সৌরদীপ সামন্ত।
প্রচণ্ড অর্থাভাবের দরুন কোচিং সেন্টারে পড়ার সুযোগ হয়নি। নোটস সংগ্রহ করতেন ইউটিউবের ফ্রি ক্লাস থেকে। ঘূর্ণিঝড় আমপানের দাপটে কয়েক দিন নেট সংযোগ বন্ধ থাকায় ইউটিউবের পড়াও ব্যাহত হয়েছিল। কোনও ঝড়ই অবশ্য তাঁকে রুখতে পারনি। অষ্টম শ্রেণি পাশ শ্রমিক-বাবা এবং মাধ্যমিক পাশ মায়ের একমাত্র সন্তান সৌরদীপ সামন্ত নিট বা সর্বভারতীয় মেডিক্যাল প্রবেশিকা) পরীক্ষায় দেশের ১৫ লক্ষ পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৮৭৩৫ র্যাঙ্ক করেছেন। মোট ৭২০ নম্বরের মধ্যে পেয়েছেন ৬৩০। ডাক্তারি পড়ে ক্যানসার নিয়ে গবেষণা করতে চান বারুইপুরের সৌরদীপ।
প্রতিবন্ধকতার পাহাড় ঠেলে এত ভাল ফলের পুরো কৃতিত্ব মা রীতাদেবীকে দিচ্ছেন এই তরুণ। “মা আমার পড়াশোনায় তীক্ষ্ণ নজর রাখতেন। মাধ্যমিক পর্যন্ত আমাকে সাইকেলে তিন কিলোমিটার দূরের স্কুলে পৌঁছে দিতেন, আবার নিয়ে আসতেন। রাত জেগে যখন নিটের পড়া পড়ছি, পাশে ঠায় বসে থাকতেন মা। দিনে ১২ ঘণ্টা পড়লে মা পাশে থাকতেন ১০ ঘণ্টা,” বললেন বারুইপুর হাইস্কুলের ছাত্র সৌরদীপ। তিনি জানান, তাঁর বাবা স্বপনকুমার সামন্ত কলকাতায় একটি সার্জিক্যাল সরঞ্জামের কারখানায় শ্রমিকের কাজ করে পান সাত হাজার টাকা। ওভারটাইম করলে বাড়তি কিছু মেলে। সৌরদীপ বললেন, ‘‘করোনা পর্বে বাবার বেতন কমে গিয়েছে। বেতন হয় ঘণ্টা অনুযায়ী। তাই বাবা এখন কলকাতায় থাকেন। সপ্তাহে এক দিন বাড়ি আসেন।”
বন্ধুরা যে-দিন নিট দিতে যান, করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় সে-দিন গৃহবন্দি ছিলেন দুর্গাপুরের দুবচুরিয়া গ্রামের দেবকুমার চক্রবর্তী। খুব ভাল প্রস্তুতি সত্ত্বেও করোনার জন্য পরীক্ষা দিতে পারেননি। দেবকুমার হতাশ হয়ে পড়েছিলেন, আর কি কোনও দিন নিট দেওয়া হবে? করোনার জন্য হয়তো কেরিয়ারটাই শেষ হয়ে গেল। এ বার নির্ধারিত দিনে যাঁরা নিট দিতে পারেননি, ১৪ অক্টোবর তাঁদের ফের প্রবেশিকার ব্যবস্থা থাকায় শেষ পর্যন্ত অবশ্য তাতে বসেন তিনি। দেবকুমার জানান, ৫৮৭ নম্বর পেয়ে তাঁর র্যাঙ্ক ২৬২১৪। “করোনা-মুক্তির পরেও ওর অসম্ভব দুর্বলতা ছিল। শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি ভাল হয়নি। পরীক্ষা দিতে পারবে কি না, সেই অনিশ্চয়তাও ছিল,” বললেন দেবকুমারের বাবা রাইকিশোর চক্রবর্তী।
সাউথ পয়েন্ট স্কুলের সায়ক বিশ্বাস নিটে ৭০৫ পেয়ে ৪৪ র্যাঙ্ক করেছেন। গড়িয়ার বাসিন্দা সায়ক বললেন, “করোনা-আতঙ্কে মাস্ক পরে পরীক্ষা দেওয়া, পরীক্ষা চলাকালীন বার বার হাত স্যানিটাইজ় করা— সব মিলিয়ে এ বারের পরীক্ষার পরিবেশ ছিল একেবারে অন্য রকম।” যাঁরা নিটে ভাল ফল করতে চান, তাঁদের প্রতি সায়কের পরামর্শ, র্যাঙ্কের কথা না-ভেবে প্রতিটি বিষয় আগাগোড়া পড়ে তৈরি হওয়াই একমাত্র পথ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy