শুক্রবার সন্ধ্যায় নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে সমর্থকদের মাঝে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।
দলের দিল্লি কর্মসূচির জন্য বিশেষ ট্রেনের আবেদন করেছিল তৃণমূল। কিন্তু রেলের তরফে জানানো হয়েছে, ওই বিশেষ ট্রেন দেওয়া সম্ভব নয়। শুক্রবার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় রেলের ইমেল দেখিয়ে জানান, টাকা জমা নিয়ে শেষ মুহূর্তে ট্রেন দেবে না বলে জানিয়েছে রেল। তবে তৃণমূলকে এ ভাবে রুখে দেওয়া যাবে না। অভিষেক বলেন, ‘‘ট্রেন বাতিল করে আমাদের আটকানো যাবে না। আমরা বিকল্প ব্যবস্থা করে নেব। বাংলার বঞ্চিত মানুষের কণ্ঠস্বর দিল্লিতে পৌঁছবেই।’’
শুক্রবার সন্ধ্যায় নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে গিয়েছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। এখানেই থাকছেন তৃণমূলের দিল্লি কর্মসূচিতে যোগদানকারী বাংলার ‘জব কার্ড হোল্ডার’রা। প্রাপ্য টাকার দাবিতে তাঁদের নিয়েই আগামী ২ এবং ৩ অক্টোবর দিল্লিতে ধর্না কর্মসূচি করার কথা তৃণমূলের। যদিও শুক্রবার সন্ধ্যাতেই জানা গিয়েছে, যে ট্রেনে করে তৃণমূল এই ‘জব কার্ড হোল্ডার’দের দিল্লি নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিল, সেই ট্রেন দেওয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে রেল। এর পরেই অভিষেক আসেন নেতাজি ইন্ডোরে। সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, ‘‘প্রতিহিংসা পরায়ণ নরেন্দ্র মোদী সরকার বাংলার বঞ্চিত এবং গরিব মানুষদের দিল্লি যেতে দিতে চায় না। সে জন্যই ওই ট্রেনের অনুমোদন দেয়নি রেল।’’ একই সঙ্গে অভিষেক প্রশ্ন তোলেন, ‘‘রেল যদি অনুমোদন না-ই দেবে, তবে গত ২৩ সেপ্টেম্বর আবেদন জমা দেওয়ার পর সিকিয়োরিটি ডিপোজিট হিসাবে টাকা জমা নিয়েছিল কেন?’’
তৃণমূল সূত্রে খবর, গত ২৩ সেপ্টেম্বর আইআরসিটিসির মাধ্যমে ৫০ লাখ টাকা ভাড়া এবং ১১ লাখ টাকা সিকিয়োরিটি ডিপোজিট দিয়ে বিশেষ ট্রেনের আবেদন করেছিল তৃণমূল নেতৃত্ব। প্যান্ট্রি-সহ ২০টি স্লিপার বগির আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু শুক্রবার সন্ধ্যায় জানা যায়, পূর্ব রেল এমন কোনও বিশেষ ট্রেন দিচ্ছে না। পূর্ব রেলের পক্ষে একটি চিঠি দেওয়া হয় ভারতীয় রেলের অধীনে ইন্ডিয়ান রেলওয়ে কেটারিং অ্যান্ড ট্যুরিজ়ম কর্পোরেশন লিমিটেড (আইআরসিটিসি)-কে। সেই চিঠিতেই রেল জানায়, আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর যে ধরনের সুযোগ সুবিধা চেয়ে আইআরসিটিসি ট্রেন চেয়েছে তা এই মুহূর্তে দেওয়া সম্ভব নয়। অভিষেক সেই চিঠির উল্লেখ করেই বলেছেন, ‘‘২৩ তারিখে বুকিংয়ের আবেদন করা হয়েছিল। আর শনিবার অর্থাৎ ৩০ সেপ্টেম্বর ওই ট্রেনে রওনা হওয়ার কথা ছিল আমাদের। রেল তার জন্য টাকাও জমা নিয়েছিল। কিন্তু টাকা জমা নিয়েও শেষ মুহূর্তে ২৯ তারিখ বিকেলে ওরা জানাচ্ছে ওই ট্রেন দেওয়া সম্ভব নয়।’’
সাংবাদিকদের সামনে আইআরসিটিসির চিঠি দেখিয়ে অভিষেক বলেন, ‘‘এখানে স্পষ্ট লেখা আছে, টাকা ফেরত দেওয়া হবে। টাকা নিয়েছিল বলেই তো ফেরত দেবে। আজ যাঁরা দিল্লি যাওয়ার জন্য এই নেতাজি ইন্ডোরে এসে থাকছেন, তাদের অধিকাংশই মহিলা। ৯০ শতাংশ মহিলা কাঁধে কোলে বাচ্চা নিয়ে এখানে এসেছেন। অপেক্ষা করছেন দিল্লিতে গিয়ে নিজেদের অধিকারের কথা বলবেন বলে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে তাদের জানানো হল ট্রেন দেওয়া হবে না। কিন্তুু কোনও শক্তিই আমাদের আটকাতে পারবে না। ট্রেন না দিলেও এই গরিব মানুষদের আটকে রাখা যাবে না। আমরা বিকল্প ব্যবস্থা করব।’’
ইতিমধ্যেই দিল্লিতে তৃণমূলের ধর্না কর্মসূচির সময়ে অভিষেককে ইডির দফতরে হাজিরা দেওয়ার সমন পাঠানো হয়েছে। যা নিয়ে অভিষেক বলেছিলেন, দিল্লি ভয় পেয়েছে বলেই তৃণমূলের কর্মসূচিকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছে। যে হেতু ওই কর্মসূচির বিভিন্ন পর্যায়ের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন অভিষেক, সে জন্যই তাকে ডেকে পাঠিয়ে তৃণমূলের দিল্লি কর্মসূচিকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। শুক্রবার তৃণমূলের দিল্লি কর্মসূচির ট্রেনের অনুমোদনও না মেলায় অভিষেক কেন্দ্রের মোদী সরকারকে সরাসরি আক্রমণ করেছেন। তৃণমূল সাংসদ বলেছেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী মোদী এক দিন অন্তর সবুজ পতাকা নাড়িয়ে ট্রেন উদ্বোধন করছেন। বড়লোকদের জন্য ট্রেন করা হচ্ছে অথচ সেই ট্রেনে দেশের গরিব মানুষের ওঠার অধিকার নেই।’’
কেন্দ্রকে তোপ দেগে অভিষেকের প্রশ্ন, ‘‘কিসের এত ভয়?’’ কেন্দ্র কী কী ভাবে তৃণমূলের দিল্লি অভিযানকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছে, তার ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, ‘‘ আমরা রামলীলা ময়দানে বিক্ষোভ দেখানোর কথা বলেছিলাম ওরা অনুমতি দেয়নি। কৃষি ভবনের সামনে অবস্থান বিক্ষোভের অনুমতি চেয়েছিলাম, দেয়নি। তার উপর যে দিন অবস্থান বিক্ষোভ করার কথা সেই ৩ তারিখেই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে দিয়ে ডেকে পাঠানো হয়েছে আমাকে। আর এ বার ট্রেনের অনুমোদনও দেওয়া হল না।’’ অভিষেকের প্রশ্ন, ভয় পেয়েই কি একের পর এক বাধা সৃষ্টি করছে কেন্দ্রের মোদী সরকার?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy