Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Abhishek Banerjee in Supreme Court

অনেক নির্দেশেই বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় আমার নাম টানেন! শীর্ষ আদালতে বলতে চাইলেন অভিষেক

কলকাতা হাই কোর্টের দুই বিচারপতির মধ্যে সংঘাত নিয়ে শনিবার সুপ্রিম কোর্টের বিশেষ বেঞ্চে শুনানি হয়। সেখানেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আইনজীবী তাঁর বক্তব্য জানাতে চেয়েছেন।

Abhishek Banerjee wants to say something on his behalf about Justice Abhijit Ganguly

(বাঁ দিকে) কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ জানুয়ারি ২০২৪ ১৩:১৯
Share: Save:

কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশ প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টে নিজের বক্তব্য জানাতে চাইলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আইনজীবী মারফত শনিবারই তিনি শীর্ষ আদালতে বলতে চান। কিন্তু প্রধান বিচারপতি জানিয়েছেন, আগামী সোমবার যখন এই মামলার শুনানি হবে, তখন যা বলার বলতে পারবেন অভিষেকের আইনজীবী।

কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি সৌমেন সেন এবং বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের মধ্যে যে বেনজির সংঘাত তৈরি হয়েছে, তার ভিত্তিতে শনিবার ছুটির দিনে জরুরি শুনানির আয়োজন করে সুপ্রিম কোর্ট। পাঁচ বিচারপতির বিশেষ বেঞ্চ মামলাটি শোনেন। শীর্ষ আদালত জানিয়ে দিয়েছে, আপাতত কলকাতা হাই কোর্টে মেডিক্যালে ভর্তি মামলার সমস্ত বিচারপ্রক্রিয়া স্থগিত করে দেওয়া হয়েছে। সোমবার শুনানির পর এই সংক্রান্ত পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানানো হবে।

শনিবার শুনানি চলাকালীন অভিষেকের তরফে আইনজীবী ছিলেন অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি। তিনি অভিষেকের তরফে বলেন, ‘‘বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর প্রায় সমস্ত নির্দেশেই কোনও না কোনও ভাবে আমার নাম টেনে আনেন। আমার বক্তব্যও শোনা হোক।’’ এর পরেই প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় তাঁকে জানান, সোমবার এই মামলার শুনানি হবে। সেখানেই বক্তব্য জানাতে পারবেন অভিষেক।

মেডিক্যাল মামলায় বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে শীর্ষ আদালতে মামলা করেছে রাজ্য। শনিবারই এসএলপি দাখিল করার অনুমতি চাওয়া হয়েছিল। শীর্ষ আদালত সেই অনুমতি দিয়েছে। আপাতত, বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় এই মামলায় যে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন, তা-ও স্থগিত করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। আদালত জানিয়েছে, সোমবার পর্যন্ত মেডিক্যাল মামলায় হাই কোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ এবং ডিভিশন বেঞ্চের বিচারপ্রক্রিয়া স্থগিতই থাকবে। তদন্ত করতে পারবে না সিবিআইও। এই মামলায় রাজ্যকে নোটিসও জারি করেছে সুপ্রিম কোর্ট। নোটিস দেওয়া হয়েছে মামলাকারীকেও। প্রধান বিচারপতি জানান, মামলাকারী চাইলে মামলার সঙ্গে যুক্ত হতে পারবেন।

এর আগেও বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন অভিষেক। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের সাম্প্রতিক কিছু মন্তব্য নিয়ে শোরগোল তৈরি হয়। সম্প্রতি বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের অপসারণ চেয়ে একটি চিঠিও জমা পড়ে শীর্ষ আদালতে। এর মধ্যেই হাই কোর্ট থেকে বেরোনোর সময় সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে অভিষেকের সম্পত্তির হিসাব এবং তার উৎস জানতে চান বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। তা নিয়ে বিতর্কও হয়। এক জন বিচারপতির প্রকাশ্যে এমন মন্তব্যের নিন্দা করেন শাসকদলের একাংশ। এই আবহে গত ১০ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন অভিষেক।

সুপ্রিম কোর্টে পাঁচটি আর্জি জানিয়েছিলেন অভিষেক । তাঁর বক্তব্য ছিল, প্রথমত, বিচারপতি আদালতের ভিতরে বা বাইরে বাদী-বিবাদী পক্ষকে নিয়ে নানা মন্তব্য করে থাকেন। সেই সব মন্তব্য যাতে কোনও ভাবেই তদন্তকে প্রভাবিত না করে, তা নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেওয়া হোক। দ্বিতীয়ত, রাজনৈতিক ভাবে প্রভাবিত হয়ে বিচারাধীন বিষয় নিয়ে সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন বিচারপতি। যা বিচারব্যবস্থার নীতি-আদর্শের বিরুদ্ধাচরণের শামিল। তাই অভিষেকের আর্জি, ওই বিচারপতির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতে কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে নির্দেশ দেওয়া হোক। তৃতীয়ত, অভিষেকের আর্জি, কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে একটি বিশেষ বেঞ্চ তৈরি করতে নির্দেশ দেওয়া হোক। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের বেঞ্চে যে সব মামলা রয়েছে, তাঁর বেঞ্চ থেকে যে মামলাগুলি সরে অন্য বেঞ্চে (বিচারপতি অমৃতা সিংহের বেঞ্চ) গিয়েছে, সেই সব মামলার শুনানি ওই বিশেষ বেঞ্চেই হোক। চতুর্থত, অভিষেক চাইছেন, বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় যাতে কোনও বিচারাধীন বিষয় নিয়ে প্রকাশ্যে মন্তব্য না করেন, তা নিশ্চিত করতে হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে নির্দেশ দেওয়া হোক। পঞ্চমত, সমস্ত তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে এই পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্ট যা উচিত মনে করবে, তেমনই নির্দেশ দেওয়া হোক বলেও আর্জিতে জানিয়েছিলেন অভিষেক। কিন্তু অভিষেকের আবেদন ফেরত পাঠিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালতের অ্যাসিস্ট্যান্ট রেজিস্ট্রার জানান, অভিষেকের আবেদনের কোনও যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই। ২০২৩ সালের ২৮ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে অভিষেকের মামলাগুলি কলকাতা হাই কোর্টের অন্য বিচারপতিকে দেওয়া হয়েছে। সে কারণেই অভিষেক এখন যে আর্জি জানিয়েছেন, তা আর ‘গ্রহণযোগ্য নয়’।

(বিধিবদ্ধ অনুমতি সংগ্রহ করে ভার্চুয়াল মাধ্যমে আদালতের এই শুনানিতে উপস্থিত ছিল আনন্দবাজার অনলাইন।)

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy