শববাহী গাড়ির চালকের আসনে চন্দ্রকোনা পুরসভার প্রশাসক অরুপ ধাড়া। নিজস্ব চিত্র
রাতবিরেতে বার বার ফোন করেও পাওয়া যায়নি চালককে। ভিন্ন উপায় না দেখে, হাসপাতাল থেকে এক মহিলার মৃতদেহ বাড়িতে পৌঁছে দিতে তাই শববাহী গাড়ির চালকের আসনে বসে গেলেন পুরপ্রশাসক। প্রায় ৩০ কিলোমিটার রাস্তা স্বচ্ছন্দে গাড়ি চালিয়ে শেষকৃত্যের জন্য পৌঁছে দিলেন দেহ।
শুক্রবার সকালে চন্দ্রকোনা পুরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের খেজুরডাঙা এলাকার বাসিন্দা বছর পঞ্চান্নর লক্ষ্মী দলুই নামে এক মহিলা আক্রান্ত হন হৃদরোগে। তাঁকে নিজে উদ্যোগ নিয়েই ঘাটাল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি করান চন্দ্রকোনা পুরসভার প্রশাসক অরূপ ধাড়া। তিনি তৃণমূল পরিচালিত ওই পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যানও বটে।
হাসপাতালেই শুক্রবার গভীর রাতে মৃত্যু হয় লক্ষ্মীর। রাতেই দেহ বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য পুরসভার শববাহী গাড়িচালকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে মৃতার পরিবার। কিন্তু তাঁকে পাওয়া যায়নি। এর পর তাঁরা অরূপকে ফোন করে বিষয়টি জানান। কিন্তু গাড়িচালকের সঙ্গে কোনও ভাবে যোগাযোগ করতে পারেননি তিনিও।
আরও পড়ুন: এ মাস থেকে ডিএ বৃদ্ধি রাজ্য সরকারি কর্মীদের, মিলবে ২ লক্ষাধিক বেতনেও
তখন রাত ১২টা পেরিয়ে গিয়েছে। উপায়ান্তর না দেখে শেষমেশ ময়দানে নামে অরূপ নিজেই। পুরসভা থেকে শববাহী গাড়ি বের করে চালকের আসনে বসে পড়েন নিজেই। গাড়ি নিয়ে পৌঁছে যান হাসপাতালে। এর পর প্রায় ৫০ কিলোমিটার রাস্তা গাড়ি চালিয়ে মহিলার দেহ তিনি পৌঁছে দেন বাড়িতে।
গভীর রাতে হাসপাতাল চত্বরে এমন দৃশ্যের অবতারণা হবে ভাবতে পারেননি মৃতার পরিবারের সদস্যরা। মায়ের মৃত্যুর বিষাদ গ্রাস করেছে লক্ষ্মীর ছেলে মহাদেব দলুইকে। কিন্তু অরূপের এমন সাহায্যে একইসঙ্গে তিনি বিস্মিতও। তিনি বলেন, ‘‘গভীর রাতে পুরসভার শববাহী গাড়িচালককে ফোনে না পেয়ে অরুপ বাবুকে সব কথা বলি। তিনি এসে হাসপাতালের যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করে, মায়ের দেহ শববাহী গাড়িতে তুলে তা নিজেই চালিয়ে বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছেন। আমরা এই উপকার ভুলব না।’’ জানা গিয়েছে, মহিলার শেষকৃত্যের জন্য আর্থিক সাহায্য করেছেন পুর প্রশাসক।
আরও পড়ুন: লকডাউনের দুর্দিনে বইপাড়াকে বাঁচিয়ে রেখেছিল বাঙালি পাঠক
অরূপ নিজে অবশ্য বিনয়ের সঙ্গে বলছেন, ‘‘যখন কোনও ভাবেই চালককে পাওয়া গেল না তখন সিদ্ধান্ত নিই নিজেই গাড়ি চালিয়ে মৃতদেহ পৌঁছে দেব। তাই করেছি।’’
অরূপের এই ঘটনা চন্দ্রকোনার সরকারি আধিকারিকদের অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর এমনই এক ‘কীর্তি’র স্মৃতি উস্কে দিয়েছে। কয়েক মাসে করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন চন্দ্রকোনারই এক ব্যবসায়ী। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করার জন্য কাউকেই পাওয়া যায়নি। শেষ পর্যন্ত পিপিই কিট পরে ওই ব্যবসায়ীকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে এসে হাসপাতালে ভর্তি করেন চন্দ্রকোনা থানার তৎকালীন ওসি, বিডিও এবং জয়েন্ট বিডিও। অরূপের ঘটনা শুনে অনেকেই আওড়াচ্ছেন চাণক্য শ্লোক, ‘‘রাজদ্বারে, শ্মশানে চ য তিষ্ঠতি...’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy