ইডি দফতর থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।
সকাল সাড়ে ১১টা থেকে টানা পৌনে ন’ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ইডি দফতর থেকে বেরোলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বেরনোর পর দীর্ঘ সাংবাদিক বৈঠক করে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার দিকে। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে শুনিয়ে রাখলেন হঁশিয়ারি। ইডিকে তৃণমূলের ‘সেনাপতি’ অভিষেকের চ্যালেঞ্জ, পারলে তাঁর বয়ান তারা আদালতে পেশ করুক। আর শুভেন্দুর উদ্দেশে ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ সরাসরি গ্রেফতারের হুঁশায়ারি দিয়ে রাখলেন। ইডি, সিবিআই-সহ কেন্দ্রীয় বিভিন্ন তদন্তকারী সংস্থার ভূমিকা নিয়ে ‘ফেলুদা’ এবং ‘জটায়ূ’ প্রসঙ্গও টানলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক।
এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডল থেকে গত রবিবার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, তাঁকে সমন পাঠিয়ে ইডি ডেকে পাঠিয়েছে। যে দিন হাজিরা দিতে হবে, সেই দিনই অর্থাৎ বুধবার দিল্লিতে বিজেপি-বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র সমন্বয় কমিটির বৈঠক রয়েছে। মঙ্গলবার রাজ্যের দুই মন্ত্রী শশী পাঁজা ও পার্থ ভৌমিক স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন, বুধবার ইডি দফতরে যাবেন অভিষেক। সেই মতো বুধবার বেলা ১১টা ৩৪ মিনিটে অভিষেক ইডি দফতরে পৌঁছন। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সেখান থেকে বেরোন রাত পৌনে ৯টা নাগাদ।
এই জিজ্ঞাসাবাদের নির্যাস কী? ইডিকে সিবিআইয়ের থেকেও কম নম্বর দিয়ে অভিষেক বলেছেন, “তদন্তকারী অফিসারদের আমি কোনও দোষ দিচ্ছি না। ওঁরা ওঁদের কাজ করছেন। আগের দিন বলেছিলাম, ৮ ঘণ্টা জেরার নির্যাস হল শূন্য। আজ বলছি, ৯ ঘণ্টা জেরার নির্যাস হল মাইনাস টু। এর পরের দিন ডাকলে মাইনাস ফোর হয়ে যাবে।”
বুধবার ফের এক বার কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করার অভিযোগ তুলেছেন অভিষেক। তাঁর কথায়, ‘‘আমাকে ডাকা এখন প্রচলিত প্রথা হয়ে গিয়েছে। আবার দু’মাস বাদে ডাকতে পারে। আমাকে ও আমার স্ত্রীকে দু’বছরে নয় বার ডেকেছে। কী প্রমাণ করতে পেরেছে? কিচ্ছু না। ইডির কাছে দাবি করছি, আজ ওদের যা বলেছি তা যেন বৃহস্পতিবার হাইকোর্টে হুবহু পেশ করে। কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে এটা আমার চ্যালেঞ্জ রইল।”
অভিষেকের ‘ফেলুদা-জটায়ূ’ তত্ত্ব
বুধবার জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ইডি দফতর থেকে বেরিয়ে অভিষেক বলেন, ‘‘জটায়ূ তাঁর বন্ধু ফেলুদাকে প্রশ্ন করেছিলেন, একই জিনিস আমরা এক ভাবে দেখছি , আর আপনি অন্য ভাবে দেখছেন, সেটা কী করে হয়? জবাবে ফেলুদা বলেছিলেন, আপনার আর আমার মধ্যে তফাত শুধু দৃষ্টিভঙ্গির। আপনারা আগে অপরাধী ঠিক করে নেন। পরে অপরাধ খোঁজেন। কিন্তু আমি আগে অপরাধ খুঁজি তার পর অপরাধীকে চিহ্নিত করি। ইডি-ও এখানে জটায়ূর মতোই আগে অপরাধী ঠিক করে নিচ্ছে। আগে অপরাধ খুঁজছে না। হয়তো তাই তারা অপরাধের গভীরে পৌঁছতে পারছে না।’’
সারদা-নারদ তদন্তের কী হল? প্রশ্ন অভিষেকের
কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা যে যে তদন্তগুলি করছে সেগুলি এখন কোথায় দাঁড়িয়ে বুধবার সেই প্রশ্ন তুলেছেন অভিষেক। তাঁর কথায়, ‘‘৮ বছর ধরে সারদা মামলার তদন্ত হচ্ছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কী হয়েছে? গত ১৪ মাস ধরে জেল হেফাজতে রয়েছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর বিরুদ্ধে কী প্রমাণ হয়েছে? আসলে ইডি-সিবিআই যে ভাবে ডাকাডাকি করছে তা একটা প্রথা হয়ে গিয়েছে। ভোট আসলে ডাকাডাকি করবে। আবার থেমে যাবে। এই ক’দিন আগে ধূপগুড়িতে বিজেপি হেরেছে, লোকসভা ভোট আসছে, তাই ডাকাডাকি করছে। কিন্তু ইডি-সিবিআইয়ের তদন্তে কেউ ন্যায় বিচার পেয়েছেন, তা বলতে পারবেন না। সারদা, রোজভ্যালিকাণ্ডে যাঁদের টাকা মার গিয়েছে, তারা তো এখনও বিচার পাননি। আর যাঁরা টিভি ক্যামেরায় টাকা নিয়েছেন, তাঁরা বিজেপিতে যোগ দিলেও সাত খুন মাফ।’’ শুধু তাই নয়, ম্যাথু স্যামুয়েলকে ইডির তলবকে ‘বাজার গরম করা’ বলে কটাক্ষ করেছেন অভিষেক।
লিপ্স অ্যান্ড বাউন্ডস নিয়ে অভিষেক
তাঁর সংস্থা লিপ্স অ্যান্ড বাউন্ডসের নাম জড়িয়েছে নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্ত সূত্রে। সেই প্রসঙ্গে অভিষেক বলেন, “হ্যাঁ, আমি এখনও লিপ্স অ্যান্ড বাউন্সের সিইও। শিক্ষা দুর্নীতির ১০ পয়সা ওই কোম্পানিতে ঢুকেছে, তা ইডি প্রমাণ করুক। চ্যালেঞ্জ করছি, কোনও দুর্নীতি প্রমাণ করতে পারবে না সেন্ট্রাল এজেন্সি।”
‘নারদে গ্রেফতার শুরু হোক শুভেন্দুকে দিয়ে’
কেন্দ্রে সরকার বদল হলে শুভেন্দু অধিকারী গ্রেফতার হবেন, এমন হুঁশিয়ারিই দিয়েছেন অভিষেক। তাঁর কথায়, ‘‘টেলিভিশনে টাকা নিতে দেখা গিয়েছে। অথচ কোনও বিচারপতি বলেননি, ওঁকে ডেকে পাঠাও। আমি বলব, যাঁরা নারদে অভিযুক্ত, তাঁদের সবাইকে গ্রেফতার করুন। শুরুটা হোক শুভেন্দু অধিকারীকে দিয়ে। আমি বলে দিচ্ছি, এর পর এনডিএ সরকার গিয়ে ‘ইন্ডিয়া’ ক্ষমতায় আসবে। তখন গ্রেফতার হবেন শুভেন্দু।’’
বিজেপি ও শুভেন্দুকে ধূপগুড়ি খোঁচা
বিজেপি তাদের ধূপগুড়ি হারের জ্বালা মেটাতেই তাঁকে সিজিও কমপ্লেক্সে ডেকে পাঠিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন অভিষেক। তাঁর মতে, সেই জন্যই অন্য কোনও দিন তাঁকে ডেকে না পাঠিয়ে বেছে বেছে বুধবার বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র সমন্বয় কমিটির বৈঠকের দিনই ডেকে পাঠিয়েছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি। অভিষেক বলেন, ‘‘কিন্তু এ ভাবে আমাকে ইডি দিয়ে ডেকে পাঠিয়ে ধূপগুড়ি পুনরুদ্ধার হবে না।’’ তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, শুভেন্দু বলেছেন, তাঁর ভাইকে জেরা করার নামে হেনস্থা করা হচ্ছে। অভিষেকের জেরা প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, “এখন দেখ কেমন লাগে!” শুনে অভিষেক বললেন, ‘‘আমিও ধূপগুড়ির রেজাল্ট নিয়ে বলছি দেখ কেমন লাগে? কিন্তু তফাতটা হল আমি ইডির মতো কোনও কেন্দ্রীয় সংস্থাকে ব্যবহার করে এ কথা বলছি না। আমি রাজনৈতিক ভাবে জিতে এ কথা বলছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy