায়ীদের চাপেই বৃদ্ধি পেয়েছে সবুজ বাজির সর্বোচ্চ শব্দমাত্রা, অভিযোগ

সম্প্রতি রাজ্য সরকারের তরফে শব্দযুক্ত সবুজ বাজির (সাউন্ড এমিটিং) সর্বোচ্চ মাত্রা ১২৫ ডেসিবেল করা হয়েছে, যা এত বছর পশ্চিমবঙ্গে ৯০ ডেসিবেল ছিল।

An image of Fire Crackers

—প্রতীকী চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০২৩ ০৫:০৫
Share
Save

বাজি ব্যবসায়ীদের একাংশ ‘ক্ষমতাশাল‌ী’। প্রশাসনের অন্দরমহলে তাঁদের অবাধ যাতায়াত, ঘনিষ্ঠতা। সেই ‘যোগসাজশ’কে হাতিয়ার করেই সবুজ শব্দবাজির সর্বোচ্চ মাত্রা বাড়াতে ‘চাপ’ সৃষ্টি করেছেন তাঁরা। যার কাছে নতি স্বীকার করেছে রাজ্য সরকার। সম্প্রতি রাজ্য সরকারের তরফে শব্দযুক্ত সবুজ বাজির (সাউন্ড এমিটিং) সর্বোচ্চ মাত্রা ১২৫ ডেসিবেল করা হয়েছে, যা এত বছর পশ্চিমবঙ্গে ৯০ ডেসিবেল ছিল। মাত্রা বৃদ্ধির কারণ ব্যাখ্যা করে এমনটাই দাবি করল পরিবেশকর্মীদের সংগঠন ‘সবুজ মঞ্চ’। বেআইনি ভাবে নিষিদ্ধ বাজির ব্যবসা কী ভাবে রাজ্যে চলছে, তা নিয়ে সিবিআই তদন্তের দাবিও করেছে ওই সংগঠন।

শুক্রবার প্রেস ক্লাবে এক সাংবাদিক বৈঠকে সংগঠনের সম্পাদক নব দত্ত জানান, পরিবেশ রক্ষার উল্টো পথে হেঁটে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ ব্যবসায়ীদের চাপে সবুজ শব্দবাজির সর্বোচ্চ মাত্রা ১২৫ ডেসিবেল করেছে। তাঁর কথায়, ‘‘সারা দেশে সবুজ শব্দবাজির সর্বোচ্চ মাত্রা ১২৫ ডেসিবেল হলেও পশ্চিমবঙ্গ ৯০ ডেসিবেলে ধরে রাখতে পেরেছিল। কিন্তু ব্যবসায়ীদের একাংশের চাপে সরকার নতি স্বীকার করল।’’ এ দিনের বৈঠকে সংগঠনের তরফে কলকাতা, দমদম ও সংলগ্ন এলাকা থেকে কেনা বেশ কিছু বাজিও সর্বসমক্ষে রাখা হয়। যেগুলি নিষিদ্ধ। সংগঠনের দাবি, সবুজ বাজির মোড়কে অধিকাংশ জায়গাতেই নিষিদ্ধ বাজি বিক্রি হচ্ছে।

যদিও প্রশাসন এই দাবি উড়িয়ে দিয়েছে। প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মানা হয়েছে। ব্যবসায়ীদের কাছে নতি স্বীকার, এ সব দাবির অর্থ নেই।’’ বৃহস্পতিবারই সবুজ শব্দবাজির সর্বোচ্চ মাত্রা বৃদ্ধির ব্যাখ্যা দিয়েছেন রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র। তিনি জানিয়েছেন, সবুজ শব্দবাজির সর্বোচ্চ মাত্রা সংক্রান্ত সুপ্রিম কোর্টের রায় পশ্চিমবঙ্গে বলবৎ করা বাধ্যতামূলক কি না, তা রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেলের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল। কল্যাণের বক্তব্য, ‘‘লিখিত ভাবে অ্যাডভোকেট জেনারেল পর্ষদকে জানিয়েছেন, সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশ মানতে হবে।’’

তবে পর্ষদের চেয়ারম্যান এই ব্যাখ্যা দিলেও শব্দবাজি কী করে অনিয়ন্ত্রিত ভাবে ফাটানো হয়, এ দিনই পর্ষদ-কর্তাদের সেই অভিজ্ঞতা শুনতে হল একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও স্কুলের পড়ুয়ার থেকে। শব্দবাজির সচেতনতার প্রসারে এ দিন পড়ুয়াদের সঙ্গে কর্মশালা করেছিল পর্ষদ।

সেখানে খড়দহের বাসিন্দা এক ছাত্রী জানান, গত বছর কালীপুজোয় তাঁর এলাকায় বেপরোয়া ভাবে বাজি ফাটানো হচ্ছিল। বারণ করা হলে বলা হয়েছিল, তাঁরা ফাটিয়েই যাবেন। ‘‘এ ক্ষেত্রে কী করণীয়?’’, প্রশ্ন সেই ছাত্রীর। যার উত্তরে পর্ষদের চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘সতীদাহ এক দিনে বন্ধ হয়নি। তা বন্ধ হতে অনেক সময় লেগেছিল। আসল সমস্যা হচ্ছে, চেতনার অভাব। তবে পুলিশ সতর্ক রয়েছে।’’

প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রের প্রশ্ন ছিল, অনেকেই নিষিদ্ধ বাজি ফাটান। সেটা কী ভাবে বন্ধ করা সম্ভব? পর্ষদের সদস্য-সচিব রাজেশ কুমারও চেয়ারম্যানের সুরেই বলেন, ‘‘শুধুই পুলিশ-প্রশাসনের শাসনে শব্দবাজির দাপট বন্ধ করা যাবে না। সচেতনতা দরকার।’’ যার প্রেক্ষিতে এক পরিবেশবিজ্ঞানী বলছেন, ‘‘কবে সবার শুভবুদ্ধির উদয় হবে, সেই আশায় বসে থাকি। তত দিন বরং শব্দবাজির দাপট বেড়ে চলুক!’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Firecrackers noise pollution Green Crackers

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy