আতশবাজির দাপট চলছেই। ছবি: পিটিআই।
কালীপুজো ও দীপাবলির রাতে শব্দের তাণ্ডব যে হবে, সেই ইঙ্গিত আগেই মিলেছিল। তা কার্যত সত্যি হয়েছে। রবিবার রাতভর রাজ্যের নানা জায়গায় শব্দবাজি ফেটেছে। সোমবারও বাজির শব্দ থামেনি। সঙ্গে ছিল আতশবাজির দাপট। সেই ধোঁয়ার জেরে সোমবার মহানগরে বায়ুদূষণের মাত্রা সহনশীল মাত্রার থেকে প্রায় সাতগুণ বেশি।
তবে এই উপদ্রব কালীপুজো, দীপাবলির সঙ্গেই শেষ হবে, না কি বিশ্বকাপের শেষ দুই খেলার দিনে আরও মাথা চাড়া দেবে, সেই প্রশ্ন নাগরিকদের মনে ঘুরছে। আগামিকাল, বুধবার সেমিফাইনালে ভারতের খেলা। জিতলে রবিবার বিশ্বকাপ ফাইনালে খেলবে রোহিত শর্মার দল। সে দিনই ছট পুজো আছে। তাই সে দিন সব মিলিয়ে বাজির তাণ্ডব কোথায় পৌঁছতে পারে, সেই আশঙ্কা অনেকেরই।
এ বার বাজির শব্দমাত্রা ৯০ ডেসিবেল থেকে বাড়িয়ে ১২৫ ডেসিবেল করেছে রাজ্য পরিবেশ দফতর এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। তাই শব্দবাজি কার্যত আইনি তকমা পেয়ে গিয়েছে। বাজি ধরপাকড়েও এ বার তেমন কড়া মনোভাব দেখা যায়নি। পরিবেশকর্মীদের বক্তব্য, এর জেরে কালীপুজোর রাত গড়াতেই যেন যুদ্ধক্ষেত্র হয়ে উঠেছিল কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন এলাকা। আদালত নির্ধারিত দু’ঘণ্টা সময়ের বাইরেও তুমুল বাজি ফেটেছে। পুলিশি ধরপাকড় হলেও তা যেন সিন্ধুতে বিন্দুসম ছিল। সোমবারও সন্ধ্যার পর থেকেই মধ্য কলকাতা-সহ শহরের বিভিন্ন প্রান্তে অবিরত দুম-দুম শব্দে লোকের কান ঝালাপালা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার এক কর্মশালায় রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের শীর্ষ কর্তারা দাবি করেছিলেন, সবুজ বাজির কারণে এ বার আলাদা রকমের দীপাবলি হতে চলেছে। রবিবার রাতে যা হয়েছে, তার পরে নাগরিকদের অনেকেই বলছেন, সত্যিই এ বার অন্য রকমের দীপাবলি হয়েছে। শব্দের তাণ্ডবের সামনে এত অসহায় বোধ হয় পুলিশ-প্রশাসনকে আগে দেখা যায়নি। সবুজ বাজি নিয়ে পর্ষদ কর্তারা ‘আহ্লাদিত’ হলেও এ রাজ্যে সবুজ বাজি আদতে কত শতাংশ তৈরি হয় তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। প্রশ্ন আছে ভুয়ো সবুজ বাজি ধরা নিয়েও। তবে পর্ষদ সূত্রের দাবি, মানুষকে সচেতন করে বাজিতে লাগাম টানার পাশাপাশি তারা অভিযোগ পেলেই পদক্ষেপ করেছে।
বাজির উপদ্রবের নিরিখে কলকাতায় ‘হটস্পট’ হিসেবে বালিগঞ্জ, টালিগঞ্জ, টালা, সন্তোষপুর, বেহালা, পর্ণশ্রী, লকার মাঠ, রাসবিহারী, ফুলবাগান, মানিকতলা, বিধাননগর, সার্ভে পার্ক, বাঘাযতীন, বাগুইআটি, আলিপুর, ভবানীপুর-সহ বিস্তীর্ণ এলাকা উঠে এসেছে। রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদে এই সব জায়গা থেকে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। সোমবার ডিজে-র অভিযোগও জমা পড়েছে পর্ষদের কাছে।
পিছিয়ে নেই জেলাগুলিও। হুগলি ও হাওড়ার নানা জায়গায় রবিবার গভীর রাত পর্যন্ত বাজি ফেটেছে। কোন্নগরে গঙ্গার ধারের আবাসনের বাসিন্দা, ৭৯ বছরের শৈলেন পর্বত বলেন, ‘‘আমাদের উভয়সঙ্কট। আশপাশে শুধু নয়, গঙ্গার অন্য পাড়ে পানিহাটি, খড়দহের দিক থেকেও বাজির প্রচণ্ড শব্দে নাজেহাল হতে হয়।’’ সোমবার সকাল থেকে শ্রীরামপুর, ভদ্রেশ্বর, চন্দননগরের একাংশে বিক্ষিপ্ত বাজি ফেটেছে। সন্ধ্যায় প্রায় সর্বত্র বাজি ফাটা শুরু হয়।
উত্তরবঙ্গের আলিপুরদুয়ার, উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুরে কালীপুজোর রাতে শব্দবাজির দাপট ছিল। তবে জলপাইগুড়ি সদর এবং মালদহে শব্দবাজি কম ফেটেছে। বীরভূমে, উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ মহকুমায় নিষিদ্ধ শব্দবাজি ও আতশবাজির রমরমা বেশ কম। দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপ, ক্যানিং, বাসন্তী, গোসাবা এলাকায় কালীপুজোর সন্ধ্যায় শব্দবাজির দাপট শোনা যায়। কালীপুজোর রাতে দুর্গাপুর ও আসানসোল শিল্পাঞ্চলে সার্বিক ভাবে শব্দের দাপট কম থাকলেও রানিগঞ্জ শহরের কিছু এলাকা ব্যতিক্রম ছিল। রানিগঞ্জের বাসিন্দা চিকিৎসক সমরেন্দ্রকুমার বসু বলেন, “রাতে ঘুমোতেই পারিনি। প্রশাসনের আরও কড়া হাতে বিষয়টির মোকাবিলা করা দরকার ছিল।”
রবিবার রাতে নদিয়ার রানাঘাট ও কল্যাণীতে নিষিদ্ধ শব্দবাজি ফাটার শব্দ কানে এসেছে। যাবতীয় নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কালীপুজোর গভীর রাত পর্যন্ত দেদার শব্দবাজি ফেটেছে পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুক এবং কাঁথিতে। হলদিয়া শিল্পাঞ্চলে অবশ্য দাপট ছিল আতশবাজির। পাঁশকুড়া, কোলাঘাটে বাজি ফাটার খবর মেলেনি। পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম জেলায় শব্দবাজির দাপট অন্য বছরের তুলনায় কম ছিল। খড়্গপুরে অবশ্য বিক্ষিপ্ত ভাবে পটকা, ‘শটস’-এর আওয়াজ কানে এসেছে। তুলনায় শান্তই ছিল পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ার নানা এলাকা।
দীপাবলির রাতে দূষণের মাত্রা বেড়েছে মুর্শিদাবাদে। পরিবেশকর্মী সৌমেন্দ্রমোহন ঘোষ বলেন, ‘‘কলকাতার তুলনায় বহরমপুর অনেক খোলামেলা শহর। কলকাতায় বায়ুর গুণমানের সূচক আড়াইশো, বহরমপুরে ১৬৩। এটা আরও কম হওয়া উচিত। বহরমপুরে তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নীচে নামলে এই সূচক ২০০-র কাছাকাছি চলে যাবে। সেটা খুবই অস্বাস্থ্যকর হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy