Advertisement
E-Paper

ঊর্মিমালাকে কদর্য আক্রমণ সোশ্যাল মিডিয়ায়, সরব বিদ্বজ্জনেরাও

ঊর্মিমালার ঘনিষ্ঠদের অভিযোগ, ওই মিম প্রকাশ করে বাবুল আসলে ‘অশ্লীলতা’কে প্রশ্রয় দিলেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১৫:৫৬
Share
Save

বাচিকশিল্পী ঊর্মিমালা বসুর একটি ফেসবুক পোস্ট ঘিরে আপাতত উত্তাল নেট দুনিয়া। ওই পোস্টের পরিপ্রেক্ষিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁকে অশ্লীল ভাষায় আক্রমণ করার অভিযোগ উঠেছে। ঊর্মিমালাকে নিয়ে তৈরি হওয়া মিম ভাইরাল হয়েছে, যেখানে তাঁর উদ্দেশে ব্যবহার করা হয়েছে কুরুচিকর শব্দ। আর গোটা বিষয়টির নিন্দা করতে গিয়ে ফের বিতর্কে জড়িয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা গায়ক বাবুল সুপ্রিয়

ঘটনার সূত্রপাত কয়েক দিন আগে। যাদবপুর-কাণ্ডের পর ফেসবুকে একটি লেখা পোস্ট করেন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী ঊর্মিমালা। যদিও তাঁর দাবি, লেখাটি তিনি নিজে লেখেননি। সোহিনী রায় নামে এক জনের ওয়াল থেকে সেটি তিনি শেয়ার করেন। পরে সেই লেখাটি কোনও ভাবে ছড়িয়ে পড়ে, ‘ঊর্মিমালা বসুর ওয়াল থেকে পাওয়া’ হিসেবে। এর পরেই ওই পোস্টের তলায় কুরুচিকর মন্তব্যের বন্যা বয়ে যায়। রুচিহীন শব্দ, কদর্য ভাষা এবং নোংরা ভঙ্গিতে আক্রমণ করা হয় বর্ষীয়ান এই বাচিকশিল্পীকে। কুৎসিত শব্দে আক্রমণ করে একটি মিম-ও ছড়িয়ে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায়।

মঙ্গলবার ঊর্মিমালা বলেন, ‘‘আমি নিজে ওই লেখা লিখিনি। এক জনের ওয়াল থেকে শেয়ার করেছিলাম। কিন্তু, বিষয়টি এমন পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়াটা দুর্ভাগ্যজনক। তবে, যাদবপুরের ছাত্রছাত্রীরা দেশের কঠিন সময়ে যে প্রতিবাদের স্পর্ধা দেখিয়েছে, যাদবপুরের প্রাক্তনী হিসেবে আমার সেটা ভাল লেগেছে। এটা আমার ব্যক্তিগত অনুভব, যা বলার অধিকার আমার রয়েছে। বলতে কোনও দ্বিধাও নেই।’’

জয় গোস্বামীর প্রতিবাদপত্র।

আরও পড়ুন: নথি না থাকলে পুলিশে ডায়েরি করুন: মমতা​

ঊর্মিমালাকে সোশ্যাল মিডিয়ায় এ ভাবে আক্রমণের প্রতিবাদে সরব হয়েছেন বিশিষ্টজনেরা। কবি জয় গোস্বামীর কথায়: ‘‘ঊর্মিমালা বসু এক জন সর্বজনমান্য শিল্পী। সেই শিল্পীকে এমন ভাষায় অপমান করা হল যা চরম অশালীনতায় ভরা। নারী বলেই তাঁকে এমন অসম্মান সহ্য করতে হল! এরা কারা? কাদের এমন নোংরা মন? আমি এদের আমর্ম ধিক্কার জানাচ্ছি।’’

সাহিত্যিক সঙ্গীতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মত, বিষয়টির সর্বান্তকরণে নিন্দা করা উচিত। তাঁর কথায়, ‘‘যত দিন যাচ্ছে মেয়েদের প্রতি এমন আক্রমণ ততই বাড়ছে। আগের দিনে মেয়েরা আবদ্ধ এবং আবৃত থাকত। এখন মেয়েরা বাইরে যায়। সব কিছুতে অংশ নেয়। ঝুঁকি নিয়ে মনের কথা বলে। যখনই মেয়েদের সঙ্গে বৌদ্ধিক যুক্তিতে আর পেরে ওঠা যায় না, তখনই তার শরীর, চরিত্র নিয়ে আক্রমণ করা হয়। ঊর্মিমালাদির সঙ্গে যেটা হয়েছে, সমস্ত বাঙালি মেয়ের বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ করা উচিত।’’

ঊর্মিমালা বসুকে অশালীন ভাবে আক্রমণ করার প্রতিবাদ জানাচ্ছেন সাহিত্যিক তিলোত্তমা মজুমদারও। তিনি বলেন, ‘‘এগুলো ভীষণ পরিকল্পিত ভাবে হয়। কেউ কারও কাঙ্ক্ষিত মত যখন আরোপ করতে চায়, সেটা যদি কেউ না মানে, তখন তার উপর আক্রমণের নানা উপায় রয়েছে। তার মধ্যে একটি হচ্ছে, ইংরেজিতে যাতে বলা হয় বিলো দ্য বেল্ট, অর্থাৎ কথা দিয়ে এমন আঘাত কর, যাতে অদৃশ্য রক্তপাত থামানো না যায়। ঊর্মিমালাদিকে এ ভাবেই অপমান করবার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, ঊর্মিমালাদির নিজস্ব ব্যক্তিত্ব এমনই এক শিল্পীত-বলয় তৈরি করেছে যাতে তাঁকে এই আক্রমণ স্পর্শ করে না। তিনি সম্মানীয় ছিলেন। তিনি সম্মানীয়তরা হলেন। এই ধরনের আক্রমণকে যে কোনও সচেতন মানুষের মতো আমিও ঘৃণার সঙ্গে প্রতিবাদযোগ্য মনে করছি।’’

আরও পড়ুন: রাজীবের খোঁজে সাঁতরাগাছিতে সিবিআই, হাইকোর্টে পিছল আগাম জামিনের শুনানি

যাদবপুর-কাণ্ড যাঁকে ঘিরে তৈরি হয়েছিল, সেই বাবুল সুপ্রিয় এ দিন ঊর্মিমালাকে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় চলা এই বিতর্ক প্রসঙ্গে একটি পোস্ট করেন। সেখানে তিনি লেখেন, ‘‘আমি এই ধরনের মিম-এর তীব্র নিন্দা করছি। এই ধরনের কদর্যতার আশ্রয় যেন আমরা না নিই। আমি ওঁকে ব্যক্তিগত ভাবে চিনি। সময় পেলে আমি তাঁকে এর উত্তরও দেব! তত ক্ষণ পর্যন্ত এই নোংরা খেলা বন্ধ করুন।’’ এই পোস্টের সঙ্গেই বাবুল সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া একটি মিম-ও শেয়ার করেন।

তা নিয়েই এ দিন ফের বিতর্ক দানা বেঁধেছে। ঊর্মিমালার ঘনিষ্ঠদের অভিযোগ, ওই মিম প্রকাশ করে বাবুল আসলে ‘অশ্লীলতা’কে প্রশ্রয় দিলেন। সঙ্গীতাও একই অভিযোগ তুলছেন। তাঁর কথায়: ‘‘বাবুল এটা করেছেন! আমি বিশ্বাসই করতে পারছি না। এটা কুরুচিপূর্ণ। প্রতিবাদ করার নামেও যাঁরা এ সব শেয়ার করছেন, তাঁদের মধ্যেও আমি একটা পারভার্সন দেখতে পাচ্ছি। এটা করা যায় না।’’

বাবুলের কাছে এ প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘‘ঊর্মিমালা বসু যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা সম্পর্কে যা বলেছেন, তাকে কিন্তু আমি ধিক্কারই জানাচ্ছি। কারণ, তিনি সত্যটা দেখতে পাননি। যাঁরা ঊর্মিমালা বসুকে ধিক্কার জানিয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে আমি একমত।’’ একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘কিন্তু, ওঁকে আক্রমণ করতে গিয়ে যাঁরা অশালীনতার আশ্রয় নিয়েছেন, তাঁদের আমি কিছুতেই সমর্থন করতে পারি না, করিওনি। ওঁকে নিয়ে অনেক মিম, অনেক রকম পোস্টই ঘোরাফেরা করছে। তার মধ্যে কোনটা আমি সমর্থন করিনি, সেটাই বোঝাতে চেয়েছি। নিন্দাই তো করেছি। এর মধ্যেও ওঁরা উদ্দেশ্য খুঁজে পাচ্ছেন! বামপন্থীদের বলব, দ্বিচারিতা আর ভণ্ডামিটা বন্ধ করুন।’’

আরও পড়ুন: ‘দয়ালু’ মমতার প্রশংসায় রাজ্যপাল​

বাবুল সুপ্রিয়ের এই ‘ধিক্কার’ মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ঊর্মিমালা কী বলছেন? তাঁর কথায়: ‘‘বাবুলের সঙ্গে আমাদের বহু বার বিভিন্ন সময়ে নানা অনুষ্ঠানে দেখা হয়েছে। সব সময় সুন্দর ভাবে কথা বলেছেন। সেটা ব্যক্তিগত সম্পর্ক। ওঁর সঙ্গে রাজনৈতিক অবস্থানে আমার মতপার্থক্য আছে। থাকতেই পারে। রাজনৈতিক ভাবে তিনি কী করবেন বা বলবেন, সে ব্যাপারে আমার কোনও মতামত নেই।’’ একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘এই ৭৩ বছর বয়সে আমাকে নিয়ে যাদের নোংরা কথা বলতে আটকায় না, তাদের সামনে ছাত্রছাত্রীরা আরও বেশি বিপন্ন, আমার কাছে সেটাই দুশ্চিন্তার। ছোটদের, যারা আমার নাতিনাতনির বয়সী তাদের সাবধানে থাকতে বলি। আর সবাইকে বলি, এই অসভ্য রুচিহীনদের বেশি গুরুত্ব না দিতে। আমার কোনও ভয় নেই। জীবনের উপান্তে এসে এই নোংরামি আর অসভ্যতা বেদনাদায়ক, এই যা।’’

গ্রাফিক: তিয়াসা দাস।

Babul Supriyo Urmimala Basu Jadavpur Social Media Memes Joy Goswami

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।