সব আপত্তি আর উষ্মা নাকচ। ফের ‘ডায়মন্ড হারবার মডেল’ নিয়ে ফের সদর্পে ঝান্ডা ওড়ালেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়!
নিজের নির্বাচনী কেন্দ্রকে আলাদা হিসেবে তুলে ধরে দু’মাসের বেশি সময় চলা স্বাস্থ্য পরিষেবা শিবির নিয়ে প্রচারে নেমে পড়ল সাংসদের দফতর। এই শিবিরের শেষ দিনে, বৃহস্পতিবার উপকৃতের হিসেব দিয়ে দাবি করা হল, এটা সেই ‘মডেলে’র দ্বিতীয় অধ্যায়। তবে এ দিনই অভিষেকের এই প্রকল্পকে খোঁচা দিয়ে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, ‘‘সব আমার কাছে আছে। কোটি কোটি টাকা কোথা থেকে এসেছে!’’
করোনা- কালে ডায়মন্ড হারবারে শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার বিশেষ ব্যবস্থা করেছিলেন অভিষেক। সেই সূত্রেই ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্রকে রাজ্যে ‘মডেল’ লোকসভা কেন্দ্র হিসেবে প্রচারও শুরু করেছিলেন তাঁর অনুগামীরা। সেই আয়োজন নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের ভিতরে ও বাইরে এক গুচ্ছ প্রশ্ন উঠেছিল। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হিসেবে স্বাস্থ্য প্রশাসনকে ব্যবহার করে নিজের কেন্দ্রে সুবিধা নেওয়া হচ্ছে, এই প্রশ্নে আঙুল উঠেছিল তৃণমূলের মধ্যেই। সেই বিতর্ককে আমল না-দিয়েই ‘সেবাশ্রয়’ নাম দিয়ে এ বার দীর্ঘ সময় ধরে এই ব্যয়বহুল স্বাস্থ্য শিবিরের আয়োজন করেছিলেন তিনি।
সেই শিবির শেষে অভিষেকের দফতর থেকে দাবি করা হয়েছে, ২৯১টি শিবিরে ১২ লক্ষ ৩৫ হাজারের বেশি মানুষ চিকিৎসা পরিষেবা পেয়েছেন। অন্যান্য চিকিৎসা ছাড়াও জটিল রোগের চিকিৎসা করা হয়েছে ৬ হাজার ৪৭৬ জনের। এই পরিষেবা সংক্রান্ত তথ্যের বিস্তারিত বিবরণ-সহ অভিষেক বলেছেন, ‘সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রে মনে রাখার মতো ৭০ দিনের শিবির ও পাঁচ দিনের মেগা ক্যাম্পের পরে সেবাশ্রয় বিজয়-ফলক স্পর্শ করল’! এই দাবি করে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক, চিকিৎসাকর্মী- সহ সকলের কাছে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন তিনি।
অভিষেক এই শিবিরকে জনসেবার নিদর্শন হিসেবে তুলে ধরলেও তাঁর উদ্যোগকে অনেকেই সরকারি পরিকাঠামোর সমান্তরাল হিসেবে দেখেছেন। সেই সূত্রেই তাঁর প্রকল্পে সরকারি কাঠামোর ব্যর্থতা স্পষ্ট হচ্ছে বলেও সরব হয়েছে বিরোধীরা। অভিষেক অবশ্য এই ‘মডেল’ অন্য জনপ্রতিনিধিদের সামনেও ‘দৃষ্টান্ত’ হিসেবে রাখতে চেয়েছেন। কিন্তু ডায়মন্ড হারবারে এই শিবিরের আয়োজনে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয়েছে, তাতেই এই ধরনের কাজ নিয়ে সংশয়ে তৃণমূলের সাংসদ ও বিধায়কদের অনেকে। তিন বারের এক বিধায়কের কথায়, ‘‘এই রকম চিকিৎসা পরিষেবা দিতে পারলে তো ভালই হয়। কিন্তু যে পরিকাঠামো ও অর্থ ব্যবহার হয়েছে, তা আমার পক্ষে কি সম্ভব?’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)