প্রতীকী ছবি।
নামমাত্র অর্থ বরাদ্দ হল বাংলার রেল প্রকল্পগুলিতে। যা দেখে বিরোধীরা বলছেন, ফের বঞ্চনার শিকার বাংলা।
গত শনিবার সংসদে বাজেট পেশ হলেও, আজ রেলের আয়-ব্যয়ের খতিয়ান সম্বলিত পিঙ্ক বুক পেশ হয়। প্রাপ্তির অঙ্ক যোগবিয়োগ করে তৃণমূল সাংসদেরা বলছেন, অধিকাংশ প্রকল্পেই বরাদ্দ কাঁটছাঁট হয়েছে। একাধিক প্রকল্পকে কেবলমাত্র ১ হাজার টাকা দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে। রেল মন্ত্রকের বক্তব্য, অর্থ মন্ত্রক আশানুরূপ বরাদ্দ বৃদ্ধি করেনি। তাই গত বছর প্রকল্পের অগ্রগতি ও টাকা খরচের ভিত্তিতে এ বারের বাজেটে অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে। রাজ্য বিজেপি নেতারা পাল্টা বলেছেন, রাজ্য জমি দিতে না-পারায় অধিকাংশ প্রকল্প আটকে রয়েছে। তাই বরাদ্দ কমে গিয়েছে। যদি টাকা লাগে তা হলে তদ্বির করা হবে।
চলতি বাজেটে আর্থিক বরাদ্দে ধাক্কা খেয়েছে রাজ্যের অধিকাংশ মেট্রো প্রকল্প। কিছু মেট্রো প্রকল্পের বরাদ্দ বাড়লেও, তা এতই সামান্য যে প্রকল্পগুলি কবে শেষ হবে তা নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন তৈরি হয়েছে। সব ঠিক থাকলে আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারি চালু হচ্ছে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর প্রথম পর্ব। পরবর্তী ধাপে দেশে প্রথম নদীর তলা দিয়ে ট্রেন চলবে এই প্রকল্পে। যা মোদী সরকারের অন্যতম সাফল্য বলে ইতিমধ্যেই প্রচারে নেমে পড়েছে পীযূষ গয়ালের মন্ত্রক। কিন্তু প্রকল্পের কাজ শেষ করতে ধার্য হয়েছে মাত্র ৯০৫ কোটি টাকা। যা গত বছরের চেয়ে মাত্র একশো কোটি টাকা বেশি।
সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ হয়েছে নোয়াপাড়া-বারাসত মেট্রো প্রকল্পে। যদিও তা গত বারের বরাদ্দের চেয়ে ১০৮ কোটি টাকা কম। রেল সূত্রের বক্তব্য, জমি জট সমস্যার সম্পূর্ণ সমাধান হয়নি। তাই বরাদ্দ কমে গিয়েছে। একই হাল দমদম-নিউ গড়িয়া ভায়া রাজারহাট প্রকল্পটি। এক ধাক্কায় বরাদ্দ কমেছে প্রায় ১২১ কোটি। মাত্র ৯ কোটি টাকা বরাদ্দ বেড়েছে বরানগর-ব্যারাকপুর ও দক্ষিণেশ্বর প্রকল্পে। টালা ব্রিজ ভেঙে ফেলার পরে নোয়াপাড়া থেকে দক্ষিণেশ্বর পর্যন্ত সামান্য দূরত্বের কাজ রেল দ্রুত শেষ করতে পারলে উপকৃত হতেন উত্তর-শহরতলির নিত্যযাত্রীরা। কিন্তু ওই সামান্য টাকায় কাজ যে কবে শেষ হবে, জানা নেই কারওরই। মাত্র তিন কোটি টাকা বেড়েছে মেট্রোর সার্বিক নিরাপত্তায়। শিয়ালদহ ও হাওড়া থেকে কম সময়ের ব্যবধানে লোকাল ট্রেন চালাতে চায় রেল। কিন্তু প্রয়োজন উপযুক্ত নিরাপত্তা-প্রযুক্তির। রেল মন্ত্রক জানিয়েছে, কম সময়ে বেশি সংখ্যক ট্রেন চালালে দু’টি ট্রেনের মধ্যে দূরত্ব কমবে। সে জন্য দুর্ঘটনার পরিস্থিতি তৈরি হওয়া ঠেকাতে প্রয়োজন ‘অ্যান্টি কলিশন’ প্রযুক্তির। সেই কারণে পূর্ব রেলের ১৫৬৩ কিলোমিটার লাইনে ‘ট্রেন কলিশন অ্যাভয়ডেন্স সিস্টেম’ (টিসিএএস) প্রযুক্তি ব্যবহারের সমীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কিন্তু মোট ৩১২ কোটি টাকার ওই প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে মাত্র এক লক্ষ টাকা। তাতে সমীক্ষার কাজই শুরু করা যাবে কি না সন্দেহ। মন্ত্রকের ভাঁড়ার এতই বাড়ন্ত যে গোটা পূর্ব ও দক্ষিণ পূর্ব রেলে নতুন প্রকল্পের ক্ষেত্রে বরাদ্দ হয়েছে যথাক্রমে মাত্র ২ কোটি ও ১ কোটি টাকা। রেল মন্ত্রকের বক্তব্য, অর্থ না-থাকায় নতুন প্রকল্পের পরিবর্তে জোর দেওয়া হয়েছে পুরনো প্রকল্প শেষ করার উপরে। কিন্তু বাজেট নথি বলছে, সাঁইথিয়া-তারাপীঠ (তৃতীয় লাইন), পলাশি-জিয়াগঞ্জ (তৃতীয় লাইন), প্রিন্সেপঘাট-মাঝেরহাট (ডাবলিং), হাবড়া-বনগাঁও (ডাবলিং)-এর মতো প্রকল্পগুলি মাত্র এক হাজার টাকা করে দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষিত অধিকাংশ রেল কারখানার প্রসঙ্গ রেলের বাজেটে স্থান না-পাওয়ায় সংসদে সরব হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তৃণমূল। লোকসভার সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার বলেন, ‘‘বাজেট থেকেই বোঝা যাচ্ছে চক্রান্ত করে মোদী সরকার বাংলার প্রকল্পগুলিকে শেষ করে দিতে চাইছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy