Advertisement
২১ ডিসেম্বর ২০২৪
Ananta Maharaj & BJP

কোচবিহার-হারের পরেই অনন্ত মহারাজ-মমতার সাক্ষাতে অগ্নিশর্মা বিজেপি, নালিশ নেতা-বিধায়কদের

উত্তরবঙ্গে রেল দুর্ঘটনার পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখতে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। মঙ্গলবার সকালে কোচবিহারের মদনমোহন মন্দিরে পুজো দিয়ে তিনি যান বিজেপি সাংসদের প্রাসাদে।

After meeting between CM Mamata Banerjee and Ananta Maharaj there is a mess in coochbehar BJP

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অনন্ত মহারাজ। —নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০২৪ ১৯:০৮
Share: Save:

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিজেপির রাজ্যসভা সাংসদ অনন্ত মহারাজের সাক্ষাতের পর কোচবিহার জেলার রাজনীতিতে নতুন সমীকরণের ইঙ্গিত দেখতে শুরু করেছেন অনেকে। এবং সেই ঘটনায় অগ্নিশর্মা কোচবিহার বিজেপির জেলানেতৃত্ব। বিজেপির সাংসদ হয়েও অনন্ত কেন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করে দিয়েছেন জেলার বিজেপি নেতারা।

ভোট-পরবর্তী ‘সন্ত্রাস’-এর অভিযোগে সোমবারেই কোচবিহার পরিদর্শন করে এসেছে বিজেপির কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদল। তার আগে গত শনিবার কলকাতায় দলের ‘গুরুত্বপূর্ণ’ বৈঠক ছেড়ে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও গিয়েছিলেন কোচবিহারের ঘরছাড়া বিজেপি কর্মীদের ‘পাশে দাঁড়াতে’। সে সব ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই অনন্ত-মমতা বৈঠক ঘিরে উত্তাল কোচবিহার জেলার পদ্মশিবিরের রাজনীতি।

সদ্যসমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে কোচবিহার আসনে অমিত শাহের ডেপুটি নিশীথ প্রামাণিককে হারিয়ে জয়ী হয়েছেন তৃণমূল প্রার্থী জগদীশ বর্মা বসুনিয়া। উত্তরবঙ্গে বিজেপির কাছ থেকে ওই আসনটি ছিনিয়ে নিয়েছে তৃণমূল। আর সেখানেই তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন বিজেপির অনন্ত! ওই ঘটনায় জেলার ক্রুদ্ধ এবং বিড়ম্বিত নেতা-বিধায়কেরা ইতিমধ্যেই নালিশ জানাতে শুরু করেছেন রাজ্যনেতৃত্বের কাছে।

সোমবার উত্তরবঙ্গে রেল দুর্ঘটনার পরিস্থিতি সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। মঙ্গলবার সকালে কোচবিহারের মদনমোহন মন্দিরে পুজো দেন তিনি। তার পরে যান বিজেপি সাংসদ অনন্তের প্রাসাদে। সেখানে মুখ্যমন্ত্রীকে স্বাগত জানান স্বয়ং অনন্ত। সেই ছবি প্রকাশ্যে আসতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন কোচবিহার বিজেপির নেতা-কর্মীরা। কোচবিহার দক্ষিণের বিজেপি বিধায়ক নিখিলরঞ্জন দে বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী এবং অনন্ত মহারাজের বৈঠকের পরে আমাদের নানা ধরনের প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে। দলের যে সমস্ত কর্মী ভোট-পরবর্তী সন্ত্রাসে শাসকদলের হাতে আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁরা প্রশ্ন তুলছেন কেন এই বৈঠক। তাঁরা বলছেন, অন্তর্ঘাত করে বিজেপি প্রার্থীকে হারিয়েছেন অনন্ত মহারাজই। তাই কোচবিহারে এসে তাঁকে ধন্যবাদ জানাতে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।’’ নিখিল আরও বলেন, ‘‘কর্মীরা যে সব প্রশ্ন তুলছেন, তার কোনও উত্তর আমরা দিতে পারছি না। বিষয়টি আমি বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে বিস্তারিত ভাবে জানাচ্ছি। এই বৈঠক ঘিরে যে আমাদের মনে ক্ষোভ রয়েছে, সে কথাও আমরা তুলে ধরছি তাঁর কাছে।’’ কোচবিহার বিজেপির এক প্রবীণ নেতা বলেন, ‘‘অনন্ত মহারাজকে রাজ্যসভার সদস্য করা বিজেপি নেতৃত্বের অন্যতম ভুল সিদ্ধান্ত। রাজ্যসভার সাংসদ হওয়ার পর এখনও পর্যন্ত তিনি কোনও দিন বিজেপির জেলা কার্যালয়েও আসেননি। কোনও দিন নেতা-কর্মীদের দুঃখকষ্টের সময় তাঁকে পাশে দেখা যায়নি। এ বারের ভোটে আমাদের প্রার্থীর হয়ে প্রচারেও নামেননি তিনি। এমন একজনকে রাজ্যসভার সাংসদ করা কি আদৌ যুক্তিযুক্ত ছিল?’’

প্রসঙ্গত, কোচবিহারে বিজেপি প্রার্থী নিশীথের হয়ে প্রচারে না নামলেও রাজ্যের চার বিধানসভার উপনির্বাচনে বিজেপির ‘তারকা’ প্রচারকদের তালিকায় স্থান দেওয়া হয়েছে অনন্তকে। সোমবারই সেই তালিকা প্রকাশ করেছে বিজেপি।

মনে ক্ষোভ থাকলেও আপাতত প্রকাশ্যে কিছু জানাতে চাইছেন না তুফানগঞ্জের বিজেপি বিধায়ক মালতী রাভা রায় এবং শীতলখুচির বিধায়ক বরেন বর্মণ। তাঁদের কথায়, ‘‘এ বিষয়ে আমরা প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করব না। যদি কিছু বলার হয়, তবে তা দলের অভ্যন্তরেই জানাব।’’ কোচবিহার বিজেপি সূত্রের খবর, অনন্ত-মমতা বৈঠককে যে কোচবিহার জেলানেতৃত্ব ভাল চোখে দেখছেন না, তা-ও রাজ্যনেতৃত্বকে জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তবে কোচবিহার জেলা বিজেপির সভাপতি তথা কোচবিহার উত্তরের বিধায়ক সুকুমার রায় এই বিষয়ে রাজ্যসভার সাংসদের পাশেই আছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং অনন্ত মহারাজের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চেয়েছিলেন। তাই মহারাজের বাড়ি গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। এ ক্ষেত্রে বিষয়টি একান্ত তাঁদের ব্যক্তিগত বিষয়। এতে রাজনীতি দেখা উচিত নয়।’’

রাজ্য বিজেপির একটি সূত্র জানাচ্ছে, ২০২৩ সালে রাজ্যসভা নির্বাচনের সময় অনন্তকে প্রার্থী করায় সম্মতি ছিল না রাজ্য বিজেপির প্রায় কোনও গোষ্ঠীর নেতারই। কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ‘একতরফা’ ভাবেই অনন্তকে তাঁদের মাথার উপর চাপিয়ে দিয়েছিলেন। লক্ষ্য ছিল রাজবংশী ভোট পাওয়া। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশ মেনে রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এবং বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু নিজেরা উপস্থিত হয়ে অনন্তকে রাজ্যসভায় পাঠানোর পথ মসৃণ করেছিলেন। তাই অনন্তের ‘দায়’ কেন্দ্রীয় নেতৃত্বেরই বলে মনে করছেন রাজ্য বিজেপি নেতারা। তাঁদের কথায়, ‘‘অনন্ত মহারাজকে নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির অন্দরে যে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তার দায় কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এড়িয়ে যেতে পারেন না!’’

অন্য বিষয়গুলি:

Mamata Banerjee cm Tmc Leader Ananta Maharaj BJP Leader
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy