স্বামীর সঙ্গে সঞ্চয়িতা। নিজস্ব চিত্র
যে আসছে, সে লক্ষ্মীপুজোর আগেই আসবে বোঝা গিয়েছিল কয়েক মাস আগেই। “তুমি দেখ, আমাদের ঠিক মেয়ে হবে”, বর শুভ্র দে-কে প্রত্যয়ের স্বরে বলেছিলেন সঞ্চয়িতা যাদব।
নির্ধারিত দিন খানিক এগিয়ে আসে! মহানবমীর সন্ধ্যায় আলোয় ভাসা কলকাতায় নতুন মায়ের কথাই ফলে গিয়েছে। সাত বছর আগে সঞ্চয়িতার অ্যাসিডে ঝলসানো জীবন, আততায়ীর নিষ্ঠুর হামলার কাছে মাথা নোয়ায়নি। নতুন আশায় বুক বেঁধে তিনি ভালবাসার মানুষের সঙ্গে ঘর বেঁধেছেন। নতুন করে আর পাঁচটা স্বাভাবিক মানুষের মতোই বাঁচার স্বপ্নও দেখেছেন। সঞ্চয়িতার শরীরে নতুন জীবনের কুঁড়িটি ফুল হয়ে ফুটেছে নবমীর সন্ধ্যায়। আরজিকর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের গাইনি ওয়ার্ডের বাইরে তখন উৎকণ্ঠা ভরে অপেক্ষা করছিলেন নতুন বাবা শুভ্রও। মেয়ের জন্মের খবর পেয়েই শুভ্রর গোটা পরিবার নাম রাখা নিয়ে ব্যস্ত।
“দুর্গাপুজার সময়ে ও হল তো, আমার শ্বশুরমশাই তাই নাম রেখেছেন অর্ণা। মা দুগ্গারই একটা নাম, ফোনে গুগল করে দেখলাম। শক্তির পর্বতও নাকি মানে অর্ণার”, রবিবার সন্ধ্যায় হাসপাতাল থেকে বলছিলেন সঞ্চয়িতা। পাশ থেকে খুদে কন্যের আহ্লাদী কান্নায় মায়ের ফোনে কথা বলাই দায়। সাত বছর আগে এমন একটি দিন তাঁর জীবনে কখনও আসবে, অতি বড় আশাবাদীরও তা কল্পনা করা শক্ত ছিল। দমদমের শেঠবাগানে সঞ্চয়িতাকে উত্ত্যক্ত করেও সাড়া না-পেয়ে আক্রোশে মুখে অ্যাসিড মারে সৌমেন সাহা নামে পূর্ব পরিচিত যুবক। সঞ্চয়িতার ডান চোখ তাতে চিরতরে নষ্ট হয়েছে। এখনও পর্যন্ত মুখে সাতটি অস্ত্রোপচার হয়েছে। আদালতে অনেক লড়াইয়ে মিলেছে সাকুল্যে তিন লক্ষ টাকার ক্ষতিপূরণ। কিন্তু একটি মানবাধিকার সংগঠনে সঞ্চয়িতা তাঁর মতো ঘা-খাওয়া মেয়েদের হয়ে লড়াইও করছেন।
অ্যাসিড-হামলার চার বছর বাদে সৌমেনকে ধরে পুলিশ। এ বছর এপ্রিলেই বারাসত আদালতে তাকে ১৪ বছরের জেল খাটার সাজা দেন বিচারক। এর ঠিক এক বছর আগেই সঞ্চয়িতা ও শুভ্র বিয়ে করেছিলেন। অ্যাসিড পীড়িত মেয়েদের জন্য শাহরুখ খানের ফাউন্ডেশনের কাজের সূত্রে বলিউডের বাদশার সঙ্গেও আলাপ হয়েছিল সঞ্চয়িতার। ২০২০ তে তাঁর ও শুভ্রর বিয়ের সময়ে যুগলের নতুন জীবন শুরুর অধ্যায়টিতে শাহরুখ শুভেচ্ছা জানিয়ে টুইট করেন।
হার না-মানা তরুণীর মা হওয়ার খবরটি অবশ্য এখনও অত দূরে পৌঁছয়নি। ২৯ বছর বয়সী আনকোরা মা সঞ্চয়িতার আশা আগামী বুধ, বৃহস্পতিবারে হাসপাতাল থেকে তাঁর ছুটি মিলবে। তবে বাড়ি ফেরা পর্যন্ত নবাগতা শিশুর ছবি প্রকাশে নারাজ পরিবার। শুভ্র রোজ দেখে যাচ্ছেন মেয়ে, বৌকে। তাঁর আপশোস, হাসপাতালে কোভিড-বিধির জন্য নিজের মেয়েকে এখনও কোলে নেওয়া হয়নি।
এর আগে বোকারোর সোনালী মুখোপাধ্যায় বা নাড়ার লক্ষ্মী আগরওয়ালের মতো কয়েক জন অ্যাসিড দগ্ধ তরুণী ফের নতুন জীবনে ফিরেছেন। চাকরিতে সফল হয়েছেন, বিয়ে করেছেন বা মা হয়েছেন। তবে গড়পড়তা অ্যাসিডদগ্ধ তরুণীর জীবন তত মসৃণ নয়। সাকুল্যে শতকরা ৪০ ভাগ আদালতে যথাযথ বিচার পান। পশ্চিমবঙ্গে অনেক মেয়ের নানা জটিলতায় পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ পান না। দীপিকা পাড়ুকোনের ‘ছপক’ কিন্তু দেখিয়েছিল, অ্যাসিডে মুখ ঝলসে গেলেও জীবনে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব। সঞ্চয়িতার জীবনের চিত্রনাট্যও তা সত্যি প্রমাণ করে ছাড়ল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy