এক সিরিজ বা নম্বরের একাধিক ভোটার কার্ড, ভোটার তালিকায় ভুয়ো বা মৃত ভোটারের উপস্থিতি নিয়ে শাসক-বিরোধী উভয়েই চাপ বাড়াচ্ছে নির্বাচন কমিশনের উপরে। হরিয়ানা এবং মহারাষ্ট্র ভোটের ফলাফলের পরে আগামী বছর এ রাজ্যে বিধানসভা ভোটের আগে রাজনৈতিক উত্তাপ ছড়াচ্ছে আরও বেশি করে। এই অবস্থায় প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক করলেন মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের (সিইও) দফতরের কর্তারা। প্রত্যেক দলই কমিশনের উপরে চাপ বাড়ানোর কৌশল নিয়েছে নিজেদের মতো করে।
তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষে শুক্রবার সুব্রত বক্সী এবং অরূপ বিশ্বাস বৈঠকে গিয়েছিলেন। মহারাষ্ট্র এবং হরিয়ানায় ত্রুটিপূর্ণ ভোটার তালিকার প্রসঙ্গ তুলে এ রাজ্যে ত্রুটিমুক্ত ভেটার তালিকা তৈরির ব্যাপারে কমিশনের আধিকারিকদের আরও দায়িত্বশীল হওয়ার দাবি করেছেন তাঁরা। একই সঙ্গে জেলা নির্বাচনী আধিকারিকদের ভূমিকাও যাতে যথাযথ থাকে, সে ব্যাপারেও তাঁরা সরব ছিলেন বলে সূত্রের খবর।
বিজেপির তরফে পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায় ও প্রবাল রাহা বৈঠকে বিডিও-র এক্তিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁদের অভিযোগ, বিধি অনুযায়ী কারও নাম বিয়োজন করতে হলে ৭ নম্বর ফর্ম পূরণ করতে হয়। সেই ফর্মে সর্বোচ্চ ১০ জনের নাম জমা করা যায়। কিন্তু কৃষ্ণনগর-২ ব্লকের বিডিও এক তৃণমূল নেতার সাদা কাগজে করা অভিযোগের ভিত্তিতে ৯৮ জন ভোটারের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছেন। তাঁদের বক্তব্য, প্রথমত একসঙ্গে এত জনের নামে অভিযোগ জমা করা যায় না। ওই ৭ নম্বর ফর্ম পূরণ করে ১০ জন করে ভাগ করে অভিযোগ জমা করতে হয়। দ্বিতীয়ত, সাদা কাগজে জমা করা অভিযোগের ভিত্তিতে বিডিও তদন্ত করতে পারেন না। সেই সঙ্গে তাঁদের অভিযোগ, বাগদায় হিন্দু ভোটারদের বাংলাদেশের বাসিন্দা বলে ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ দিয়ে দেওয়ার চক্রান্ত হচ্ছে। বিজেপি কমিশনকে আরও জানিয়েছে, এর আগে প্রায় ১৭ লক্ষ ভুয়ো ভোটারের তথ্য তাঁরা জমা দিয়েছিলেন। সে ব্যাপারে কমিশনের ইতিবাচক পদক্ষেপ আশা করছেন তাঁরা। তালিকা থেকে মৃত ভোটারদের বাদ দেওয়ার দাবি তুলেছে সিপিএম এবং কংগ্রেসও। সিপিএমের তরফে শমীক লাহিড়ী কমিশনে জানিয়েছেন, মৃত ও ‘ভুয়ো’ ভোটারের নামের তালিকা তাঁদের দলের তরফ আগে একাধিক বার জমা দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ইতিমধ্যেই এ রাজ্যে একই নম্বরের ভোটার কার্ড থাকা (হরিয়ানার সঙ্গে) প্রায় ৬০০ জনকে চিহ্নিত করে তাঁদের ভোটার কার্ড বাতিল করেছে কমিশন। যোগ্যদের নতুন কার্ডও দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে সমান্তরালে। নতুন যে ‘মডিউল’ কমিশন জেলাশাসকদের পাঠিয়েছে, তাতে এমন ত্রুটি আরও দ্রুত ধরে সংশোধন করা যাবে। সেই প্রযুক্তিতে একেকটি নম্বর দেশের অন্য কোনও প্রান্তের ভোটার কার্ড নম্বরের সঙ্গে মিলছে কি না, তা বোঝা যাবে। যদিও বিশেষজ্ঞদের একাংশের দাবি, মোট ভোটার সংখ্যার নিরিখে এই সংখ্যটা নেহাতই কম।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)