মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। —ফাইল চিত্র।
রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচনে জয়ী কংগ্রেস-সহ বিরোধী প্রার্থীদের অপহরণ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। এই ঘটনা রুখতে এ বার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লিখলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তথা সাংসদ অধীর চৌধুরী। রবিবার মুখ্যমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে অধীরের আর্জি, ‘‘পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠনের আগে যা ঘটছে রাজ্যে, তা অবিলম্বে বন্ধ করুন।’’ এই ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন অধীর। তাঁর প্রশ্ন, ভোটের ফলঘোষণার পর বিরোধী প্রার্থীদের অপহরণের যে সব অভিযোগ উঠছে, তা কি নির্বাচনে জয়ের জন্য কোনও ‘সভ্য পদ্ধতি’? এই চিঠি নিয়ে পাল্টা সরব হয়েছে তৃণমূল।
গত ৮ জুলাই রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন হয়। গণনা শুরু হয় ১১ তারিখ। বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছে শাসকদল তৃণমূল। অভিযোগ, এর পরেও বিরোধী দলের প্রার্থীদের ‘ভয় দেখিয়ে’ অপহরণ করা হচ্ছে। সম্প্রতি অধীরের গড় মুর্শিদাবাদের বহরমপুরে কংগ্রেসের জয়ী প্রার্থীকে অপহরণের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। পরে দেখা যায়, ওই প্রার্থী তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। মুর্শিদাবাদ কংগ্রেস নেতৃত্ব দাবি করেন, ওই প্রার্থীকে ভয় দেখিয়ে বাধ্য করা হয়েছে তৃণমূলে যোগ দিতে। যদিও তৃণমূলের তরফে এই অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। সম্প্রতি দক্ষিণ ২৪ পরগনার মথুরাপুরে তিন বিজেপি প্রার্থী এবং বাম সমর্থিত এক নির্দল প্রার্থীকে পঞ্চসায়র থানা এলাকার একটি অতিথিশালা থেকে আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে অপহরণ করা হয় বলে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন সিপিএম নেতা কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর অভিযোগের তির ছিল শাসক তৃণমূলের দিকে। কিন্তু পুলিশ সূত্রে খবর, ওই চার প্রার্থীর সঙ্গে পুলিশের তরফে যোগাযোগ করা হয়েছিল। তাঁরাই জানিয়েছেন, তাঁদের অপহরণ করা হয়নি। চার জনই স্বেচ্ছায় আত্মগোপন করেছেন। এই সব ঘটনাপ্রবাহের পর চিঠি দিলেন অধীর।
অধীর লিখেছেন, ‘‘হিংসার ঘটনা সত্ত্বেও কংগ্রেসের প্রার্থীরা পঞ্চায়েতে জয়ী হয়েছেন। পুলিশ, রাজনৈতিক নেতা, গুন্ডারা তাঁদের ভয় দেখাচ্ছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে খুন-সহ অন্য মামলা দায়েরের ভয় দেখানো হচ্ছে। এই ভাবে তাঁদের তৃণমূলে যোগদান করানো হচ্ছে।’’ অধীর আরও লিখেছেন যে, এমন পরিস্থিতি যদি অবাধে চলতে থাকে, তা হলে ভয়ঙ্কর পরিণতি হতে পারে ভবিষ্যতে। চিঠিতে উল্লেখ করেছেন, ‘‘আরও ক্ষমতা কুক্ষিগত করার যে খেলায় উদ্যত হয়েছে তৃণমূল, তাতে বাংলায় একচেটিয়া শাসনব্যবস্থার দিকেই ইঙ্গিত করছে। এর ফলে বিরোধীদের সংখ্যা ক্রমশ কমতে থাকবে।’’ পাশাপাশি, অধীরের বক্তব্য, ‘‘ভয় দেখিয়ে বিরোধী প্রার্থীদের তৃণমূলে যোগদান করালে নির্বাচনে মানুষের রায়কে অসম্মান করা হবে।’’ তার পর মমতার উদ্দেশে তাঁর প্রশ্ন, ‘‘এক দশকেরও বেশি সময় ধরে আপনি মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে ক্ষমতায় রয়েছেন। রাজ্যে নির্বাচনে জেতার জন্য এটা কি সভ্য পথ?’’ অবিলম্বে যাতে বিরোধী প্রার্থীদের উপর অত্যাচার বন্ধ করা হয়, তা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানিয়েছেন কংগ্রেস সাংসদ। এই ব্যাপারে ‘ব্যক্তিগত ভাবে’ মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন অধীর।
চিঠিতে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন অধীর। শুক্রবার রাতে মুর্শিদাবাদের নবগ্রাম থানার শৌচাগারে এক বন্দির ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ওই যুবকের পরিবারের অভিযোগ, পুলিশই পিটিয়ে খুন করেছে তাঁকে। পুলিশের দাবি, তিনি আত্মহত্যা করেছেন। এই ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠিতে অধীর লিখেছেন, ‘‘নবগ্রামে এক ব্যক্তিকে হত্যা করেছে পুলিশ। পুলিশ যদি হত্যাকারী হয়ে যায়, তা হলে নিরাপত্তার জন্য কোথায় যাবেন সাধারণ মানুষ?’’
অধীরের চিঠিকে গুরুত্ব দিতে নারাজ তৃণমূল। তৃণমূলের মুখপাত্র বিশ্বজিৎ দেব বলেন, ‘‘প্রথমত, আগে অধীর চৌধুরী ঠিক করুন, বিজেপি-বিরোধী লড়াইয়ে তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে আছেন কি না। দ্বিতীয়ত, পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠন করতে কংগ্রেসের কোনও সদস্যের প্রয়োজন নেই তৃণমূলে। একক ভাবে ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত বোর্ড গঠনের ক্ষমতা আমাদের রয়েছে। অপহরণ, অত্যাচার, চাপ দেওয়ার যে অভিযোগ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি করেছেন, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। তৃতীয়ত, কোনও জয়ী কংগ্রেস পঞ্চায়েত সদস্য যদি মুখ্যমন্ত্রীর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে পশ্চিমবঙ্গের জন্য কাজ করতে চান, তা হলে তিনি নিজের ইচ্ছায় তৃণমূলে যোগদান করতেই পারেন। অধীরের নেতৃত্বে বাংলায় কোনও কিছু করা সম্ভব নয়। তা প্রমাণ হয়ে গিয়েছে। আমাদের আর নতুন করে কিছু বলার নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy