জাকির হোসেনের নির্বাচনী হলফনামার হদিস মিলল না নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে। নিজস্ব ছবি।
আয়কর দফতরের তল্লাশি অভিযানে তাঁর বাড়ি ও চালকল থেকে কোটি কোটি টাকা উদ্ধারের ঘটনায় রাজ্য জুড়ে আলোড়ন তৈরি হয়েছে। কিন্তু খোঁজ মিলছে না তাঁর নির্বাচনী হলফনামার! মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুরের তৃণমূল বিধায়ক জাকির হোসেনের নির্বাচনী হলফনামা জাতীয় নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট থেকে ‘উধাও’ হয়ে গিয়েছে। আনন্দবাজার অনলাইন বৃহস্পতিবার থেকে কমিশনের সাইটে জাকিরের হলফনামার খোঁজ চালিয়েছে। শুক্রবার সকাল পর্যন্ত সেটির হদিস মেলেনি।
বুধবার জাকিরের বাড়ি, বিভিন্ন কারখানা ও কার্যালয়ে হানা দেন আয়কর দফতরের আধিকারিকেরা। বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিধায়কের বাড়ি থেকে প্রায় ১১ কোটি টাকা উদ্ধার হয়েছে। তা নিয়ে জল্পনার মধ্যেই নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখা যায়, ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সময় জাকিরের জমা দেওয়া হলফনামাটি কমিশনের ওয়েবসাইটে নেই! তবে ওয়েবসাইটে ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের সময় জাকিরের দাখিল করা হলফনামাটি রয়েছে।
২০১৬ সালের হলফনামায় দেখা যাচ্ছে, সেই সময় বিধায়কের বার্ষিক পারিবারিক আয় ১.৮৯ কোটি টাকা এবং মোট সম্পত্তির পরিমাণ ছিল ২৭ কোটি। পরের পাঁচ বছরে জাকিরের সম্পত্তি কত বেড়েছে, তা জানতেই খোঁজা হয় ২০২১ সালের হলফনামাটি। কিন্তু সেটি মেলেনি।
এর পরেই আনন্দবাজার অনলাইনের তরফে কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। কমিশনের অবশ্য বক্তব্য, হলফনামা কমিশনের ওয়েবসাইটেই থাকার কথা। যদি কিছু ঘটে থাকে, তা হলে তা একেবারেই যান্ত্রিক সমস্যার কারণে। কমিশনের এক আধিকারিক আশ্বাস দেন, ‘‘বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।’’ ওই আধিকারিক আনন্দবাজার অনলাইনকে বিষয়টি নিয়ে শুক্রবার বিকেলে আবার খোঁজ নিতে বলেন।
জাকিরের সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘এটি একেবারেই কমিশনের বিষয়। আমি এ সম্পর্কে কিছু জানি না।’’
প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ‘নিয়োগ-দুর্নীতি’র তদন্তে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-এর অভিযানে একাধিক ফ্ল্যাট থেকে নগদ প্রায় ৫০ কোটি টাকা উদ্ধার সারা রাজ্যে শোরগোল ফেলেছিল। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে এ বার জাকিরের বাড়ি ও চালকল থেকে বিপুল পরিমাণে নগদ অর্থ উদ্ধার হওয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই ‘অস্বস্তি’-তে পড়ার কথা শাসকদলের। যদিও তৃণমূল এর পিছনে ‘ষড়যন্ত্র’ আছে বলে দাবি করেছে। পাশাপাশি, জাকিরের দাবি, ‘‘সমস্ত টাকার হিসেবই আমার কাছে রয়েছে। নথিও দেখিয়েছি। কিন্তু আয়কর আধিকারিকেরা তা মানতে চাননি। এর মধ্যে রাজনীতি রয়েছে কি না, জানি না। তবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবেই সব করা হচ্ছে।’’
পার্থের ‘ঘনিষ্ঠ’ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের ফ্ল্যাট থেকে কোটি কোটি টাকা উদ্ধারের পর প্রাক্তন মন্ত্রীর থেকে দূরত্ব বাড়াতে দেখা গিয়েছিল শাসক তৃণমূলকে। পার্থের সব দলীয় পদ কেড়ে নিয়ে তাঁকে সাসপেন্ডও করা হয়েছে। তবে জাকিরের ক্ষেত্রে তৃণমূল এখনও পর্যন্ত তাঁর পাশেই রয়েছে। দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেছেন, ‘‘তৃণমূলে আসার আগে থেকেই জাকির হোসেন প্রথম সারির ব্যবসায়ী। তাঁকে বক্তব্য জানানোর সুযোগ না দিয়ে যে ভাবে সংবাদমাধ্যমে তল্লাশির ঘটনা আনা হচ্ছে, তা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’’ ব্যবসায়ীর বাড়িতে বৈধ টাকা থাকলে তাতে দোষের কিছু নেই বলেও স্পষ্ট জানিয়ে দেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল। তবে তার মধ্যে আচমকা কমিশনের ওয়েবসাইট থেকে জাকিরের নির্বাচনী হলফনামা ‘উধাও’ হয়ে যাওয়ার বিষয়টি জল্পনা তৈরি করেছে।
প্রসঙ্গত, নব্বইয়ের দশকে দিল্লিতে বিড়ি সরবরাহের ব্যবসা শুরু করেন জাকির। ধীরে ধীরে তাঁর প্রতিপত্তি বা়ড়তে থাকে। বিড়ির পাশাপাশি শুরু করেন সর্ষের তেল, চাল, ময়দা, পাট, ডাল কারখানার সঙ্গে একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও। প্রণব মুখোপাধ্যায় জঙ্গিপুরে লোকসভার প্রার্থী হলে তাঁর সঙ্গে জাকিরের হৃদ্যতা গড়ে ওঠে। ২০১৫ সালের ১ অগস্ট তৎকালীন তৃণমূল জেলা সভাপতি মান্নান হোসেনের হাত ধরে তৃণমূলে যোগ দেন ব্যবসায়ী। ২০১৬ এবং ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের টিকিটে জিতেই জাকির বিধায়ক হয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy