সাপের ছোবলে মহিলার মৃত্যুর পরে ভেঙে পড়েছে পরিবার। নিজস্ব চিত্র
বাড়ি থেকে চার কিলোমিটার দূরে হাসপাতাল। তবু সেখানে না গিয়ে আড়াই কিলোমিটার দূরে অন্য এক গ্রামে গিয়ে ওঝার ঝাড়ফুঁকে বিশ্বাস রেখে মারা গেলেন সর্পদষ্ট এক মহিলা।
শনিবার রাতে মুর্শিদাবাদের সুতি ১ ব্লকের বংশবাটী গ্রাম পঞ্চায়েতের আলোয়ানি গ্রামের বাসিন্দা আজবালা সরকার (৫২) স্বামীর সঙ্গে বাড়ির বারান্দায় শুয়ে ছিলেন। ক’দিন বেশ বৃষ্টি হয়েছে। ঘুমের মধ্যেই আচমকা তাঁর আঙুলে সাপ ছোবল দেয়। আজবালা বুঝতে পেরেই চিৎকার করে ওঠেন। ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন তাঁর কন্যা ও জামাতা। আশপাশের বাসিন্দারাও চলে আসেন। এর পর ওই দাওয়াতেই শুরু হয় আলোচনা। তখনই আজবালার পরিবার ও প্রতিবেশীরা ঠিক করেন, হাসপাতালের বদলে ওঝার কাছেই তাঁকে নিয়ে যাওয়া হবে। টোটোতে করে মহিলাকে নিয়ে যাওয়া হয় আড়াই কিলোমিটার দূরে নাজিরপুরে এক ওঝার কাছে। রাতে ওঝার বাড়িতেই চলে ঝাড়ফুঁক। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, নিমের ডাল, ঝাঁটার কাঠি ইত্যাদি দিয়ে অনেক
ক্ষণ ঝাড়ফুঁক চলে। ধূপ-ধুনো জ্বালিয়ে শুরু হয় ‘মন্ত্র’ পড়া। প্রায় ঘণ্টা দেড়েক ধরে এ সবের পরেও আজবালা মোটামুটি কথা বলতে পারছিলেন। তাঁর শরীর অবশ্য তত ক্ষণে ভেঙে পড়েছে। এর পরই ওঝার নিদান, “সব বিষ নেমে গিয়েছে। আর ভয়ের কিছু নেই।” এক জন মুখ ফস্কে জিজ্ঞেস করেছিলেন, “হাসপাতালে নিয়ে যাব কি?” “না না তার আর দরকার হবে না” বলে ভরসা দিয়েছিলেন ওঝা। সকাল হতেই ক্রমশ ঝিমুনি শুরু হয় মহিলার। চোখে মুখে জল দিয়ে সুস্থ করার চেষ্টাও বিফলে যায়। এক সময় ঢলে পড়েন মৃত্যুর কোলে। ইতিমধ্যেই কেটে গিয়েছে ৮ ঘণ্টা।
গ্রামে প্রায় ১২০০ মানুষের বাস। শিক্ষার হার ৪০ শতাংশ। বেশির ভাগই কাঁচা বাড়িতে টিনের ছাউনি। অনেকেই দিনমজুরি করে সংসার চালান। গ্রামে পাকা রাস্তা ও বিদ্যুৎ রয়েছে। তবে হাইস্কুল ছ’কিলোমিটার দূরে। বীরভূম ঘেঁষা এই গ্রামটিতে এখনও ওঝাদের প্রভাব ও কদর প্রচণ্ড। গ্রামের শিক্ষক দেবাশিস সরকার বলছেন, “এটা অশিক্ষা আর কুসংস্কারের ফল। রাতে খবর পেলে কখনও ওঝার কাছে যেতে দিতাম না ওঁদের।” তিনি জানান, শুধু এই গ্রামটিই নয়। আশপাশের গ্রামেও ওঝার কদর রয়েছে। ক’দিন খুব বৃষ্টি পড়েছে। খাল, বিল, মাঠ জলে ভরা। সাপের উপদ্রবও বেড়েছে। দেবাশিস বলেন, ‘‘এই ঘটনাটি জানা গিয়েছে, কিন্তু ওঝার হাতে পড়ে অনেক মৃত্যুর কথা তো জানাই যাচ্ছে না। এখনই সাবধান না হলে বিপদ বাড়বে।’’
এই গ্রামের কাছেই আহিরণ ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। স্বাস্থ্য আধিকারিক অমিত মালাকার বলছেন, “সাপের ছোবলে অসুস্থ রোগীদের ওষুধ রয়েছে হাসপাতালে, যা বিনা পয়সায় পাওয়া যায়। আমাদের কাছে নিয়ে এলে এ ভাবে মরতে হত না ওই মহিলাকে।” বিডিও এইচ এম রিয়াজুল হক বলছেন, “খুব দুর্ভাগ্যজনক এই মৃত্যু, হাসপাতালে আনলে যা এড়ানো যেত। গ্রামাঞ্চলে এই সব ওঝাগিরি বন্ধ হওয়া দরকার। দুয়ারে সরকার শেষ হলেই গ্রামে গ্রামে এ নিয়ে প্রচারে নামব চিকিৎসকদের সঙ্গে নিয়ে।” ওই ওঝার খোঁজ চলছে।
বাড়ি থেকে চার কিলোমিটার দূরে হাসপাতাল। তবু সেখানে না গিয়ে আড়াই কিলোমিটার দূরে অন্য এক গ্রামে গিয়ে ওঝার ঝাড়ফুঁকে বিশ্বাস রেখে মারা গেলেন সর্পদষ্ট এক মহিলা।
শনিবার রাতে মুর্শিদাবাদের সুতি ১ ব্লকের বংশবাটী গ্রাম পঞ্চায়েতের আলোয়ানি গ্রামের বাসিন্দা আজবালা সরকার (৫২) স্বামীর সঙ্গে বাড়ির বারান্দায় শুয়ে ছিলেন। ক’দিন বেশ বৃষ্টি হয়েছে। ঘুমের মধ্যেই আচমকা তাঁর আঙুলে সাপ ছোবল দেয়। আজবালা বুঝতে পেরেই চিৎকার করে ওঠেন। ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন তাঁর কন্যা ও জামাতা। আশপাশের বাসিন্দারাও চলে আসেন। এর পর ওই দাওয়াতেই শুরু হয় আলোচনা। তখনই আজবালার পরিবার ও প্রতিবেশীরা ঠিক করেন, হাসপাতালের বদলে ওঝার কাছেই তাঁকে নিয়ে যাওয়া হবে। টোটোতে করে মহিলাকে নিয়ে যাওয়া হয় আড়াই কিলোমিটার দূরে নাজিরপুরে এক ওঝার কাছে। রাতে ওঝার বাড়িতেই চলে ঝাড়ফুঁক। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, নিমের ডাল, ঝাঁটার কাঠি ইত্যাদি দিয়ে অনেক
ক্ষণ ঝাড়ফুঁক চলে। ধূপ-ধুনো জ্বালিয়ে শুরু হয় ‘মন্ত্র’ পড়া। প্রায় ঘণ্টা দেড়েক ধরে এ সবের পরেও আজবালা মোটামুটি কথা বলতে পারছিলেন। তাঁর শরীর অবশ্য তত ক্ষণে ভেঙে পড়েছে। এর পরই ওঝার নিদান, “সব বিষ নেমে গিয়েছে। আর ভয়ের কিছু নেই।” এক জন মুখ ফস্কে জিজ্ঞেস করেছিলেন, “হাসপাতালে নিয়ে যাব কি?” “না না তার আর দরকার হবে না” বলে ভরসা দিয়েছিলেন ওঝা। সকাল হতেই ক্রমশ ঝিমুনি শুরু হয় মহিলার। চোখে মুখে জল দিয়ে সুস্থ করার চেষ্টাও বিফলে যায়। এক সময় ঢলে পড়েন মৃত্যুর কোলে। ইতিমধ্যেই কেটে গিয়েছে ৮ ঘণ্টা।
গ্রামে প্রায় ১২০০ মানুষের বাস। শিক্ষার হার ৪০ শতাংশ। বেশির ভাগই কাঁচা বাড়িতে টিনের ছাউনি। অনেকেই দিনমজুরি করে সংসার চালান। গ্রামে পাকা রাস্তা ও বিদ্যুৎ রয়েছে। তবে হাইস্কুল ছ’কিলোমিটার দূরে। বীরভূম ঘেঁষা এই গ্রামটিতে এখনও ওঝাদের প্রভাব ও কদর প্রচণ্ড। গ্রামের শিক্ষক দেবাশিস সরকার বলছেন, “এটা অশিক্ষা আর কুসংস্কারের ফল। রাতে খবর পেলে কখনও ওঝার কাছে যেতে দিতাম না ওঁদের।” তিনি জানান, শুধু এই গ্রামটিই নয়। আশপাশের গ্রামেও ওঝার কদর রয়েছে। ক’দিন খুব বৃষ্টি পড়েছে। খাল, বিল, মাঠ জলে ভরা। সাপের উপদ্রবও বেড়েছে। দেবাশিস বলেন, ‘‘এই ঘটনাটি জানা গিয়েছে, কিন্তু ওঝার হাতে পড়ে অনেক মৃত্যুর কথা তো জানাই যাচ্ছে না। এখনই সাবধান না হলে বিপদ বাড়বে।’’
এই গ্রামের কাছেই আহিরণ ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। স্বাস্থ্য আধিকারিক অমিত মালাকার বলছেন, “সাপের ছোবলে অসুস্থ রোগীদের ওষুধ রয়েছে হাসপাতালে, যা বিনা পয়সায় পাওয়া যায়। আমাদের কাছে নিয়ে এলে এ ভাবে মরতে হত না ওই মহিলাকে।” বিডিও এইচ এম রিয়াজুল হক বলছেন, “খুব দুর্ভাগ্যজনক এই মৃত্যু, হাসপাতালে আনলে যা এড়ানো যেত। গ্রামাঞ্চলে এই সব ওঝাগিরি বন্ধ হওয়া দরকার। দুয়ারে সরকার শেষ হলেই গ্রামে গ্রামে এ নিয়ে প্রচারে নামব চিকিৎসকদের সঙ্গে নিয়ে।” ওই ওঝার খোঁজ চলছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy