বারাসত আদালতে মনুয়া ও অজিত। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র
ফোনে টানা যে কথোপকথন সন্দেহের তালিকা থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছিল, পরবর্তীতে সেটাই হল তাদের খুনি প্রমাণের সব থেকে বড় অস্ত্র।
২০১৭ সালের ২ মে রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ বারাসতের হৃদয়পুরে নিজের বাড়িতে খুন হন অনুপম সিংহ। পরদিন সকালে ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধারের পরে তদন্তে নেমে জানা যায়, খুনের সময়ে নিজের বাবার বাড়িতে ছিল অনুপমের স্ত্রী মনুয়া মজুমদার। খুনের কিছু আগে তার সঙ্গে কথাও হয় অনুপমের। খুনের সময়ে টানা অনেক ক্ষণ মনুয়া ফোনে অজিত রায়ের সঙ্গে কথোপকথনে ব্যস্ত ছিল। ফলে যারা ফোনে কথা বলছে, তারা সেই সময়ে খুন যে করতে পারে না এটাই প্রথমে ধারণা হয়েছিল পুলিশের।
পরে ওই কল ধরে তদন্ত শুরু হয়। দেখা যায়, মনুয়া যখন কথা বলছিল, তখন অজিতের মোবাইল টাওয়ারের অবস্থান ছিল অনুপমের ঘরে অর্থাৎ ঘটনাস্থলে। আর ঠিক সেই সময়ের মধ্যেই খুন হন অনুপম। বস্তুত, অনুপম যখন তালা খুলে ঘরে ঢুকছিলেন তখন থেকে মনুয়া ও অজিতের ফোনে কথা বলা শুরু হয়েছিল। খুনের আগে রাত ১০টা ৫ মিনিট থেকে টানা ২৫০০ সেকেন্ড (৪২ মিনিট) অজিতের সঙ্গে কথা বলে মনুয়া। ফোনের রিপোর্ট, টাওয়ারের অবস্থান, ফরেন্সিক পরীক্ষা, আঙুলের ছাপ এ সবের উপর ভিত্তি করে চারশোরও বেশি পাতার চার্জশিট দেয় উত্তর ২৪ পরগনা পুলিশ।
চার্জশিটে বলা হয়েছে, খুনের মুহূর্তে ঘটনাস্থলে না থাকলেও নেপথ্যে থেকে সব কিছু পরিচালনা করে গিয়েছে মনুয়া। বাপের বাড়িতে থাকলেও খুনের দিন দুপুরে মনুয়া অজিতকে নিয়ে অনুপমের বাড়ি যায়। অনুপম তখন অফিসে। সেখানে বসেই অজিতের সঙ্গে মনুয়া মদ্যপান করে। অনুপম ফেরার আগেই অজিতকে ঘরে রেখে বাইরে থেকে তালা দিয়ে বাপের বাড়ি চলে যায় মনুয়া। ফোন করে অনুপমকে বলে, অফিস থেকে সোজা বাড়িতেই ফিরতে। বাড়ি ঢোকার আগে পর্যন্ত অনুপমের সঙ্গে ফোনে কথা বলে মনুয়া। আবার খুনের সময়ে ফোন চালু রেখে অনুপমের আর্তনাদও মনুয়াকে শোনায় অজিত। খুনের পরে মনুয়ার বাড়ির বাইরে থেকে দেখাও করে যায় সে।
খুনে ব্যবহৃত লোহার রড, ঘটনাস্থল থেকে মেলা জামার টুকরো, সিগারেটের পোড়া অংশের মতো মোট ২৫টির বেশি নমুনা আদালতে পেশ করা হয়েছে। পুলিশ জানায়, খুনের দিন মনুয়া যে ঘটনাস্থলে গিয়েছিল, তা দেখে ফেলেন এক জন। খুনের পরদিন মনুয়া ফোন করে তার এক ভাইকে অনুপমের বাড়ি যেতেও বলে। তিনিই প্রথম অনুপমের দেহ দেখতে পান। এ রকমই ৩১ জন এই মামলায় সাক্ষী দেন।
এই মামলায় যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে ফরেন্সিক পরীক্ষারও। চার্জশিটে রক্ত, চুল, সিগারেটের টুকরো, অজিতের ছেঁড়া জামার অংশ, অস্ত্র ও গ্লাসে লেগে থাকা আঙুলের ছাপ ইত্যাদির সঙ্গে মনুয়া ও অজিতের ডিএনএ যে মিলে গিয়েছে, তা ফরেন্সিক প্রমাণ থেকেই জানা যাবে। অনুপমকে ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পনা করে খুন করে মনুয়া ও অজিত।
খুনের সময়ে এবং তার আগে-পরে দাগি অপরাধীর মতোই পুলিশকে বোকা বানিয়েছে তারা। সরকারি কৌঁসুলি শ্যামলকান্তি দত্ত জানাচ্ছেন, এই সব তথ্যপ্রমাণ ও সাক্ষ্যের উপর ভিত্তি করেই দু’জনকে সাজা দেওয়া সম্ভব হল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy