অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
রাজ্য জুড়ে ৪২টি কেন্দ্রে নয়, লোকসভা ভোটে নিজের যুদ্ধক্ষেত্র তিনি সীমাবদ্ধ রাখতে চান একটি কেন্দ্রেই। নিজের ডায়মন্ড হারবারে। ঘনিষ্ঠদের তেমনই বার্তা দিয়ে দিলেন তৃণমূলের ‘সেনাপতি’ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
পুজোর আগে অভিষেক কেন্দ্র বিরোধী যে আন্দোলনের ঝাঁজ দেখিয়েছিলেন, পুজোর পর থেকে তা যেন অনেকটাই মিইয়ে গিয়েছে। ‘সেনাপতি’ কেন দূরে দূরে সরে থাকছেন তা নিয়ে দলের মধ্যেই আলোচনা চলছিল। শনিবার অভিষেক-ঘনিষ্ঠ নেতারা তাঁর সঙ্গে বৈঠক করে তাঁকে ‘সক্রিয়’ হওয়ার আর্জি জানিয়েছিলেন। সূত্রের খবর, অভিষেক সেই নেতাদের স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, লোকসভা ভোটে তিনি শুধু ডায়মন্ড হারবারেই নিজেকে সক্রিয় রাখতে চান। নীতি নির্ধারণ বা সাংগঠনিক কাজ আগের মতো দেখার ক্ষেত্রে তাঁর ‘অপারগতা’ রয়েছে। জানা গিয়েছে, বিনয়ের সঙ্গেই ঘনিষ্ঠদের আর্জি তিনি ফিরিয়ে দিয়েছেন।
শনিবার অভিষেকের কালীঘাটের অফিসে বৈঠকে বসেন কুণাল ঘোষ, পার্থ ভৌমিক, নারায়ণ গোস্বামী, ব্রাত্য বসু ও তাপস রায়। জানা গিয়েছে, তাঁরাই অভিষেককে ‘সেনাপতি’র ভূমিকায় নামার অনুরোধ করেছিলেন। সূত্রের খবর, অভিষেক তাঁর ঘনিষ্ঠ নেতাদের জানিয়েছেন, তিনি লোকসভা ভোটে কেবল ডায়মন্ড হারবারেই থাকবেন। দল জনসভা দিলে তাতে অংশ নেবেন। কিন্তু সেই দিন যদি ডায়মন্ড হারবারে পূর্বনির্ধারিত কোনও কর্মসূচি থাকে, তা হলে তিনি সেই জনসভা করতে যাবেন না।
তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘনিষ্ঠ নেতাদের সামনে আরও কিছু কথা বলেছেন অভিষেক। যার মধ্যে অন্যতম, তিনি ১০০ দিনের কাজের বকেয়া টাকা নিয়ে আন্দোলনকে যে মাত্রায় নিয়ে গিয়েছিলেন, তার পর তাঁকে থামিয়ে দেওয়া হয়। তা ছাড়া সরকারি বেশ কিছু আমলার ভূমিকা নিয়েও অভিষেক ‘ক্ষুব্ধ’। সামগ্রিক পরিস্থিতিতে অন্তত লোকসভা ভোটে তিনি আর সেই সেনাপতির ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন অভিষেক।
১০০ দিনের কাজ, আবাস যোজনা-সহ বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পের বকেয়া নিয়ে আন্দোলন দিল্লি পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছিলেন অভিষেক। গত অক্টোবরে দিল্লিতে ধুন্ধুমার আন্দোলনের পর কলকাতায় ফিরে তা নিয়ে আরও পারদ চড়ান তিনি। রাজভবনের উত্তর-ফটকের সামনে টানা ধর্নায় বসেছিলেন। যার মধ্যে অনেকেই মমতার আন্দোলন-মডেল দেখতে পেয়েছিলেন। রাজ্যপাল যত ক্ষণ না কলকাতায ফিরে তৃণমূলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে দেখা করেছেন, তত ক্ষণ পর্যন্ত ধর্না তোলেননি ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ। এমনও বলেছিলেন, গোটা পুজো তিনি রাস্তায় কাটাবেন, কিন্তু বাংলার মানুষের হকের পাওনা আদায় করেই ছাড়বেন। কিন্তু মমতা এবং দলের বর্ষীয়ান নেতাদের অনুরোধে সেই দফায় ধর্না তুললেও অভিষেক রেড ক্রস প্লেসের মঞ্চ থেকেই ঘোষণা করেছিলেন, কেন্দ্র দাবি না মানলে নভেম্বরে ফের ‘দিল্লি চলো’ হবে। যার নেতৃত্ব দেবেন মমতা। কিন্তু তা হয়নি। শেষমেশ ডিসেম্বরের ২০ তারিখে মমতার নেতৃত্বে তৃণমূলের সাংসদেরা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা করেন। সেই দলে অভিষেকও ছিলেন।
সূত্রের খবর, অভিষেক শনিবারের বৈঠকে এই আন্দোলনের রাস্তা থেকে সরে আসা বা তাঁকে সরিয়ে দেওয়া নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেন। তাঁর এক ঘনিষ্ঠ সূত্রে বলা হয়েছে, অভিষেক বলেছেন, তাঁর পরিকল্পনা ছিল নভেম্বরে ফের দিল্লি গিয়ে আন্দোলন করা। কেন্দ্র দাবি না মানলে বাংলায় ফিরে গ্রামে গ্রামে যাত্রা করা। তার পর ব্রিগেডে মহাসমাবেশ করে লোকসভা ভোটের দিকে যাওয়া। কিন্তু সে সব হয়নি। তা ছাড়া, সরকারি আমলাদের একাংশের কাজ মানুষের সামনে মুখ্যমন্ত্রী মমতার ভাবমূর্তিকে নষ্ট করছে বলে অভিষেক ঘনিষ্ঠদের বলেছেন। অভিষেক যে মনোভাব দেখিয়েছেন তার নির্যাস এই যে, যে কথা তিনি দিয়েছেন, তা যদি রাখতে না পারেন, তা হলে মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা কী করে থাকবে! তাই তিনি ডায়মন্ড হারবারেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখতে চান। প্রসঙ্গত, শনিবারই অভিষেক ঘোষণা করেছেন ৭ জানুয়ারি থেকে তাঁর লোকসভা কেন্দ্রের এক লক্ষ মানুষকে বার্ধক্যভাতা দেওয়া হবে। উল্লেখ্য, এই বার্ধক্যভাতার টাকা সাংসদ হিসাবে অভিষেক নিজেই বন্দোবস্ত করছেন। এর সঙ্গে রাজ্য সরকারের প্রকল্পের কোনও সম্পর্ক নেই।
প্রসঙ্গত, গত ২৪ নভেম্বর নেতাজি ইন্ডোরে তৃণমূলের বিশেষ অধিবেশনে অভিষেকের সশরীরে না যাওয়া, কয়েক মিনিটের জন্য ভার্চুয়াল উপস্থিতি (চোখের কারণে) নিয়ে তৃণমূলের মধ্যেই নানাবিধ কথা চলছিল। দলের সর্বোচ্চ অংশে মতানৈক্য হচ্ছে বলেও মনে করছিলেন রাজনৈতিক মহলের অনেকে। কিন্তু বছরের শেষে এসে তা নজিরবিহীন জায়গায় পৌঁছল বলেই মনে করছেন অনেকে। তাঁর ঘনিষ্ঠেরা জট কাটানোর উদ্যোগ নিয়েছিলেন, কিন্তু তা শনিবার পর্যন্ত পেকেই রইল। তবে এ-ও ঠিক, রাজনীতি সদা পরিবর্তনশীল। বছর শেষে যে জট খুলল না তা যে নতুন বছরেও একই জায়গায় থাকবে, তা বলা যায় না। তবে তৃণমূলের অভ্যন্তরে নানাবিধ কারণে যে মন্থন শুরু হয়েছিল, তা এখন চলবে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক মহলের অনেকে।
উল্লেখ্য, শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রী রুটিন চেক আপ করাতে এসএসকেএম হাসপাতালে গিয়েছিলেন। কিন্তু প্রয়োজন বুঝে চিকিৎসকেরা তাঁর ডান কাঁধে একটি ছোট্ট অস্ত্রোপচার করেন। এ দিন অভিষেক মমতাকে দেখতে তাঁর বাড়ি গিয়েছিলেন বলে খবর। বর্তমানে মুখ্যমন্ত্রী তাঁর যাবতীয় কাজ বাড়ি থেকেই সম্পন্ন করছেন বলে জানা গিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy