Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Cyclone Sitrang

সিত্রাং-ভয়ে কাঁপছে উপকূল, আলোর উৎসবের সকালেই সন্ধ্যা নামল দিঘা, কাকদ্বীপে! প্রস্তুত প্রশাসন

ভরা কটালে উত্তাল দিঘার সমুদ্র। এই পরিস্থিতিতে চূড়ান্ত সতর্কতা জারি হয়েছে পূর্ব মেদিনীপুরের বিস্তীর্ণ এলাকায়। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বেশ কয়েকটি জায়গায় বাসিন্দাদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে অন্যত্র।

সতর্ক করা হচ্ছে স্থানীয়দের।

সতর্ক করা হচ্ছে স্থানীয়দের। —নিজস্ব চিত্র।

সুমন মণ্ডল ও সৈকত ঘোষ
দিঘা ও কাকদ্বীপ শেষ আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০২২ ১৪:১২
Share: Save:

কালীপুজোয় এ বার উৎসবে গা ভাসানোর সময় নেই বাংলার উপকূলবর্তী অঞ্চলের মানুষের। শিয়রে সিত্রাং-কাঁটা। ইতিমধ্যে কলকাতা এবং সংলগ্ন জেলাগুলিতে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি শুরু হয়েছে। হাওয়া অফিসের পূর্বাভাস, ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে। সোমবার দুপুরেই উপকূলের অনেকটা কাছে চলে এসেছে সিত্রাং। দুপুর ১২টায় সাগরদ্বীপ থেকে মাত্র ৩৮০ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং বাংলাদেশের বরিশাল থেকে ৫২০ কিলোমিটার দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছে এই সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়। সঙ্গে ভরা কটাল। তাই ভীত পূর্ব মেদিনীপুর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার উপকূল এলাকার বাসিন্দারা।

ভরা কটালে উত্তাল দিঘায় সমুদ্রের জলরাশিও উত্তাল৷ এই পরিস্থিতিতে চূড়ান্ত সতর্কতা জারি হয়েছে দিঘা-সহ পূর্ব মেদিনীপুরের বিস্তীর্ণ এলাকায়। বেশ কয়েকটি জায়গায় বাসিন্দাদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে নিরাপদ জায়গায়। রামনগর ব্লক প্রশাসন সূত্রে খবর, দিঘা-সহ সমুদ্র তীরবর্তী এলাকায় নজরদারি চালাতে রাতভর খোলা রয়েছে কন্ট্রোল রুম। যে কোনও পরিস্থিতির মোকাবিলায় প্রশাসন পুরোদস্তুর তৈরি রয়েছে।

সিত্রাংয়ের মোকাবিলায় পূর্ব মেদিনীপুরে নামানো হয়েছে ৩ কোম্পানি জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (এনডিআরএফ) এবং রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (এসডিআরএফ)-র ২টি কোম্পানি। সোমবার সকাল থেকে দিঘা এবং তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় এনডিআরএফের দ্বিতীয় ব্যাটালিয়ন লাগাতার টহলদারি চালাচ্ছেন। ব্যাটালিয়নের আধিকারিক মণীশ দুবে বলেন, ‘‘এই সময় সমুদ্রতট থেকে সবাইকে দূরে সরে যেতে বলা হচ্ছে। সেই সঙ্গে উপকুলবর্তী গ্রামগুলিতে গিয়েও এলাকাবাসীদের সতর্ক করা হচ্ছে। পরিস্থিতি খারাপ হলেই দ্রুত তাঁদের বাড়ি ছেড়ে সুরক্ষিত জায়গায় চলে যেতে বলা হয়েছে।’’

দিঘা উন্নয়ন পর্ষদের আধিকারিক মানসকুমার মণ্ডল জানান, জোয়ারের মুহূর্তটাই সব থেকে বিপজ্জনক। সে সময় ঝড় আছড়ে পড়লে বড়সড় জলোচ্ছাস হতে পারে। এ জন্য পর্যটকদের সমুদ্রে নামায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। পুলিশ এবং বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী সব সময় নজরদারিতে রয়েছে।

অন্য দিকে, হলদিয়া উপকূলেও যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে। সুন্দরবনের ওপর সিত্রাং আছড়ে পড়লে সেখান থেকে কিছু দূরে অবস্থিত হলদিয়াতেও ঝড়ের বড় প্রভাব পড়তে পারে। সেই হিসাব রেখে হলদিয়া পুরসভাতে কন্ট্রোল রুম খুলে নজরদারি চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মহকুমা শাসক সুপ্রভাত চট্টোপাধ্যায়।

পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক পূর্ণেন্দুকুমার মাজি জানান, উপকূল এলাকার পাশাপাশি গোটা জেলা জুড়েই জোরদার নজরদারি চলছে। ইতিমধ্যে কয়েক হাজার মানুষকে সরিয়ে আনা হয়েছে নিরাপদ আশ্রয়ে। আরও কয়েক হাজার মানুষকে সরিয়ে আনার কাজ চলছে।

উত্তাল সমুদ্র। কটালের কারণে ভয় বাড়ছে উপকূলের বাসিন্দাদের মধ্যে।

উত্তাল সমুদ্র। কটালের কারণে ভয় বাড়ছে উপকূলের বাসিন্দাদের মধ্যে। —নিজস্ব চিত্র।

সিত্রাঙের প্রভাবে ইতিমধ্যে হালকা বৃষ্টি শুরু হয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা। বৃষ্টির পাশাপাশি সুন্দরবন উপকূলে হালকা বাতাস বইতে শুরু করে। বেলা বাড়তেই সমুদ্র উত্তাল হতে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে গঙ্গাসাগর এবং বকখালির মতো পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে পর্যটকদের সমুদ্র সৈকতে ঘোরাঘুরিতে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। সোমবার বিকেলের মধ্যে বাঁধ লাগোয়া বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে বলা হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে জেলার উপকূলবর্তী এলাকা থেকে কমপক্ষে ১০ হাজার মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছে প্রশাসন। সাগর ব্লকের ভাঙন কবলিত ঘোড়ামারা দ্বীপ এবং নামখানার মৌসুনি দ্বীপের বাঁধের ধারের বাসিন্দাদেরও উঁচু কোনও বিল্ডিং, স্কুল বাড়ি ইত্যাদিতে চলে যেতে বলা হয়েছে।

উপকূলে সজাগ রয়েছে প্রশাসন।

উপকূলে সজাগ রয়েছে প্রশাসন। —নিজস্ব চিত্র।

সুন্দরবনের সাগর, নামখানা, কাকদ্বীপ, পাথরপ্রতিমা, কুলতলি এবং গোসাবা ব্লকের উপরেও আলাদা করে নজর রাখছে প্রশাসন। প্রতিটি মহকুমা শাসক এবং ব্লক প্রশাসন দফতরে জরুরি ভিত্তিতে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। জেলা শাসকের দফতর থেকে কন্ট্রোল রুমগুলির সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রাখা হবে। প্রতিটি পঞ্চায়েতকে পর্যাপ্ত শুকনো খাবার, ত্রিপল এবং পানীয় জল মজুত করে রাখা হয়েছে। বিচ্ছিন্ন দ্বীপগুলিতেও খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিতে বলা হয়েছে। প্রায় ১ লক্ষ ৭ হাজারের বেশি ত্রিপল মজুত করা হয়েছে। চাল থাকছে ১ হাজার ৩০০ মেট্রিকটন। যা পৌঁছে দেওয়া হবে দুর্যোগ কবলিত এলাকার মানুষের কাছে। ক্যানিং, পাথরপ্রতিমা ও কাকদ্বীপ ব্লকের জন্য রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলার(এসডিআরএফ) ৩টি দল প্রস্তুত থাকছে।

সুন্দরবন এবং উপকূল জুড়ে প্রায় পাঁচশো সিভিল ডিফেন্স ভলান্টিয়ার এবং শতাধিক আপদমিত্রদের মোতায়েন করে রাখা হয়েছে৷ বিপর্যয়ের সময় উদ্ধার কাজ চালানোর জন্য ডায়মন্ড হারবার, সাগর, বকখালি, পাথরপ্রতিমা এবং গোসাবায় একটি করে বিশেষ বোট প্রস্তুত রয়েছে। এ ছাড়া প্রতিটি পয়েন্টে কুইক রেস্পন্স টিমকেও প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। জেলা শাসক সুমিত গুপ্ত বলেন, ‘‘আগের সব ঝড় মোকাবিলার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সব ধরনের ব্যবস্থাপনা করা হচ্ছে। আশা করি বড়সড় কোনও বিপর্যয় ঘটবে না।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Cyclone Sitrang digha Sundarban Cyclone
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy