শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে নতুন দাবি ইডি-র। প্রতীকী ছবি।
বাংলায় রাজনৈতিক পালাবদলের সূত্রে তৃণমূল কংগ্রেসের ক্ষমতায় অভিষেক ২০১১ সালে আর ঠিক তার পরের বছরেই কলেজ স্ট্রিটে শিক্ষক শিক্ষণ সংক্রান্ত একটি সংগঠনের সূত্রপাত। এবং সেই ২০১২ থেকেই শিক্ষায় বেআইনি নিয়োগ ও অবৈধ লেনদেনের সূচনা বলে ইডি বা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট সূত্রের দাবি। অর্থাৎ তৃণমূল ক্ষমতাসীন হওয়ার পরে ওই দুষ্টচক্র সক্রিয় হয়ে উঠতে এক বছরের বেশি সময় নেয়নি। তার থেকেও চমকে দেওয়ার মতো খবর, সেই ২০১২ থেকে ২০২২ পর্যন্ত প্রাথমিকে শিক্ষায় দুর্নীতির অঙ্ক সব মিলিয়ে ৫০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে মনে করছে ইডি।
শিক্ষা-দুর্নীতির বিভিন্ন পর্যায়ের কথা জানিয়ে ইডি-র তদন্তকারীদের দাবি, প্রাথমিক পর্যায়ে ২০১৮ থেকে ২০২২ পর্যন্ত বিভিন্ন বেসরকারি ডিএলএড কলেজের ছাড়পত্র, অনুমোদন, পুনর্নবীকরণ এবং অনলাইন ও অফলাইনে পড়ুয়া ভর্তির মাধ্যমে প্রায় ৩০ কোটি টাকার দুর্নীতি ইতিমধ্যেই সামনে এসেছে। তার পিছনে নাম উঠে এসেছে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অপসারিত সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ বেসরকারি কলেজ সংগঠনের নেতা তাপস মণ্ডলের। সর্বোপরি রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী ও পূর্বতন শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় তো আছেনই।
ইডি-র দাবি, এ বার ২০১২ থেকে ২০১৭-র মধ্যবর্তী সময়ের দুর্নীতির নথি ঘাঁটতে শুরু করেছে তারা। ওই সময়ে ছয় থেকে দশ লক্ষ টাকার বিনিময়ে প্রায় সাড়ে তিন হাজার বেআইনি নিয়োগ হয়ে থাকতে পারে বলে তদন্তকারীদের সন্দেহ। সেই সব মিলিয়ে ২০১২ থেকে ২০২২ পর্যন্ত অর্থাৎ কমবেশি ২১ বছরে প্রাথমিকে টাকার অঙ্কে দুর্নীতির পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকার বেশি হতে পারে বলে সন্দেহ করছেন তদন্তকারীরা।
কী ভাবে একটি সংগঠনের ছাতার নীচে লেনদেন চলত, তার ইঙ্গিত দিয়ে তদন্তকারীরা জানান, ২০১২ সালে কলকাতার কলেজ স্ট্রিট এলাকায় তাপসের ভাড়া নেওয়া একটি বাড়িতে মানিকের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বীরভূমের এক দাপুটে নেতাকে সামনে রেখে ‘বেঙ্গল টিচার্স ট্রেনিং অ্যাচিভার্স অ্যাসোসিয়েশন’ নামে বেসরকারি বিএড ও ডিএলএড কলেজ সংগঠন চালু করা হয়। ২০১৭ পর্যন্ত তার সভাপতি ছিলেন বীরভূমের ওই দাপুটে নেতা। তৃণমূল কংগ্রেসের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের ঘনিষ্ঠ বেশ কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্ণধার এবং বেসরকারি কলেজের মালিকেরা ওই সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন।
তদন্তকারীদের দাবি, ২০১২ থেকে ধাপে ধাপে শিক্ষা দফতরের তরফে বেসরকারি বিএড এবং ডিএলএড কলেজের অনুমোদন ও ছাড়পত্র দেওয়া শুরু করা হয়। বেঙ্গল টিচার্স ট্রেনিং অ্যাচিভার্স অ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমে ডিএলএড কলেজের অনুমোদনের ছাড়পত্র বাবদ ৫০ হাজার টাকা করে নেওয়া শুরু হয় বলেও প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে।
২০১৭-য় বীরভূমের ওই দাপুটে নেতা দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম ও শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন। তার পরেই সভাপতি হন তাপস। সংগঠনটির নামের আগে শুধু একটি ‘অল’ যোগ করে দেওয়া হয়। সংগঠনের ঠিকানা কলেজ স্ট্রিটের জায়গায় করে দেওয়া হয় সল্টলেকের মহিষবাথান।
তদন্তকারীদের দাবি, এর মধ্যে ২০১৪ এবং ২০১৭-য় মূলত তাপস ও বীরভূমের ওই দাপুটে নেতার মাধ্যমে টাকার বিনিময়ে প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছিল বলে তদন্তে জানা গিয়েছে। ইডি সূত্রের দাবি, তখনও ওই সব বেআইনি নিয়োগ চলত সাদা খাতা মারফত। তার পাশাপাশি ২০১৪ এবং ২০১৭-র প্রাথমিক টেটে উত্তীর্ণ এবং বেআইনি নিয়োগের জন্য প্রার্থী-পিছু মোটা টাকা নেওয়া হয়েছিল বলেও ইডি-র প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy