Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪
Higher Secondary results 2020

জেদেই জয়ী অ্যাসিড আক্রান্ত রূপতাজ, বিজ্ঞান বিভাগে ৭৩ শতাংশ

অভাবের সংসারে ভয় জয় করেই পড়া চালিয়ে গিয়েছেন তিনি।

ঘর জুড়ে অভাবের ছাপ। মুছে যায়নি অ্যাসিড হামলার দাগও। তবু অদম্য রূপতাজ ইয়াসমিন। বাবা-মায়ের সঙ্গে পাঁশকুড়ার নারান্দার বাড়িতে। নিজস্ব চিত্র

ঘর জুড়ে অভাবের ছাপ। মুছে যায়নি অ্যাসিড হামলার দাগও। তবু অদম্য রূপতাজ ইয়াসমিন। বাবা-মায়ের সঙ্গে পাঁশকুড়ার নারান্দার বাড়িতে। নিজস্ব চিত্র

দিগন্ত মান্না
পাঁশকুড়া শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০২০ ০৫:০৯
Share: Save:

প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগেই দিদির বিয়ে রুখতে আগুয়ান হয়েছিল সে। মাসুলও গুনতে হয় বছর বারোর কিশোরীকে। অ্যাসিড ছুড়ে ঝলসে দেওয়া হয়েছিল তার প্রতিবাদী মুখ।

ওই ঘটনার পরে কেটেছে ছ-ছ’টা বছর। শারীরিক যন্ত্রণার পাশাপাশি সমাজের সঙ্গে লড়াইয়ে অবশ্য হার মানেননি রূপতাজ ইয়াসমিন। অভাবের সংসারে ভয় জয় করেই পড়া চালিয়ে গিয়েছেন তিনি। এ বারের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগে ৭৩ শতাংশ নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন রূপতাজ। আগামীতে লক্ষ্য নার্স হওয়া। পাশাপাশি, নাবালিকা বিয়ে বন্ধের কর্মসূচিতে শামিল হতে চান পাঁশকুড়ার এই কন্যাশ্রী।

পাঁশকুড়া পুর-শহরের নারান্দার বাসিন্দা রূপতাজরা তিন বোন। ২০১৪ সালে বড়দি সানজুনা ইয়াসমিনের দেওর সাকির মহম্মদ মেজদি রূপসার ইয়াসমিনকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিল। রূপসার তখন উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। আঠারো পেরোনোর আগে দিদির বিয়ে দেওয়া যে ঠিক নয়—বাবা, মাকে বুঝিয়েছিল রূপতাজই। সে তখন পাঁশকুড়া গার্লস হাইস্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী।

আরও পড়ুন: জুতো সেলাই থেকে সফল পাঠ, উচ্চমাধ্যমিকে ৯০ শতাংশ পেল হরিশ্চন্দ্রপুরের সঞ্জয়

বাবা-মা বুঝেছিলেন। মেজো মেয়ের বিয়ে দেবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছিলেন। তাতেই খেপে যায় সাকির। অভিযোগ, ২০১৪ সালের ৩ জুলাই গভীর রাতে মা ও মেজদির সঙ্গে ঘুমোনোর সময় রূপতাজকে লক্ষ্য করে অ্যাসিড ছোড়ে সে। অন্যরা অল্প-বিস্তর আহত হলেও রূপতাজের গোটা মুখ পুড়ে যায়। অস্ত্রোপচারের পরে প্রাণ বাঁচলেও রূপতাজের মুখমণ্ডলের বিকৃতি আটকানো যায়নি। রোখা যায়নি অদম্য রূপতাজকেও। একটু সুস্থ হতেই নিজের জেদে অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে পড়াশোনা শুরু করেন তিনি। ২০১৮ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় ৪৩৫ নম্বর পেয়ে প্রথম বিভাগে পাশ করেন তিনি। উচ্চ মাধ্যমিকেও সাফল্য অধরা থাকেনি।

রূপতাজ বলছিলেন, ‘‘নাবালিকা দিদির বিয়ে দিতে আমার পরিবার রাজি না হওয়ায় অ্যাসিড হামলা হয়েছিল। তবে আমি ভয় পাইনি। বরং আগামী দিনে নাবালিকাদের বিয়ে রোখার কোনও সরকারি বা বেসরকারি কর্মসূচিতে যোগ দিতে চাই।’’ লড়াকু ছাত্রীর সাফল্যে খুশি শিক্ষক-শিক্ষিকারাও। পাঁশকুড়া গার্লস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকা বলাকা মণ্ডল বলেন, ‘‘রূপতাজ পড়াশোনায় ভাল ছিল। অ্যাসিড হামলার পরে ওর পড়াশোনায় ক্ষতি হয়। তবে ও যে ভাবে মনের জোরে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করল, তা সত্যিই দৃষ্টান্ত।’’

রূপতাজের বাবা শেখ আলাউদ্দদিন ভাগচাষি। তিনি জানালেন, অ্যাসিড হামলায় অভিযুক্ত সাকির গ্রেফতার হয়েছিল। এখন সে জামিনে মুক্ত। তবে ওই ঘটনার পরে বড় মেয়ে সানজুনার সংসার ভেঙে যায়। তিনি এখন বাপের বাড়িতেই থাকেন। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পরে মেজ মেয়ে রূপসারের অবশ্য বিয়ে হয়ে গিয়েছে। রূপসার বলেন, ‘‘সে দিন আমার জন্য লড়তে গিয়েই বোনের জীবনে দুর্দিন নেমে আসে। তবে ও পরিস্থিতির কাছে হার মানেনি।’’

অভাবের সংসারে রূপতাজের নার্সিং পড়ার খরচ কোথা থেকে আসবে, তা নিয়ে চিন্তিত আলাউদ্দিন। পাঁশকুড়ার এক কাউন্সিলর শেখ সমিরুদ্দিন রূপতাজকে সংবর্ধনা দিয়ে পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন।

রূপতাজের ভরসা কিন্তু জেদ। সে যে মৃত্যু-ভয়কেও হারিয়েছে জেদের জোরেই!

অন্য বিষয়গুলি:

Higher Secondary results 2020 Acid Victim
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE