ফাইল চিত্র।
মা যে কলকাতার হাসপাতালে রয়েছেন, তা মাস চারেক আগে জানতে পেরেছিলেন উত্তরপ্রদেশের গ্রামের অষ্টাদশী শালিনী পান্ডে। ফোনে কথাও হয় দু’জনের। তখনই মা সুমনকে কাছে পেতে ট্রেনে কলকাতা আসতে মরিয়া হয়ে ওঠেন তিনি। এর চার মাস বাদে দেওয়ালির ঠিক আগে কলকাতার পাভলভ মানসিক স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান থেকে সুলতানপুরে বন্ধুয়া কলান থানা এলাকার গাঁয়ে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার দিদিদের সঙ্গে বাড়ি ফিরে এসেছেন মা।
একই সময়ে কলকাতার পাভলভ থেকে ইলাহাবাদে (প্রয়াগরাজ) বাড়ি ফিরে গিয়েছেন প্রবাসী বাঙালি পরিবারের মেয়ে অপরাজিতা রায়চৌধুরীও। বিবাহবিচ্ছিন্না একলা মায়ের কাছে বড় হয়েছেন অপরাজিতা। সেই মা মারা গিয়েছেন কয়েক বছর আগে। মাসি মুকুল মুখোপাধ্যায়, মেসো, মাসতুতো ভাইয়ের কাছে এ যাত্রায় তাঁকেও ফেরানো হয়েছে।
রবিবার সন্ধ্যায় মুকুল ফোনে বলছিলেন, “দু’বছর আগে বোনঝি বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার পরে খুবই উৎকণ্ঠায় ছিলাম। এখন ফিরে পেয়ে মনে হচ্ছে, ওর ছোটবেলার দিনগুলি ফিরে এসেছে!” আর সুলতানপুরের গ্রাম থেকে উচ্ছ্বসিত সুমন বলছেন, “দেওয়ালিতে বড় মেয়ে বাড়িতে রসগোল্লা করে খাইয়েছে।” সুমনের দুই মেয়ে শালিনী ও মানসী। শালিনীর কথায়, “আমি বিএ পড়ছি! কিন্তু মাকে ফিরিয়ে আনতেই দোকানে কাজ করছি! বাবা পথদুর্ঘটনায় কাবু হওয়ার পরে মা-ই আমার সব! শালিনীর মাকে নিয়ে তাঁর বাড়িতে পৌঁছতে গিয়েছিলেন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার দুই কর্মী শুক্লা দাস বড়ুয়া এবং অনিন্দিতা চক্রবর্তী। তাঁরা বলছেন, “শালিনী একাই গ্রামের কোনও একজনের সাহায্যে ট্রেনে কলকাতায় আসতে চাইছিলেন, কিন্তু অল্প বয়সী গ্রামের মেয়ে অন্য বিপদে পড়তে পারেন ভেবে আমরাই ওঁর মাকে ফেরানোর বন্দোবস্ত করি।”
মানসিক স্বাস্হ্য প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসাধীন কেউ সেরে উঠলে, ২০১৭-র মানসিক স্বাস্থ্য আইন অনুযায়ী তাঁদের নিজের দায়িত্বে হাসপাতাল থেকে স্বেচ্ছামুক্তির সায় মিলেছে। এর ফলে, আর কাউকেই হাসপাতাল থেকে বেরোতে কোনও পারিবারিক অভিভাবকের ‘করুণা’র অপেক্ষা করতে হবে না! সুস্থ হয়েও মানসিক হাসপাতালগুলোয় পড়ে থাকা রোগীর চাপও কমবে বলে সংশ্লিষ্ট মহলের অভিমত। কিন্তু বাস্তবে এই আইন কার্যকর করায় নানা বাধা রয়েছে। পাভলভের মেডিক্যাল সুপার গণেশ প্রসাদের কথায়, “এখন যা পরিস্থিতি, তাতে মানসিক রোগের শিকার ব্যক্তিদের নিরাপত্তার কথা ভেবে কিছু ক্ষেত্রে হাসপাতালগুলিতে কাজ করা সক্রিয় কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার উপরে আমরা নির্ভর করি। সেই সঙ্গে স্থানীয় নাগরিক সমাজের মধ্যে মানসিক রোগের শিকার ব্যক্তিদের প্রতি ছুতমার্গ কাটলে কাজটা সোজা হয়।”
আবার মানসিক রোগীদের অধিকার রক্ষাকর্মী রত্নাবলী রায়ের মতে, “নতুন আইনে মানসিক রোগের শিকার ব্যক্তিদের পুনর্বাসনের জট কমার কথা। কিন্তু এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে তাঁদের ফেরাতে গেলে দু’টি রাজ্যের মেন্টাল হেলথ অথরিটির সমন্বয় দরকার। এ রাজ্যে এখনও ওই ধরনের কিছু গড়ে ওঠেনি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy