গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।
রবিবার ২১ জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে দলের কর্মীদের ‘সংযত’ হওয়ার বার্তা দিলেন তৃণমূলের সেনাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূলের কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বললেন, ‘‘আমাদের শৃঙ্খলাপরায়ণ হতে হবে। সংযত হতে হবে। কারণ, মানুষ ওই সমস্ত কর্মীর উপর ভরসা করেই ভোটটা তৃণমূলকে দিয়েছেন। তাঁরা কিন্তু বিজেপির প্রতিনিধিদের বেছে ভোট নেননি।’’
দলীয় সংগঠনের কাজ থেকে ‘ছোট বিরতি’ নিয়েছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক। চোখের চিকিৎসার জন্য ওই সময়ে বিদেশে গিয়েছিলেন তিনি। প্রায় দেড় মাস তিনি সংগঠন থেকে দূরে ছিলেন। ঘটনাচক্রে, ওই দেড় মাসেই রাজ্যের কয়েকজন নীচু স্তরের তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে এলাকায় ‘দাদাগিরি’ অভিযোগ প্রকাশ্যে এসেছে। নিজ নিজ এলাকায় জেসিবি (তাজিমুল ইসলাম), জয়ন্ত সিংহ, জামালউদ্দিন সর্দারদের নিজস্ব আদালতে ‘বিচার’ এবং ‘শাস্তি’ দেওয়ার বহরে বিরক্ত তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব। অনেকে অভিযুক্তদের পাল্টা মারের ‘নিদান’ও দিয়েছেন। তিন জনকেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এই পরিস্থিতিতেই রবিবার দলের কর্মীদের ‘সংযত’ হওয়ার বার্তা দিয়েছেন অভিষেক।
২১ জুলাইয়ের সমাবেশে অভিষেক বলেছেন, ‘‘আমাদের শৃঙ্খলাপরায়ণ হতে হবে। তৃণমূলের কর্মীরাই তৃণমূলের শক্তি। আমাদের কর্মীদের সংযত হতে হবে। কোনও রকম বাগ্বিতণ্ডায় জড়াবেন না।’’ কেন সংযমের বার্তা? সেনাপতি অভিষেক তার কারণও ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘মনে রাখবেন, মানুষ কিন্তু বিজেপিকে ভোট দিয়ে জেতায়নি। মানুষ ভোট দিয়ে জিতিয়েছেন আপনাদের। তার কারণ, আপনার পাড়া, আপনার এলাকার মানুষ আপনার মুখের দিকে তাকিয়ে তৃণমূলে আস্থা রেখেছে এবং বিশ্বাস করেছে। তাঁরা কিন্তু বিজেপির প্রতিনিধিদের বেছে নেননি। তাই আমাদের সংযত থাকতে হবে।’’ নাম না করলেও তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের একাংশ মনে করছেন, তাঁর অনুপস্থিতিতে বিভিন্ন জেলায় নীচু স্তরের তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ প্রকাশ্যে এসেছে, সে ব্যাপারেই ২১ জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে বার্তা দিয়েছেন অভিষেক।
উল্লেখ্য, গত ৪ জুন লোকসভা ভোটের ফলপ্রকাশের কিছু দিন পরে সংগঠন থেকে ‘ছোট বিরতি’ নেওয়ার ঘোষণা করেন অভিষেক। তার কয়েক সপ্তাহ পরেই উত্তর দিনাজপুরের চোপড়ায় তৃণমূল নেতা তাজিমুল ইসলাম ওরফে ‘জেসিবি’র একটি সালিশি সভার ভিডিয়ো (আনন্দবাজার অনলাইন ওই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি) প্রকাশ্যে আসে। যেখানে তাঁকে এক যুগলকে মাটিতে ফেলে যথেচ্ছ মারধর করতে দেখা যায়। তার কয়েক সপ্তাহ আগে কোচবিহারে এক মহিলাকে বিবস্ত্র করে মারধরের ঘটনাতেও বিরোধীরা অভিযোগ আনে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। এর পরে একে একে আড়িয়াদহের তৃণমূল নেতা জয়ন্তের কয়েকটি ভিডিয়ো (ওই ভিডিয়োগুলিরও সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন) এবং সোনারপুরের তৃণমূল নেতা জামালউদ্দিনের ‘শাস্তি’র খবর প্রকাশ্যে আসে। জয়ন্ত এবং তার সাঙ্গপাঙ্গদের বিরুদ্ধে আড়িয়াদহের তালতলা ক্লাবে এক ব্যক্তিকে হাত-পা ধরে চ্যাংদোলা করে ঝুলিয়ে কোমরে লাঠির বাড়ি মারার দৃশ্য ভিডিয়োতে ধরা পড়ে। মোবাইল চুরির অভিযোগে এক কিশোরের যৌনাঙ্গ সাঁড়াশি দিয়ে টেনে ‘শাস্তি’ দেওয়ার ভিডিয়োও ভাইরাল হয়। দু’টি ক্ষেত্রেই অভিযোগ ওঠে জয়ন্তের বিরুদ্ধে। অন্য দিকে, জামালের বিরুদ্ধে এক মহিলা শিকল দিয়ে তাঁকে বেঁধে রেখে মারধরের অভিযোগ আনেন। ইতিমধ্যেই জেসিবি, জয়ন্ত এবং জামালকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। জামালকে গ্রেফাতর করা হয়েছে দিনদুয়েক আগে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy