(বাঁ দিকে) রাহুল গান্ধী। অধীর চৌধুরী (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
তৃণমূল নেতৃত্ব কংগ্রেসের সঙ্গে নির্বাচনী জোট বা সমঝোতা না-হওয়ার জন্য সরাসরি তাঁর নাম করে আক্রমণ শানাচ্ছেন। এ বার বাংলায় কংগ্রেসের ‘কেন্দ্র বিরোধী কর্মসূচি’ নিয়ে তৃণমূল এবং বিজেপিকে এক বন্ধনীতে ফেললেন অধীর চৌধুরী। মণিপুরে রাহুল গান্ধীর ‘ন্যায় যাত্রা’র একটি সভা পুলিশি অনুমতি না পেয়ে ভেস্তে গিয়েছিল। অসমে সেই রাজ্যের পুলিশ ও বিজেপির সঙ্গে দফায় দফায় সংঘাত হয়েছে রাহুলের যাত্রার। অসম পেরিয়ে রাহুলের কর্মসূচি যখন বাংলার মাটি ছুঁয়ে ফেলেছে, তখন শিলিগুড়িতে রাহুলের সভার অনুমতি না-পাওয়া নিয়ে বিজেপি শাসিত দুই রাজ্যের সরকারের সঙ্গে বাংলার তৃণমূল সরকারকেও এক বন্ধনীতে ফেললেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী।
শুক্রবার শিলিগুড়ি থানার সামনে অধীর বলেন, ‘‘মণিপুরে রাহুলের যাত্রায় বাধা দেওয়া হয়েছিল। অসমে বার বার কী ভাবে ন্যায় যাত্রাকে আটকানোর চেষ্টা হয়েছে আপনারা দেখেছেন। শিলিগুড়িতেও দেখা যাচ্ছে পুলিশ সভা করার অনুমতি দিচ্ছে না। কেন এই রকম হচ্ছে আমি জানি না।’’ লোকসভায় কংগ্রেস দলনেতা আরও বলেন, ‘‘এর আগের বার যখন রাহুল কন্যাকুমারী থেকে কাশ্মীর পর্যন্ত ভারত জোড়ো যাত্রা করেছিলেন তখন এত বাধার মুখে পড়তে হয়নি। কিছু ছোটখাটো ঘটনা ঘটেছিল, কিন্তু এই রকম পদে পদে বাধা তৈরি হয়নি। কিন্তু এ বার দেখা যাচ্ছে একের পর এক বাধা তৈরি হচ্ছে।’’ বহরমপুরের কংগ্রেস সাংসদের কথায়, ‘‘এই রাজ্যের সরকারের বিরুদ্ধে কোনও কর্মসূচি হলে পুলিশ সক্রিয় হয়। কিন্তু ন্যায় যাত্রা তো কোনও রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে নয়। সমগ্র দেশের জন্য। তার পরেও বাধা!’’ অনেকের মতে, অধীর বোঝাতে চেয়েছেন, কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকারের বিরুদ্ধে যখন রাহুল যাত্রা করছেন, তখন রাজ্যের তৃণমূল সরকার তাতে বাধা তৈরি করছে।
বৃহস্পতিবার কোচবিহারের হাসিমারায় প্রবেশ করে রাহুলের যাত্রা। কিন্তু তার পরেই রাহুল দিল্লি ফিরে যান। আগামী ২৮ জানুয়ারি আবার তা শুরু হবে। ফালাকাটা থেকে গাড়িতে ‘ন্যায় যাত্রা’ বেরোবে। ময়নাগুড়ি হয়ে তা পৌঁছবে জলপাইগুড়ি শহরে। সেখানকার পিডব্লিউডি মোড় থেকে পদযাত্রা করে রাহুল পৌঁছবেন কদমতলা চকে। দুপুরে গাড়িতে করে ৩ কিলোমিটার দূরে এবিপিসি গ্রাউন্ডে কর্মসূচি রয়েছে তৈঁর। তার পর আবার জলপাইগুড়ির রাজগঞ্জ ব্লকের ফাটাপুকুর থেকে যাত্রা শুরু হবে। জলপাইগুড়ি শহর থেকে সেই জায়গা ১৭ কিলোমিটার দূরে। ফাটাপুকুর থেকে সোজা শিলিগুড়ি থানার মোড়। সেখান থেকে গাড়িতে এয়ারভিউ মোড়। সেখানে রাহুলের সভা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেট সভার অনুমতি দেয়নি। না দেওয়ার কারণ হিসেবে পুলিশের তরফে একাধিক পরীক্ষার কথা জানানো হয়েছে কংগ্রেস নেতৃত্বকে।
বাংলায় কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের জোট হবে কি না তা নিয়ে প্রায় প্রতি দিন পটপরিবর্তন ঘটছে। বুধবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন, বাংলায় তৃণমূল একাই লড়বে। কংগ্রেসকে প্রথমে যে প্রস্তাব তিনি দিয়েছিলেন, তা প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। তার পর আর কোনও কথা এগোয়নি। তার আগের দিনই রাহুল অসম থেকে বলেছিলেন, মমতার সঙ্গে তাঁর এবং তাঁর দলের ‘রিস্তা’ ভাল। মমতার জোট নাকচের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আবার বৃহস্পতিবার তৃণমূলনেত্রীকে ফোন করেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে। এই টানাপড়েনের মধ্যে একটি বিষয়ে কোনও নড়চড় হচ্ছে না। তা হল, তৃণমূল আক্রমণ শানিয়ে যাচ্ছেন অধীরকে। পাল্টা অধীরও স্বভাবসিদ্ধ ঢঙে তৃণমূলকে। বৃহস্পতিবার তৃণমূলের রাজ্য সভার সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেছিলেন, ‘‘বাংলায় কংগ্রেস-তৃণমূলের জোট ভেস্তে দেওয়ার প্রথম কারণ অধীর চৌধুরী, দ্বিতীয় কারণ অধীর চৌধুরী, তৃতীয় কারণ অধীর চৌধুরী।’’ পাল্টা ডেরেককে ‘বিদেশি’ বলে আক্রমণ করেন অধীর। শুক্রবার ফের তিনি উত্তর-পূর্বের দুই রাজ্যের বিজেপি সরকারের সঙ্গে বাংলার তৃণমূল সরকারকে এক বন্ধনীতে ফেললেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy