Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Bengal SSC Recruitment Verdict

‘দেশ থেকে কলকাতা হাই কোর্ট তুলে দেওয়া উচিত’, বিজেপির সঙ্গে ‘যোগসূত্র’ দেখিয়ে দাবি অভিষেকের

এসএসসি রায় নিয়ে পুরুলিয়া থেকে কলকাতা হাই কোর্টকে আক্রমণ করেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর অভিযোগ, বিজেপির সঙ্গে বিচারপতিদের ‘যোগসাজশ’ রয়েছে। সেই মতোই রায় দেওয়া হচ্ছে।

তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ১৮:১৮
Share: Save:

কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতিদের সঙ্গে বিজেপির ‘যোগসাজশ’ রয়েছে। তাই দেশ থেকে কলকাতা হাই কোর্ট তুলে দেওয়া উচিত! এসএসসি দুর্নীতি সংক্রান্ত উচ্চ আদালতের রায় নিয়ে এমনই দাবি তুললেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর অভিযোগ, ক্রিকেটে যেমন ‘ম্যাচ ফিক্সিং’ হয়, তেমন বিজেপি ‘কোর্ট ফিক্সিং’ করেছে। তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী হাই কোর্টের বিচারপতিরা একের পর এক রায় দিচ্ছেন। যা দুর্ভাগ্যজনক।

এসএসসি দুর্নীতি মামলায় সোমবার ২০১৬ সালের পুরো নিয়োগপ্রক্রিয়া খারিজ করেছে কলকাতা হাই কোর্ট। তাতে চাকরি গিয়েছে ২৫,৭৫৩ জনের। সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছে রাজ্য সরকার। তাদের যুক্তি, পাঁচ হাজার চাকরিপ্রাপকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। বাকি ২০ হাজারের বেশি মানুষ কেন চাকরি হারাবেন? বৃহস্পতিবার একই যুক্তি দিয়েছেন অভিষেক। হাই কোর্টের এই রায়ের সঙ্গে প্রাক্তন বিচারপতি তথা বিজেপি নেতা অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রসঙ্গ জুড়ে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘‘এসএসসি মামলা যে বিচারপতি শুনছিলেন, তিনি এখন বিজেপির প্রার্থী। তিনি বিচারপতি থাকাকালীন বলেছেন, বিজেপি তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিল এবং তিনিও বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগে ছিলেন। সেই বিচারপতি যদি বিজেপিতে যান, তা হলে তো দেশ থেকে কলকাতা হাই কোর্টটাকেই তুলে দেওয়া উচিত!’’

অভিষেক আরও বলেন, ‘‘আদালত বলছে, কয়েক জন প্যানেলের বাইরে থেকে চাকরি পেয়েছেন, তাই পুরো প্যানেলটাই বাতিল। তা হলে সেই যুক্তি অনুযায়ী এক জন বিচারপতি বিজেপিতে যোগদান করেছেন, অর্থাৎ, সব বিচারপতিই বিজেপি হয়ে গিয়েছেন! আদালতের যুক্তিতে তো তা-ই হচ্ছে।’’

বিজেপির সঙ্গে হাই কোর্টের ‘যোগসূত্র’ বোঝাতে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং ওন্দার বিজেপি বিধায়ক অমরনাথ শাখার মন্তব্যের প্রসঙ্গ টেনেছেন অভিষেক। তিনি বলেন,‘‘দু’দিন আগে শুভেন্দু বলেছিলেন, সপ্তাহের শুরুতেই তিনি বোমা ফাটাবেন। সপ্তাহ শুরু হয় সোমবারে। আর হাই কোর্টের এই রায়ও এসেছে সেই সোমবার। সবটাই কি কাকতালীয়? গতকাল (বুধবার) ওন্দার বিজেপি বিধায়কও বলেছেন, এপ্রিলের ৩০ তারিখের মধ্যে আরও ৫৯ হাজার যোগ্যদের চাকরি যাবে।’’

শুভেন্দুদের ওই ‘ভবিষ্যদ্বাণী’র সঙ্গে ক্রিকেট মাঠের ‘বেটিং’-এর তুলনা টেনেছেন অভিষেক। তিনি বলেন, ‘‘হাই কোর্টের অর্ডারের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বিজেপির স্ট্যাম্প রয়েছে। ক্রিকেটে যেমন ম্যাচ ফিক্সিং হয়, যাঁরা বেটিং করেন, আগে থেকেই বলে দেন পরের বলে ছক্কা হবে না কি উইকেট পড়বে। এ ক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছে। এগুলো আসলে অর্ডার ফিক্সিং! কোর্ট ফিক্সিং! বেটিংয়ে নতুন মাত্রা যোগ করছে কলকাতা হাই কোর্টের একাংশ। বিজেপি বেটিং করছে। তার দোসর হচ্ছেন বিচারের আসনে থাকা বিচারপতিরা। মানুষ এর জবাব দেবে।’’

চাকরিহারাদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন অভিষেক। বলেছেন, তাঁর দল যথাসম্ভব তাঁদের সাহায্য করবে। কোনও যোগ্য শিক্ষক, অশিক্ষক কর্মীকে চাকরি হারাতে দেবে না তৃণমূল।

উল্লেখ্য, আদালতের রায়ের পর বিচারপতিদের ‘নিরপেক্ষতা’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। বুধবার পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রামের সভা থেকে তিনি বিজেপিকে কটাক্ষ করে বলেন, ‘‘হাই কোর্ট টাকা দিয়ে কিনে নিয়েছে বিজেপি। সুপ্রিম কোর্টের কথা আমি বলছি না। সেখানে এখনও আমরা বিচারপ্রার্থী। কিন্তু হাই কোর্টে বিজেপি চাইলেই শুধু বিচার হয়। ওরা যা চায়, হয়ে যায়। আর কেউ বিচার পায় না।’’ তাঁর মন্তব্যের বিরোধিতা করে ইতিমধ্যে হাই কোর্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। আদালতের কাছে এ বিষয়ে স্বতঃপ্রণোদিত পদক্ষেপের আবেদন জানিয়েছেন তিনি। প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানমের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ সেই আবেদন গ্রহণ করেছে। তার মাঝেই হাই কোর্টের দিকে আঙুল তুললেন অভিষেকও।

অভিষেকের মন্তব্য প্রসঙ্গে বিজেপি বিধায়ক মিহির গোস্বামী বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী, তাঁর ভাইপো এবং তৃণমূলের নেতারা যে ভাবে বার বার কলকাতা হাই কোর্টের অবমাননা করছেন, তা সংবিধানের পক্ষে ভয়ঙ্কর। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবং শাসকদল বার বার এ ভাবে আদালতকে আক্রমণ করলে জনমানসে ভাল বার্তা যায় না। আদালতের কাছে আমাদের অনুরোধ, তারা স্বতঃপ্রণোদিত মামলা করে আদালতের এই অবমাননাকারীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করুক।’’

(আনন্দবাজার অনলাইন দেশের সমস্ত বিচারালয়, বিচারপতি এবং বিচারব্যবস্থার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। এই খবরে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যে বক্তব্য প্রকাশিত হয়েছে, তা তাঁদের নিজস্ব অভিমত। তার দায় আনন্দবাজার অনলাইনের নয়)

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy