অভিযোগ দায়ের হলেও তদন্ত করছে না পুলিশ। পশ্চিম মেদিনীপুরের নারায়ণগড়কাণ্ডে এ বার কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হলেন ‘নির্যাতিতা’। সোমবার বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন মামলাকারীর আইনজীবী। সব শোনার পরে মামলা দায়েরের অনুমতি দিয়েছেন বিচারপতি ঘোষ। চলতি সপ্তাহেই মামলাটির শুনানির সম্ভাবনা রয়েছে। বস্তুত, গত রবিবার অর্চনা মজুমদারের নেতৃত্বে জাতীয় মহিলা কমিশনের সদস্যেরা গিয়েছিলেন নির্যাতিতার কাছে। তাঁরা পুলিশি তদন্ত নিয়ে বেশ কিছু অভিযোগ করেন। তার পরের দিনই মামলার আর্জি নিয়ে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হলেন ‘নির্যাতিতা’।
গত ৯ মার্চ তৃণমূল কার্যালয়ে ডেকে এক মহিলাকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে নারায়ণগড় থানা এলাকায়। বিচার চেয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হন ‘নির্যাতিতা’র স্বামী। তিনি পুলিশকে জানান, একটি বিবাদ সংক্রান্ত অভিযোগপত্র নিয়ে তৃণমূল কার্যালয়ে গিয়েছিলেন তাঁর স্ত্রী। আচমকা কার্যালয়ের দরজা বন্ধ করে তাঁর স্ত্রীকে শারীরিক নির্যাতন করেন এক তৃণমূল নেতা। তাঁকে ‘সহায়তা’ করেছিলেন বয়স্ক এক তৃণমূল কর্মী। কিছু ক্ষণের মধ্যে তৃণমূলের ওই পার্টি অফিসে দলের আর এক কর্মী এবং তাঁর মা যান। ওই দু’জন তাঁর স্ত্রীকে উদ্ধার করেছেন। বর্তমানে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তাঁর স্ত্রী।
বিজেপি দাবি করেছে ওই মহিলা এক সময় বিজেপি করতেন। তাঁর স্বামীর ওষুধের দোকান রয়েছে। বিজেপি করার ‘অপরাধে’ গত কয়েক বছর ধরে তাঁদের নানা ভাবে হেনস্থা করেছেন শাসকদলের নেতারা। জোর করে তাঁদের দোকান বন্ধ করে দেওয়া হত। ওই গন্ডগোল থেকে নিস্তার পাওয়ার জন্য মহিলাকে প্রস্তাব দেওয়া হয়, তাঁকে বিজেপি ছাড়তে হবে। অভিযুক্ত তৃণমূল নেতাই মহিলাকে জানিয়েছিলেন, লিখিত ভাবে বিজেপি ছাড়ার কথা জানাতে হবে। সেই ‘দরখাস্ত’ নিয়ে তৃণমূল কার্যালয়ে গিয়ে ধর্ষিতা হন মহিলা। তাঁকে প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে। তবে মেডিক্যাল রিপোর্টে ধর্ষণের প্রমাণ মেলেনি। পরে পশ্চিম মেদিনীপুরের ওই মহিলাকে কল্যাণী এমসে ভর্তি করান তাঁর স্বামী। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, কিছু নমুনা সংগ্রহ করে ফরেন্সিক পরীক্ষায় পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট আসতে সময় লাগবে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনায় বিএনএসের একাধিক ধারায় মামলা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ৬৪ (ধর্ষণ), ১২৭ (২) (অন্যায় ভাবে আটকে রাখা) ইত্যাদি। তার পরেও অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা গেল না কেন? পুলিশ জানায়, অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা খুঁজে পেলে গ্রেফতার করা হবে অভিযুক্তকে। এই প্রেক্ষিতে গত রবিবার নির্যাতিতার বাড়িতে যান জাতীয় মহিলা কমিশনের প্রতিনিধিরা। কমিশনের সদস্য অর্চনা বলেন, ‘‘আইন বলছে, গ্রেফতার করতে হয়। পুলিশ করেনি। কারণ, অভিযুক্ত শাসকদলের নেতা। হাসপাতালে তো আর কোনও শারীরিক সমস্যা বা দুর্ঘটনার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়নি মহিলাকে, যে জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, তার চিকিৎসা হয়েছে!’’