Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
আবার বিক্ষোভ ভাঙড়ে

মাছিভাঙায় ঢুকতে পারল না পুলিশ

পুলিশ-বিরোধিতায় এখনও এককাট্টা মাছিভাঙা! অবরোধ ওঠার পর এলাকায় স্কুল, দোকানপাট খুলেছে। যানবাহন চলছে। বিভিন্ন গ্রামের মূল রাস্তাগুলিতে পুলিশ ‘রুটমার্চ’ও করছে। কিন্তু ভাঙড়-আন্দোলনের অন্যতম কেন্দ্র মাছিভাঙা গ্রাম যেন এখনও স্বাভাবিক নয়! গ্রামবাসীরা এখনও পুলিশ বিরোধিতা থেকে পিছু হটেননি।

পুলিশকে ঢুকতে বাধা দিচ্ছেন গ্রামবাসীরা। ছবি: সামসুল হুদা।

পুলিশকে ঢুকতে বাধা দিচ্ছেন গ্রামবাসীরা। ছবি: সামসুল হুদা।

শুভাশিস ঘটক
ভাঙড় শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:০৮
Share: Save:

পুলিশ-বিরোধিতায় এখনও এককাট্টা মাছিভাঙা!

অবরোধ ওঠার পর এলাকায় স্কুল, দোকানপাট খুলেছে। যানবাহন চলছে। বিভিন্ন গ্রামের মূল রাস্তাগুলিতে পুলিশ ‘রুটমার্চ’ও করছে। কিন্তু ভাঙড়-আন্দোলনের অন্যতম কেন্দ্র মাছিভাঙা গ্রাম যেন এখনও স্বাভাবিক নয়! গ্রামবাসীরা এখনও পুলিশ বিরোধিতা থেকে পিছু হটেননি।

শনিবার সকালে রাজ্য সশস্ত্র পুলিশের নবম ব্যাটেলিয়নের কম্যান্ডান্ট কঙ্করপ্রসাদ বারুইয়ের নেতৃত্বে পুলিশ বাহিনী ‘রুটমার্চ’-এর জন্য গ্রামে ঢুকতে যেতেই রাস্তা আটকান গ্রামবাসীরা। শুরু হয় বিক্ষোভ। পুলিশ জোর করে গ্রামে ঢুকলে ফের রাস্তা কেটে দেওয়ার হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়। বিক্ষোভকারীদের নাছোড় মনোভাব দেখে শেষ পর্যন্ত ফিরে যায় পুলিশ।

শুক্রবার বিভিন্ন রাস্তা থেকে আন্দোলনকারীরা অবরোধ সরিয়ে নেওয়ার পরে পুলিশ ভাঙড়ে ঢোকে। মূল সড়কগুলিতে ‘রুটমার্চ’ ছাড়াও পুলিশ গ্রামের ভিতরেও যায়। তখন কোনও গোলমাল হয়নি। কিন্তু শনিবার অন্য কোথাও বাধা না-পেলেও মাছিভাঙায় কী এমন হল যে পুলিশকে আটকে দেওয়া হল?

বিক্ষোভকারীদের আশঙ্কা, ‘রুটমার্চ’-এর অজুহাতে পুলিশ গ্রামে ঢুকে আন্দোলনে জড়িতদের গ্রেফতার করতে পারে। তা ছাড়া, গত ১৭ জানুয়ারি গোলমালের দিন পুলিশের ‘ভূমিকা’র কথাও তাঁরা এ দিন তোলেন। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, পুলিশ সে দিনও শাসকদলের স্থানীয় নেতাদের নির্দেশমতো কাজ করেছিল। এ দিনও ওই নেতাদের নির্দেশেই গ্রামে ঢুকতে যায়। এখনও কেন তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলাম এবং রাজারহাট-নিউটাউনের বিধায়ক সব্যসাচী দত্তকে গ্রেফতার করা হল না, সেই প্রশ্নও তোলেন বিক্ষোভকারীরা। কয়েক জনের অভিযোগ, শুক্রবার রাতে আরাবুল বাহিনী আন্দোলন বন্ধ করার জন্য হুমকি দিয়ে গিয়েছে। কিন্তু তখন পুলিশের দেখা মেলেনি। কৃষিজমি ‘দখল’ করে চড়া দামে প্রোমোটারদের কাছে বিক্রি করা নিয়ে আরাবুলের বিরুদ্ধে গ্রামবাসীদের ক্ষোভ এ দিন ফের প্রকাশ্যে আসে।

জেলা পুলিশের এক কর্তা অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘কাউকে গ্রেফতার করতে নয়, গ্রামবাসীদের আস্থা অর্জনের লক্ষ্যেই পুলিশ গ্রামে ঢুকতে গিয়েছিল। গ্রামবাসীরা আপত্তি জানানোয় পুলিশ ফিরে আসে। আর হুমকির কোনও অভিযোগ পুলিশে দায়ের হয়নি।’’ আরাবুলও তাঁর বাহিনীর বিরুদ্ধে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ মানেননি। তাঁর দাবি, ‘‘আমি এলাকাতেই নেই। আমি কেন আমার ছেলেদের হুমকি দিতে বলব?’’ এই অবস্থায় ভাঙড় থেকে পুলিশকে সরে যাওয়ার কোনও অনুরোধ করা হবে কি না, তা জানতে চাইলে দক্ষিণ ২৪ পরগনার তৃণমূল জেলা সভাপতি শোভন চট্টোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া, ‘‘পুলিশ থাকবে না চলে যাবে, তা বলার মতো প্রশাসনের সেই জায়গায় তো আমি নেই। খোঁজ নিচ্ছি।’’

জেলা পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে, আপাতত প্রতিদিনই মাছিভাঙা, খামারআইট, বকডোবা, উড়িয়াপাড়া, টোনার মতো গ্রামগুলিতে ‘রুটমার্চ’ চলবে। গ্রামবাসীদের সঙ্গে ‘সম্পর্ক’ সহজ করা হবে। ভাঙড়-কাণ্ডের তদন্তে নেমে পুলিশ জানিয়েছিল নকশাল সংগঠন সিপিআই (এমএল) রেড স্টারের নেতা অলীক চক্রবর্তী মাছিভাঙা গ্রামেই লুকিয়ে রয়েছেন। আন্দোলনকারীদের কারও মোবাইল ফোন ব্যবহার করে বাইরের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছেন। কিন্তু এখন তদন্তকারীরা মনে করছেন, শুক্রবার অবরোধ তুলে নেওয়ার কথা ঘোষণা করার পরেই অলীক এলাকা ছাড়েন। ফের যাতে ভাঙড় কোনও ভাবে তেতে না ওঠে সে জন্য অলীককে দ্রুত গ্রেফতার করা প্রয়োজন বলে মনে করছে পুলিশের একাংশ। তাতে পাওয়ার গ্রিড সংলগ্ন গ্রামগুলির আন্দোলনকারীদেরও নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে বলে মনে করছেন তাঁরা। ওই নকশাল সংগঠনের নেত্রী শর্মিষ্ঠা চৌধুরী এবং নেতা প্রদীপ সিংহ ঠাকুর ইতিমধ্যে ধরা পড়েছেন। তদন্তকারীরা মনে করছেন, প্রদীপের সঙ্গে ভিন্ রাজ্যের আরও কিছু নকশাল সংগঠন এবং মাওবাদীদের যোগাযোগ রয়েছে। সকলে মিলে ভাঙড়ে আরও বড় অশান্তির পরিকল্পনা করেছিলেন।

অন্য বিষয়গুলি:

Machibhanga Protest Bhangar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy