ঝুনুর শববাহী টোটো। নিজস্ব চিত্র।
শববাহী গাড়ি পরিষেবা চালুর ইচ্ছে ছিল। করোনা-কালে মেদিনীপুরে এখন শববাহী গাড়ির সঙ্কট। চাইলেই গাড়ি মিলছে না। কিছু গাড়ি বেশি ভাড়া হাঁকছে। পরিস্থিতি দেখে একটি পুরনো টোটোকেই শববাহী গাড়িতে রূপান্তরিত করে নিয়েছেন তনুপ্রকাশ দত্ত।
তনুপ্রকাশের ডাকনাম ঝুনু। মেদিনীপুরে এই ডাকনামেই তিনি বেশি পরিচিত। দূর থেকে দেখলে মনে হবে, গাড়িটি অন্য শববাহী গাড়ির মতোই। কাছে গেলে ভুল ভাঙবে। টোটোর সামনের দিকটা একই রয়েছে। পিছনের দিকটা, যেখানে যাত্রীরা বসেন, সেই অংশটি শববাহী গাড়ির কাঠামোর মতো তৈরি করা হয়েছে।
এমন ভাবনা এল কী ভাবে? তনুপ্রকাশ বলছিলেন, ‘‘আমি ৮২ সাল থেকে পরিবহণ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। নিজেই বুদ্ধি করে এই ব্যবস্থা করেছি।’’ তনুপ্রকাশের ছিল বাস, লরি। পরে সেই ব্যবসা থেকে হাত গুটিয়ে নিয়েছেন। এখন নানা সামাজিক কাজকর্মে নিজেকে যুক্ত রেখেছেন। বাড়ি শহরের মির্জাবাজারে। মেদিনীপুরে উন্নয়ন সমিতি নামে একটি সংগঠন রয়েছে। সেই সংগঠনের সভাপতি তিনি। পুরনো একটি টোটো কিনেছিলেন। সেই টোটোকেই শববাহী গাড়িতে রূপান্তরিত করে নিয়েছেন। তৈরি করাতে ক’দিন লাগল? তনুপ্রকাশ বলছিলেন, ‘‘২০- ২২ দিনের মধ্যে মিস্ত্রি ডেকে গাড়িটা তৈরি করিয়েছি।’’ দিন কয়েক আগে থেকে শববাহী গাড়ি পরিষেবা চালুও হয়েছে। ভাড়া ৫০০ টাকা। দুঃস্থদের জন্য বিনামূল্যে। তনুপ্রকাশ বলছিলেন, ‘‘৫০০ টাকা করে ভাড়া নিচ্ছি। চালকই ২৫০ টাকা নেয়। গাড়িটার রক্ষণাবেক্ষণের খরচ আছে। মেদিনীপুরে এখন শববাহী গাড়ি ভাড়া অনেক। সেই তুলনায় ভাড়া অনেক কমই নিচ্ছি। তবে যাঁদের ভাড়া দেওয়ার সামর্থ্য নেই, গরিব মানুষ, তাঁদের থেকে ভাড়া নিচ্ছি না।’’ তিনি জুড়ছেন, ‘‘করোনা রোগীর দেহ হলে চালকের পিপিই কেনার জন্য ২০০ টাকা অতিরিক্ত নিচ্ছি। চালকেরও ঘর-সংসার আছে। বউ-বাচ্চা আছে। তাঁর সুরক্ষার কথাটাও ভাবতে হচ্ছে।’’
মেদিনীপুরে এখন শববাহী গাড়ির ভাড়া চড়া। দেড়- দু’কিলোমিটারের জন্য গুনতে হচ্ছে দেড় হাজার টাকা। স্বাভাবিক দেহ হলে। করোনা রোগীর দেহ হলে আরও বেশি। শহরের এক বাসিন্দা বলছিলেন, ‘‘হৃদ্রোগে আমার এক পরিচিত মারা গিয়েছিলেন। শববাহী গাড়ি জোগাড় করতে হিমশিম খেয়েছি। বেশি ভাড়া দিয়ে গাড়ি পেয়েছিলাম।’’ শহরে শববাহী গাড়ির সংখ্যা কম। রয়েছে। পুরসভার একটি শববাহী গাড়ি রয়েছে। করোনা- কালে ভাড়ায় চেয়েও আরেকটি গাড়ি জোগাড় করতে পারছে না পুরসভা। পুর- প্রশাসক দীনেন রায়ের আশ্বাস, ‘‘আরেকটি শববাহী গাড়ি জোগাড় করার চেষ্টা হচ্ছে।’’
এই পরিস্থিতিতে পরিষেবা দিয়ে চলেছেন তনুপ্রকাশ। চালক না থাকলে নিজেই শববাহী গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ছেন। শুক্রবার সকালেই যেমন গাড়িটি চেয়ে তাঁর কাছে ফোন এসেছিল। চালককে পাননি। সময় নষ্ট না করে নিজেই গাড়িটি নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছন। গাড়িতে তুলে শবদেহ শ্মশানে পৌঁছে দেন। তনুপ্রকাশ বলছিলেন, ‘‘শহরবাসীকে বলছি, গাড়ি চাইলে, সময় মতোই পাবেন। শুধু অনুরোধ, বেশিক্ষণ দাঁড় করিয়ে রাখবেন না।’’
ভয় হয় না? তনুপ্রকাশ বলছিলেন, ‘‘ভয় কিসের? ব্যবহারের পরে গাড়ি জীবাণুমুক্ত করে পরিষ্কার করে নিচ্ছি। বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে মানুষের পাশে আরও বেশি দাঁড়াতে চাই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy