(বাঁ দিকে) রায়াত হোসেন সরকার। সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
গত ৪ জুন লোকসভা নির্বাচনের সঙ্গেই ফল ঘোষণা হয়েছিল বরাহনগর এবং ভগবানগোলা উপনির্বাচনের। দীর্ঘ এক মাস কেটে গেলেও ওই দুই উপনির্বাচনে জয়ী তৃণমূল প্রার্থী সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায় ও রায়াত হোসেন সরকারের শপথ নেওয়া সম্ভব হয়নি। কারণ, শপথগ্রহণ প্রক্রিয়া নিয়ে রাজভবনের সঙ্গে মতপার্থক্য হয়েছে শাসকদলের। দীর্ঘ এক মাস কেটে যাওয়ার পর স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় শপথ-জটিলতা কাটাতে আইনি পরামর্শ শুরু করেছেন বলেই বিধানসভা সূত্রে খবর। বুধবার তিনি জানিয়েছিলেন, আগামী দু’দিনের মধ্যে এই সংক্রান্ত বিষয়ে রাজভবন কোনও ইতিবাচক সিদ্ধান্ত না নিলে এ বিষয়ে পদক্ষেপ করবেন তিনিই। বিধানসভা সূত্রে খবর, রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্তের সঙ্গে ইতিমধ্যে একপ্রস্ত আলোচনা সেরে ফেলেছেন বিমান। চলতি সপ্তাহের মধ্যে যদি জয়ী প্রার্থীদের শপথগ্রহণ না হয়, তা হলে আগামী সপ্তাহে রাজভবনের বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ হতে পারে বিধানসভা সচিবালয়। এমনটাই ইঙ্গিত মিলেছে।
এরই মধ্যে নাম না করে রাজ্যপালকে হুঁশিয়ারি দিলেন রাজ্যসভায় তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদ কুণাল ঘোষ। বৃহস্পতিবার এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে লেখেন, ‘‘হোটেল তাজ প্যালেস, নয়াদিল্লির অকথিত কাহিনির নায়ক ভুলে যাচ্ছেন, আইনত চলতি শপথ বিতর্কে তাঁর ভূমিকা নেই। তিনি ছাড়াও সব হতে পারে। সৌজন্যকে দুর্বলতা ভাবা ভুল। যাদের বুদ্ধিতে চলছেন, তারা আপনাকে আরও ডোবাবে বিধানসভার অধ্যক্ষের সাংবাদিক বৈঠকে নজর রাখুন।’’
গত বুধবার ২৬ জুন রাজভবনে বিধায়কদের শপথগ্রহণ করাতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। কিন্তু পাল্টা চিঠি দিয়ে তৃণমূল বিধায়কেরা জানিয়ে দেন, তাঁরা বিধানসভায় শপথগ্রহণে আগ্রহী, তাই রাজ্যপাল বিধানসভায় এসে তাঁদের শপথগ্রহণ করিয়ে যান। স্পিকারের তরফ থেকে একই দাবিতে চিঠি দেওয়া হয়েছিল রাজ্যপালকে। ওই দিন বিধায়কেরা রাজভবনে না যাওয়ার কিছু ক্ষণ পরেই দিল্লি রওনা হয়ে যান রাজ্যপাল। মঙ্গলবার দিল্লি থেকে কিছু সময়ের জন্য শিলিগুড়ি এলেও কলকাতায় আসেননি। বর্তমানে দিল্লিতেই রয়েছেন তিনি। এমতাবস্থায় শপথগ্রহণ কবে সম্ভব হবে, তা নিয়ে জট খোলার আশা দেখছেন না বিধানসভার আধিকারিকেরা। বরাহনগরের জয়ী তৃণমূল প্রার্থী সায়ন্তিকা বলেছেন, ‘‘স্পিকারের তরফে রাষ্ট্রপতির কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এর পরও রাজভবনের উত্তর না মেলায় আইনি পদক্ষেপই আমাদের ভরসা।’’
বৃহস্পতিবার জয়ের মাসপূর্তির দিনেও বিধানসভায় অম্বেডকর মূর্তির নীচে ধর্নায় বসছেন সায়ন্তিকা এবং রায়াত। গত সপ্তাহ থেকেই ধর্না চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। শপথ-জট কাটাতে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে চিঠি লিখেছিলেন স্পিকার। এমনকি, কথা বলেছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন রাজ্যপাল তথা বর্তমান উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গেও। তাতেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। সম্প্রতি আবার নবান্নের একটি সরকারি বৈঠক থেকে রাজ্যপালকে আক্রমণ করেছিলেন মমতা। তিনি বলেছিলেন, ‘‘জেতার পরেও এক মাস ধরে আমার বিধায়কেরা বসে আছেন! রাজ্যপাল শপথ নিতে দিচ্ছেন না। মানুষ ওঁদের নির্বাচিত করেছে। ওঁর কী অধিকার তাঁদের শপথ না নিতে দেওয়ার? উনি হয় স্পিকারকে এই অধিকার (শপথগ্রহণ করানোর) দিন, নয়তো ডেপুটি স্পিকারকে দিন। আর তা না হলে নিজে বিধানসভায় যান। ওঁর রাজভবনে কেন সকলে যাবেন? রাজভবনে যা কীর্তি-কেলেঙ্কারি চলছে, তাতে মেয়েরা যেতে ভয় পাচ্ছেন বলে আমার কাছে অভিযোগ করেছেন।’’ মুখ্যমন্ত্রীর এমন মন্তব্যের জেরে কলকাতা হাইকোর্টে মানহানির মামলা করেছেন রাজ্যপাল বোস। সেই মামলায় তিনি আবার যুক্ত করেছেন সদ্যজয়ী দুই বিধায়ক সায়ন্তিকা এবং রায়াতকেও। তাই শপথ-জটিলতার সমাধান খুঁজতে আদালতের দ্বারস্থ হতেই পারেন স্পিকার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy