কুহু মল্লিকের হাতে বৃত্তির শংসাপত্র তুলে দিচ্ছেন পুলিশকর্মী প্রকাশ ঘোষ। নিজস্ব চিত্র
না আছে ঢাল, না আছে তরোয়াল। মা, বাবাও সংশোধনাগারে বন্দি। সব দিক থেকে মার খাওয়া স্কুলবালিকার অস্ত্র বলতে শিক্ষার তাগিদ। অনাথাশ্রমের আবাসিক, নবম শ্রেণির কুহু মল্লিকের পাশে দাঁড়াল এবিপি অ্যাডমিশনট্রি.কম। এবিপি সংস্থার এই উদ্যোগটির মাধ্যমে বছরে এক জন করে সুবিধা বঞ্চিত পড়ুয়ার দায়িত্ব নেওয়া হয়।
ছোট্টখাট্টো সপ্রতিভ মেয়েটির হাতে বৃত্তির শংসাপত্র তুলে দিলেন অন্য রকম পুলিশকর্মী প্রকাশ ঘোষ। শনিবার সেন্ট জেমস স্কুলের প্রেক্ষাগৃহে আইআইএইচএম উপস্থাপিত দ্য টেলিগ্রাফ স্কুল পুরস্কারের আসরে পুরোদস্তুর ডিউটির উর্দি পরেই মঞ্চে ওঠেন সাউথইস্ট ট্রাফিক গার্ডের সার্জেন্ট। সমাজের চোখে অপরাধী, বন্দি মা, বাবার সন্তান এবং উর্দিধারী পুলিশকে মিলিয়ে দুর্লভ একটি ফ্রেম তৈরি হল।
বালিগঞ্জ ফাঁড়ির কাছে ডিউটির ফাঁকে ন'বছরের আকাশ রাউথের সঙ্গে ভাব হয়েছিল পুলিশকাকু প্রকাশের। কাছের ভাতের হোটেলের কর্মী, একলা মায়ের সন্তান আকাশ। তার পড়াশোনার হাল দেখে পুলিশকাকু আঁতকে ওঠেন, লকডাউনে স্কুল বন্ধ বলে সব ভুলে মেরেছিস! প্রকাশের চেষ্টায় আকাশ এখন কাছেই একটি সরকারি হোমে থেকে পড়াশোনায় মনোযোগী। সে এই অনুষ্ঠানে আসতে পারেনি। তবে তার পাশেওদাঁড়িয়েছে ‘দ্য টেলিগ্রাফ এডুকেশন ফাউন্ডেশন’।
প্রতিকূলতা জয় করে পড়াশোনার সঙ্কল্পে অটল কিশোর, তরুণদের সম্মাননা জানানোর সময়ে অনেকের পিঠেই সস্নেহে হাত রাখছিলেন পুলিশকর্মী প্রকাশ। অনুষ্ঠানের আর এক জন পুরস্কারদাতা রেণু খাতুনের অবশ্য সে উপায় নেই। বাঁ হাতে শংসাপত্র দেওয়ার সময়ে তাঁর দু’চোখে স্নেহ ঝরছে। যা দেখে সঞ্চালক ব্যারি ও’ব্রায়েন বললেন, “ কীই আশ্চর্য! চাকরি করার জন্য বর ওঁর হাত কেটে নিয়েছে, কিন্তু রেণুর দু’চোখে মায়া আর সঙ্কল্পের মিশেল। নিজের লক্ষে মেয়েটা অটল।”রেণু বা প্রকাশের মতো নানা সঙ্কট জয় করে আসা মেধাবী, সৃজনশীল, পরিশ্রমী ছেলেমেয়েরা এ বারও এই আসরের অনন্য চরিত্র। যেমন ২৭ বছরের এই অনুষ্ঠানে ২০ বছর ধরে আসছেন অকালপ্রয়াত অভিরূপ ভদ্রের মা সুস্মিতা ভদ্র। এখন চুলে ঈষৎ পাক ধরেছে তাঁর। জাতীয় থ্রোবল খেলুড়ে, দক্ষ ফুটবলার তথা স্কুলছাত্রী গ্রেটা ডি’সিলভার লড়াকু মা লরেটাকে ‘থ্যাঙ্ক ইউ বাবা-মা’ স্বীকৃতি প্রদানের মুহূর্তে সুস্মিতার চোখে এ বারও বাদলধারা। পেশীর জটিল রোগে প্রয়াত বহুমুখী প্রতিভার ছাত্র সোমক দত্তের মা সুজাতাও ছেলের নামে পুরস্কার দিয়ে গেলেন।
জটিল রোগে খাওয়া, হাঁটা, কথা বলার সমস্যাতেও (অ্যাপার্টস সিনড্রোম) পড়াশোনা, গানবাজনায় চৌকস সৃষ্টি মণ্ডলকে দেখে বাক্যহারা প্রেক্ষাগৃহ। বাঁ পা কেটে বাদ যাওয়ার পরেও ডাক্তারিতে সুযোগ পাওয়া বেলদার গরিব ঘরের মেয়ে প্রেরণা রানার জুতসই ‘অর্থোপেডিক শু’র অভাবের কথা উঠে এল মঞ্চে। মুহূর্তে জনৈক স্কুলশিক্ষিকা জানালেন, ওই সমস্যা তিনিই এ বার মিটিয়ে দেবেন। উদ্যোক্তাদের আহ্বান, প্রিয়জনের নামে বৃত্তি দিতে যে কোনও ব্যক্তি বা সংস্থা এই আসরে শামিল হোন। সমাজের বৈষম্য ঘোচানোর কাজটায় তাতে সামান্য সুরাহা হবে।
শান্তিনিকেতনে সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রপৌত্র সুপ্রিয় ঠাকুরের পুত্র সুদৃঢ় ঠাকুরের পরিবেশবন্ধু স্কুল শিশুতীর্থ এ বার পুরস্কৃত এই আসরে। রবীন্দ্রকাব্যে যত রকম ফুললতা, গাছগাছালি তার প্রায় সবই তিনি নিজের স্কুলে লালন করছেন। কলকাতার নামী স্কুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অন্যতম সেরা শিক্ষায়তন শিরোপাতেও এই প্রথম উঠে এল প্রত্যন্ত গাঁ, হিঙ্গলগঞ্জের কনকনগর সৃষ্টিধর ইনস্টিটিউশন। কৈশোরের উচ্ছ্বাসের রঙেও সব পড়ুয়াই একাকার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy