অমিত শাহকে জবাব অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
বাংলায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং ‘অপরাধ’ নিয়ে শনিবার এক সাক্ষাৎকারে মুখ খুলেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এ নিয়ে ওই দিন সন্ধ্যা থেকেই তৃণমূলের তরফে ছোটখাট প্রতিক্রিয়া আসতে শুরু করেছিল। তবে বিষয়টিকে ছোটখাট হিসাবে যে তৃণমূল দেখছে না, তা স্পষ্ট হয়ে গেল রবিবার, দলের প্রায় সর্বোচ্চ স্তর থেকে প্রতিক্রিয়া আসায়। অমিত শাহকে জবাব দিতে সামনে এলেন খোদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। টুইটারে ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো (এনসিআরবি)-এর ২০১৮-র তথ্য তুলে ধরেছেন অভিষেক। ওই সময়ে বিহার, ঝাড়খণ্ড ও মহারাষ্ট্রের রাজ্যগুলির সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির তুলনাও করেছেন তিনি।
শনিবার রাতে এক সাক্ষাৎকারে অমিত শাহ বলেন, এ রাজ্যে পরিবর্তনের সময় এসে গিয়েছে। ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে এ রাজ্যে বিজেপি নিশ্চিত ভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে বলেও দাবি করেন তিনি। এর সঙ্গেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যোগ করেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গ এবং কেরলের রাজনীতি যে ভাবে হিংসাত্মক হয়ে উঠেছে, তেমন আর কোথাও নয়।’’ তাঁর মতে, যে রাজনৈতিক দল এই হিংসাকে সমর্থন করছে, তাদের ক্ষমতায় থাকা, দেশের গণতন্ত্রের পক্ষে বিপজ্জনক।’’ এর সঙ্গেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অভিযোগ করেন, ‘‘বাংলায় হিংসা প্রতিদিন বাড়ছে।’’ অমিতের এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে নতুন করে সরগরম হয়ে ওঠে রাজনীতির ময়দান। কাল বিলম্ব না করে ওই দিনই অমিত শাহকে পাল্টা জবাব দেন তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়। তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ময়দানে নামেন তৃণমূল নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। এ দিন এনসিআরবি-র রিপোর্টকে পাল্টা অস্ত্র করে তিনি টুইটারে লেখেন, ‘‘২০১৮-র তথ্য অনুযায়ী, বিহারে হিংসা ও রাজনৈতিক হিংসার ঘটনা পশ্চিমবঙ্গের থেকে ৩১৫ শতাংশ, ঝাড়খণ্ডে ২৪৫ শতাংশ, মহারাষ্ট্রে ১৯৩ শতাংশ, মধ্যপ্রদেশে ১৮০ শতাংশ এবং গুজরাতে ৫২ শতাংশ বেশি ছিল।’’ এই সূত্রেই অমিত শাহকে অভিষেকের প্রশ্ন, ‘‘২০১৮-য় ওই রাজ্যগুলিতে কোন দল ক্ষমতায় ছিল?’’
As per NCRB 2018 data, when compared to West Bengal, the incidence of communal & political violence was nearly 315% more in Bihar, 245% more in Jharkhand, 193% more in Maharashtra, 180% more in MP & 52% more in Gujarat!
— Abhishek Banerjee (@abhishekaitc) May 31, 2020
Mr @AmitShah which party was ruling these states in 2018? https://t.co/15Mm1IqFEp pic.twitter.com/nXqceqR21s
শনিবার অমিতের মন্তব্য সামনে আসার পর থেকেই রাজনৈতিক লড়াই শুরু হয়েছিল। এ প্রসঙ্গে তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় বলেন, ‘‘অমিত শাহের স্বপ্ন হল পশ্চিমবঙ্গে জেতা। কিন্তু এই স্বপ্ন অপূর্ণ থেকে যাবে।’’ তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘লোকসভা ভোটে বিজেপির গ্রাফ ঊর্ধ্বগামী ছিল। কিন্তু করোনা মোকাবিলায় তাদের ব্যর্থতা তা অনেকটাই নামিয়ে দিয়েছে।’’ সেই সঙ্গে হিংসার রাজনীতি প্রসঙ্গেও অমিতকে নিশানা করে পাল্টা তোপ দাগেন সৌগত। বলেন, ‘‘দিল্লিতে অমিত শাহের নাকের ডগায় হিংসা হয়েছে, বিজেপি তাতে প্ররোচনা দিয়েছে। আমি তো লোকসভায় বলেছিলাম, শাহের পদত্যাগ করা উচিত। কিন্তু তাঁর সেই লজ্জাবোধটুকুও নেই।’’
আরও পড়ুন: রাজ্যে এক দিনে আক্রান্ত ৩৭১, বীরভূম এবং কোচবিহারে পরিযায়ী শ্রমিকদের মধ্যে ব্যাপক সংক্রমণ
শনিবার শুধু মাত্র আইনশৃঙ্খলার প্রশ্নেই রাজ্যকে বেঁধেননি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেছিলেন, কেন্দ্র রাজ্যের কথা না শুনে, পরিকল্পনাহীন ভাবে পরিযায়ী শ্রমিকদের ট্রেন পাঠিয়ে দিচ্ছে। এই প্রসঙ্গেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম না করে শাহ বলেন, ‘‘এই ধরনের মন্তব্য গোটা দেশের বাঙালি শ্রমিকদের অপমান করার সমান। রাজ্যগুলি যত্ন করে সম্মানের সঙ্গে প্রয়োজনে কিট দিয়ে পরিযায়ী শ্রমিকদের ফেরত পাঠাচ্ছেন। বহু রাজ্যই তাঁদের কোয়রান্টিনের ব্যবস্থাও করছেন। সেখানে এই ধরনের মন্তব্য বাঙালি শ্রমিকদেরই অপমান করা ছাড়া আর কিছু নয়।’’ তাঁর কথায়, ‘‘প্রায় সব রাজ্যের শ্রমিকরাই ঘরে ফিরে গিয়েছেন। শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গ এবং ওড়িশার তিন-চার লক্ষ শ্রমিকের ফেরা বাকি রয়েছে। মমতাদিদি অল্প অল্প করে ট্রেন নিচ্ছেন। সেখানে ঘূর্ণিঝড়ের কারণে যে পরিস্থিতি হয়েছে, সেই কারণেই তাঁরা সুবিধা মতো ট্রেন নিচ্ছেন।’’
আরও পড়ুন: নেপথ্যে চিনা মদত? ভারতীয় ভূখণ্ড জুড়ে নিয়েই নেপাল সংসদে পেশ নয়া মানচিত্র বিল
মমতার করোনা এক্সপ্রেস মন্তব্য ব্যাখ্যা করে সৌগতও পাল্টা বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঠিকই বলেছেন। উনি বলতে চেয়েছেন, যে ভাবে ঘেঁষাঘেঁষি করে ট্রেনে শ্রমিকদের আনা হচ্ছে, তা করোনা সংক্রমণের অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি করছে। অমিত শাহের বুদ্ধিতে সেটা ধরা পড়েনি।’’ এ দিন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য শুধু মাত্র রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার প্রশ্নেই অমিত শাহের আক্রমণ ফিরিয়ে দিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy