বুধবার ডায়মন্ড হারবারের সভায় শোভন-বৈশাখী। —নিজস্ব চিত্র।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নন, তৃণমূল আসলে চালাচ্ছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিষেকের খাসতালুক ডায়মন্ড হারবারে দাঁড়িয়ে এই ভাবেই তৃণমূলের বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল সুপ্রিমো মমতার নামোল্লেখ না করে শোভনের দাবি, ‘‘তৃণমূল কংগ্রেস আপনার কথা শুনে চলে না। এখন ড্রাইভার ভাইপো। দল চালাচ্ছে ভাইপো।’’
অভিষেককে তৃণমূলের আসল নিয়ন্ত্রক আখ্যা দিয়ে তাঁকেও কটাক্ষ করতে ছাড়েননি বিজেপি-র কলকাতা জোনের পর্যবেক্ষক শোভন। অভিষেকের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘৩৪ বছর সিপিএম পারেনি। তুমি তো বাচ্চা ছেলে, গাল টিপলে দুধ বেরোয়। তুমিও পারবে না।’’
বুধবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মন্ড হারবার পুরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের মাধবপুরের আবর্তন ক্লাবের মাঠে জনসভা এবং শীতবস্ত্র বিতরণের আয়োজন করে বিজেপি। ওই সভাতে উপস্থিত হয়ে তৃণমূলকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেন শোভন-বৈশাখী জুটি। ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ অভিষেকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগও করেন শোভন। তিনি বলেন, ‘‘গরু চুরি, কয়লা চুরির মামলায় সিবিআই যাকে খুঁজছে, তাঁর কাছ থেকে আমার সার্টিফিকেট নিতে হবে না।’’
অভিষেকের পাশাপাশি শোভন-বৈশাখীর আক্রমণের নিশানায় ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। শোভন বলেন, ‘‘আপনার বাড়িতে ভাইপো থাকতে পারে। আপনারা দেখেছেন গাড়িতে পিছনে লেখা থাকে, ‘বন্ধুত্ব বাড়িতে, গাড়িতে নয়’। আমি ইস্তফা দিয়ে বলেছিলাম, আর তৃণমূলের হয়ে কাজ করব না।’’
কখনও নাম করে, কখনও বা আবার নাম না করে তৃণমূল সুপ্রিমো এবং অভিষেককে কটাক্ষ করার পাশাপাশি দলের আর এক নেতা কুণাল ঘোষকেও খোঁচা দিতে ছাড়েননি শোভন। তাঁর দাবি, ‘‘সুদীপ্ত সেনের থেকে সারদা চিটফান্ডের টাকা যদি কেউ নিয়ে থাকে, তাকে গ্রেফতার করার কথা বলেছিল কুণাল ঘোষ। গাড়িতে তোলার সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করতে বলেছিলেন কুণাল। সে এখন দলের মুখপাত্র হয়ে টিভিতে মুখ দেখাচ্ছে। লজ্জা হওয়া উচিত! সারদার টাকায় আ্যম্বুল্যান্স এবং ১০০টা মোটরসাইকেল উদ্বোধন করেছিলেন। সেই আ্যম্বুল্যান্স এবং মোটরসাইকেল কোথায় গিয়েছিল?’’
সভামঞ্চ থেকে শোভনের অভিযোগ, ডায়মন্ড হারবারে তাঁদের দল বিজেপি-কে সভা করতে দেওয়া হয় না। এ নিয়ে পুলিশ-প্রশাসনের বিরুদ্ধেও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শোভন। আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি-ই ক্ষমতা দখল করবে বলেও চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন তিনি। প্রশাসনের উদ্দেশে শোভনের মন্তব্য, ‘‘এসপি, আপনি জেনে রাখুন, তিন মাস পর আপনার অফিসের সামনে আমরা সভা করব।’’
ডায়মন্ড হারবারের সভা থেকে শোভনের মতোই তৃণমূল সুপ্রিমোকে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ও। মমতার বিরুদ্ধে সরাসরি আক্রমণ শানিয়ে বিজেপি-র কলকাতা জোনের সহ-পর্যবেক্ষক বৈশাখী বলেন, ‘‘ভাইপোকে নিয়ে আমরা ব্যস্ত। কিন্তু পিসিকে নিয়ে বলছি না কেন? আমাদের শুভেন্দুকে মঞ্চ থেকে তুইতোকারি করে আক্রমণ করেন তিনি। এত স্পর্ধা আসছে কোথা থেকে? কারণ পিসি তো মঞ্চ থেকে তুইতোকারি করেন।’’ এর পর নাম না করে অভিষেককেও আক্রমণ করেন বৈশাখী। তিনি আরও বলেন, ‘‘লোকসভার ১৮টা সিটে রসগোল্লা পেয়েছেন। ডায়মন্ড হারবারে ভোট দিতে দেননি। ভোট দিতে দিলে ফলাফল বোঝা যাবে। ভোট দিতে পারলে তোমাকে থাপ্পড় মেরে বার করে দেবে বাংলার জনতা। যে দিন মানুষ ভোট দিতে পারবে, সে দিন বিদেশে তুমি কোথায় পালাবে, ঠিক করে রাখো।’’
তবে বুধবারের এই সভায় শোভন-বৈশাখীর মন্তব্যের পর বিজেপি-কে পাল্টা আক্রমণ করেছে তৃণমূলও। ডায়মন্ড হারবারের যুব তৃণমূল নেতা গৌতম অধিকারী বলেন, ‘‘মুখে বড় বড় কথা বলা বলছে বিজেপি। কাজের বেলায় লবডঙ্কা। বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলিতে মানুষ আক্রান্ত। ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন মহিলারা।’’
গৌতমের দাবি, এ রাজ্যে তৃণমূলের শাসনে প্রভূত উন্নয়ন হয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্দেশে বাংলার দিকে দিকে উন্নয়ন হয়েছে। আর দাঙ্গাবাজ বিজেপি মিথ্যে কথা বলে অপপ্রচার করতে চাইছে। এক সময়কার পরিচিত দাদারা এখন গুন্ডা আর মৌলবাদীদের দলে নাম লিখিয়েছে। তৃণমূল মানুষের জন্য কাজ করে। বাংলার জনতা সব জানেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy