Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
Akshay Kumar Datta

অবহেলায় পড়ে অক্ষয়কুমার দত্তের বাড়ি

বালির দেওয়ানগাজিতলা এলাকার ওই বাড়িটিকে ২০০৬ সালের মে মাসে ‘হেরিটেজ’ তকমা দেয় রাজ্য হেরিটেজ কমিশন।

ভগ্নপ্রায়: আগাছায় ভরেছে সেই বাড়ি। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

ভগ্নপ্রায়: আগাছায় ভরেছে সেই বাড়ি। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

শান্তনু ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৯:০০
Share: Save:

ভগ্নপ্রায় দোতলা বাড়ি। ইটের পাঁজর বেরোনো সেই বাড়ি ঘিরে গজিয়ে উঠেছে আগাছার জঙ্গল। দেওয়াল ফুঁড়ে বেরিয়ে এসেছে গাছের শিকড়, লোহার বিম।

এক ঝলক দেখে ‘হানাবাড়ি’ বলে মনে হলেও বালির জি টি রোড সংলগ্ন ওই বাড়িতেই জীবনের শেষ তিরিশটি বছর কাটিয়েছেন ঊনবিংশ শতকে বাংলার নবজাগরণের অন্যতম প্রবর্তক এবং বাংলায় বিজ্ঞান ভাবনার পথিকৃৎ অক্ষয়কুমার দত্ত। তা সত্ত্বেও দীর্ঘদিনের অবহেলা ও সংস্কারের অভাবে প্রায় ভেঙে পড়ার অবস্থায় ‘শোভনোদ্যান’ নামের সেই বাড়ি।

বালির দেওয়ানগাজিতলা এলাকার ওই বাড়িটিকে ২০০৬ সালের মে মাসে ‘হেরিটেজ’ তকমা দেয় রাজ্য হেরিটেজ কমিশন। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ওই সময়ে রাজ্য সরকারের তরফে বাড়ির সীমানা পাঁচিলের বাইরে একটি বোর্ড ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এখনও দেওয়ানগাজিতলার গঙ্গার ঘাটে যাওয়ার পথে চোখে পড়ে নীল রঙের সেই ভাঙাচোরা বোর্ড। এলাকাবাসীর অভিযোগ, বোর্ড লাগানোই সার। তার পরে আর কোনও দিন ওই বাড়ির সংস্কারে প্রশাসনকে উদ্যোগী হতে দেখা যায়নি। সম্প্রতি বালির কয়েক জন বাসিন্দা ফের ওই বাড়িটির সংস্কারের জন্য প্রশাসনের কাছে আবেদন-নিবেদন শুরু করেছেন।

রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের চেয়ারম্যান, শিল্পী শুভাপ্রসন্ন বলেন, ‘‘বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। আলোচনাও করেছি ওই বাড়ি নিয়ে। অক্ষয়কুমার দত্ত অত্যন্ত গুণী মানুষ ছিলেন। তিনি বাঙালির গর্ব। সেই হিসেবে চেষ্টা করছি যদি কিছু করা যায়।’’ পাশাপাশি তিনি এটাও জানান, বাড়িটির সংস্কারের বিষয়ে কমিশনের কাছে কেউ আবেদন করতেই পারেন। সে ক্ষেত্রেও কমিশন ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রশ্ন, যে বাড়ি ১৪ বছর আগেই ‘হেরিটেজ’ তকমা পেয়েছে, সেটির সংরক্ষণের জন্য ফের কেন আবেদন করতে হবে? তাঁদের আরও প্রশ্ন, ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা’য় এক যুগেরও বেশি সময় ধরে সম্পাদকের দায়িত্বে থাকা অক্ষয়বাবুর বাড়িটি কি রাজ্য প্রশাসন সংরক্ষণ করতে পারত না?

বিধায়ক বৈশালী ডালমিয়া বলছেন, ‘‘বাড়িটির সংরক্ষণ করে সেখানে সংগ্রহশালা তৈরির জন্য হাওড়া পুরসভাকে বলেছিলাম। কিন্তু পুর বোর্ডের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় আর কিছু হয়নি। এ নিয়ে প্রশাসনের উচ্চ স্তরেও কথা বলব।’’ ইতিহাস বলছে, নিজের লেখা পাঠ্যপুস্তক ‘চারুপাঠ’ থেকে অর্জিত অর্থেই বালিতে ‘শোভনোদ্যান’ নামের বাড়িটি তৈরি করেন অক্ষয়বাবু। ১৮৫৬ থেকে ১৮৮৬ সাল পর্যন্ত সেখানেই কেটেছে ‘ভারতবর্ষীয় উপাসক সম্প্রদায়’ গ্রন্থের লেখকের। বাড়ির পাশাপাশি অক্ষয়বাবু সেখানে হরেক প্রজাতির গাছের বাগান এবং জীবাশ্ম, প্রবাল ও বিভিন্ন ধরনের পাথরের একটি সংগ্রহশালা তৈরি করেন।

সম্প্রতি বালিতে ওই বাড়িটি দেখতে আসেন ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ’-এর ভিজিটিং প্রফেসর আশিস লাহিড়ী। তিনি অক্ষয়বাবুর উপরে গবেষণা করছেন। তাঁর কথায়, ‘‘স্বয়ং বিদ্যাসাগর বালির এই বাড়িতে এসেছিলেন। রসিকতা করে তিনি অক্ষয়বাবুকে বলতেন, এটা চারুপাঠের চতুর্থ সংস্করণ। সেই হেরিটেজ বাড়ির এমন বেহাল অবস্থা দেখে খুব কষ্ট লাগছে।’’ জানা যায়, ১৮৫৫ সালে বিদ্যাসাগর কলকাতায় ‘নর্মাল স্কুল’ স্থাপন করে অক্ষয়বাবুকে প্রধান শিক্ষক পদে নিযুক্ত করেছিলেন। কিন্তু শারীরিক অসুস্থতার কারণে ওই চাকরি ছেড়ে দেন ‘বাহ্য বস্তুর সহিত মানব প্রকৃতির সম্বন্ধ বিচার’, ‘ধর্মনীতি’, ‘ভূগোল’ ও ‘পদার্থবিদ্যা’র লেখক।

১৮৮৬ সালের মে মাসে ৬৫ বছর বয়সে বালিতেই মারা যান অক্ষয়বাবু। বালির শ্মশানে তাঁর দাহকার্য হলেও সাবেক বালি পুরসভার তখনকার কোনও রেকর্ড এখন আর পাওয়া যায় না। তবে অক্ষয়বাবুকে নিয়ে লেখা বিভিন্ন বই থেকে জানা যায়, বালি ও কলকাতায় আয়োজিত তাঁর স্মরণসভায় পরিকল্পনা করা হয়েছিল, আধুনিক বিজ্ঞানের ধারণাকে সহজ বাংলায় প্রকাশ করা ওই লেখকের একটি স্মৃতিফলক স্থাপন করা হবে। পরে অবশ্য কিছুই হয়নি।

জন্মের দ্বিশতবর্ষেও কি বিস্মৃত থাকবেন অক্ষয়কুমার দত্ত? প্রশ্ন সাধারণ মানুষের।

অন্য বিষয়গুলি:

Akshay Kumar Datta Heritage House BT Road West Bengal Heritage Commission
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy