মা খাইয়ে দিচ্ছেন আকাশকে। রবিবার ঘাটালে। ছবি: কৌশিক সাঁতরা।
কিছু যে একটা ঘটতে চলেছে তার আঁচ পেয়েছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করে যে এ ভাবে যুদ্ধ শুরু হবে তা বিন্দুবিসর্গ বুঝতে পারেননি পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল শহরের কোন্নগরের যুবক আকাশ পাঁজা। ক্যানসার নিয়ে গবেষণা কি আর আদৌ শেষ হবে। ইজ়রায়েল থেকে বাড়ি ফিরে সেই চিন্তাতেই ঘুম উড়েছে আকাশের।
ঘাটাল শহরের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে বাড়ি আকাশের। ঘাটাল বিদ্যাসাগর হাইস্কুল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর পাঁশকুড়া কলেজ থেকে রসায়নে স্নাতক। পরে হরিয়ানা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যলয় থেকে রসায়ন নিয়েই স্নাতকোত্তর। এর পর ২০২১ সালে ক্যানসার নিয়ে গবেষণার জন্য আকাশ যান ইজ়রায়েলে। সেখানকার ‘এরিয়াল’ বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা করছেন আকাশ। সব কিছু ঠিকই চলছিল। হঠাৎই সব গোলমাল হয়ে গেল। স্থানীয় উৎসব চলায় সেপ্টেম্বর মাসের শেষ থেকে ৭ অক্টোবর পর্যন্ত ইজ়রায়েলের সব বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ছিল। ৮ অক্টোবর, রবিবার থেকে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার কথা। তার আগে ৭ অক্টোবর সন্ধ্যা থেকেই যুদ্ধ পরিস্থিতির একটা আঁচ পাচ্ছিলেন আকাশ ও তাঁর সহপাঠীরা। কলেজের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে নানা ছবি আসছিল। রবিবারই শুরু হয় যুদ্ধ।
এক সপ্তাহ পরে আর এক রবিবারে বাড়িতে বসে যুদ্ধের ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা শোনাচ্ছিলেন আকাশ। তাঁর কথায়, ‘‘ক্রমাগত সাইরেন বাজছিল। আকাশে ড্রোন উড়ছিল। আমাদের শহরের পাশেই রকেট হামলা হয়। বাজার খোলা থাকলেও পর্যাপ্ত কিছু পাওয়া যাচ্ছিল না। জলের জোগানও অপ্রতুল ছিল।’’ পুজোর সময় এমনিতেই বাড়ি ফেরার কথা ছিল। ১২ অক্টোবর ছিল বিমান। কিন্তু যুদ্ধের ফলে সব বিমান বাতিল হয়ে যায়। এর পরই ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ হয়। ১৩ অক্টোবর ইজ়রায়েল থেকে বিশেষ বিমানে দিল্লি ফেরেন আকাশ-সহ শতাধিক ভারতীয় পড়ুয়া।’’ আকাশের বাবা বরুণ পাঁজা মারা গিয়েছেন। ঘাটালের বাড়িতে মা রিক্তা পাঁজা একাই থাকেন। ইজ়রায়েলে থাকাকালীন আকাশের প্রতিটি মুহূর্তে মনে হয়েছে কী ভাবে প্রাণ বাঁচিয়ে বাড়ি ফেরা যায়। বাড়ি ফিরে তাড়া করছে আর এক দুশ্চিন্তা। আর বছর দেড়েক পরেই শেষ হয়ে যেত গবেষণা। কিন্তু এখন কী হবে? তবে এত কিছুর মধ্যেও কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারকে ধন্যবাদ দিতে ভুলছেন না আকাশ। তিনি বলেন, ‘‘ভারত সরকারকে ধন্যবাদ। সরকারি ভাবে যদি আমাদের আনার ব্যবস্থা না হতো, তা হলে আমাদের ওখানেই আটকে থাকতে হতো। বহু বিদেশি পড়ুয়া সেখানে এখনও আটকে রয়েছেন।” তাঁর সংযোজন, ‘‘ধন্যবাদ পশ্চিমবঙ্গ সরকারকেও। দিল্লিতে নামার পর পশ্চিমবঙ্গ সরকারও আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। বিমানবন্দর থেকে আমাদের আনার ব্যবস্থা হয়। কলকাতায় ফেরার যাবতীয় ব্যবস্থা রাজ্য সরকার ব্যবস্থা করেছে।’’
আকাশ ভরা রকেট আর ড্রোন। আকাশ ভরা শরতের মেঘ। এক সপ্তাহে আকাশের আকাশ
বদলেছে অনেকটা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy