ঘটনা ১: পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরে টোটোয় বসেই শুরু হল বইখাতা ছিঁড়ে ফেলা। সে সব উড়িয়ে দেওয়া হল পথে। বৃহস্পতিবার মাধ্যমিকের ভৌতবিজ্ঞান পরীক্ষা শেষে, কোচবিহারের দিনহাটার রংপুর রোড জুড়ে ছড়িয়ে রইল বইয়ের পাতার টুকরো।
ঘটনা ২: মুর্শিদাবাদের সুতিতে মোটরবাইক নিয়ে যাচ্ছিলেন এক প্রৌঢ়। বৃহস্পতিবার রাস্তার ধারে তখন উৎসবে মেতেছে এক দল মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। আচমকা কিছু বইখাতার টুকরো উড়ে এল ওই প্রৌঢ়ের মুখের সামনে। মোটরবাইক কোনও মতে সামলালেন তিনি।
ঘটনা ৩: বৃহস্পতিবার পরীক্ষা শেষে হুগলির চন্দননগর জ্যোতির মোড়ের কাছে দাঁড়িয়ে এক দল পরীক্ষার্থী হঠাৎ পরস্পরের স্কুলের পোশাক ছিঁড়তে শুরু করে। ছেঁড়া জামার টুকরো ছড়িয়ে দেয় রাস্তায়। শুরু হয় নিজস্বী তোলা। পুলিশ ধমক দিলে বাড়ির পথ ধরে তারা।
শুধু এই তিনটি ঘটনা নয়, পূর্ব বর্ধমানের ভাতার বা নদিয়ার তেহট্টের রাস্তা, পূর্ব মেদিনীপুরের এগরা, পটাশপুর, ভগবানপুরের একাধিক স্কুলের সামনে, আলিপুরদুয়ারের রাস্তায় এমন ছেঁড়া বই-খাতার টুকরো পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছে। বাসিন্দাদের একাংশ জানান, বৃহস্পতিবার মাধ্যমিকের আবশ্যিক বিষয়ের পরীক্ষা শেষের পরে, এ ভাবেই অনেক ছাত্রছাত্রী উল্লাস করেছে। যা দেখে, পরীক্ষা শেষ হওয়া উদ্যাপনে এ পন্থা কেন, সেই প্রশ্ন তুলছেন অনেকে।
মুর্শিদাবাদের কাশিমনগর হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক জুলফিকার আলি বলেন, ‘‘পরীক্ষা ভাল হলে ওরা ডিজে-বক্স বাজায়। খারাপ হলে স্কুলের ফ্যান ভাঙে। শিক্ষক হিসাবে লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে। মনে হচ্ছে, এ আমাদের ব্যর্থতা। পরিবারের লোকেদেরও নজরদারি নেই!’’ পূর্ব বর্ধমানের রাষ্ট্রপতি পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুভাষচন্দ্র দত্ত মনে করছেন, এখন পড়ুয়াদের অনেকে মোবাইলে বেশি আসক্ত। বই নিয়ে আবেগের জায়গা নষ্ট হয়ে গিয়েছে তাদের কাছে। মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক শম্ভু মান্নার মতে, ‘‘অনেক উঁচু ক্লাস পর্যন্ত পরীক্ষায় পাশ-ফেল না থাকায়, পড়াশোনার গুরুত্ব হয়তো নেই অনেকের কাছে।’’ বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অমিতাভ দাঁ-ও বলেন, ‘‘ছাত্রছাত্রীদের একাংশের বইখাতার সঙ্গে ভালবাসার যোগ এখন নেই। সমাজমাধ্যমেরও কিছু খারাপ প্রভাব পড়ছে।’’
ঘটনা জেনে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি রামানুজ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বই ছেঁড়া খুবই দুর্ভাগ্যজনক। কোনও ভাবেই কাম্য নয়।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)