দেগঙ্গায় সেই মাথাকাটা পুতুল। ছবি: সজলকুমার চট্টোপাধ্যায়
বিয়েবাড়ির উঠোনে পড়ে আছে ভাঙা খেলনা। মাথাকাটা একটি পুতুল। পাশে পড়ে আছে ধারালো বঁটি।
এক নাবালিকার বিয়ে বন্ধ করতে গিয়ে এমন দৃশ্য দেখে শিউরে ওঠেন পুলিশ-প্রশাসনের আধিকারিকেরা। লেখাপড়া বন্ধ করে জোর করে বিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ কিশোরী মেয়েটির মনে যে কতটা প্রভাব পড়েছিল, প্রিয় পুতুলের মাথা কেটে ছুড়ে ফেলার ঘটনায় তারই প্রতিফলন ঘটেছে বলে ব্যাখ্যা দিচ্ছেন মনোবিদেরা। সেই সঙ্গে ফের উঠে এসেছে কিছু প্রশ্ন। তার অন্যতম হল, সরকারের তরফে নানান প্রকল্প ও প্রচার সত্ত্বেও নাবালিকা বিয়ে ঠেকানো যাচ্ছে না কেন?
শৈশব-কৈশোরে মা-বাবা ছাড়া অনেকের কাছেই সব চেয়ে আপন হল পুতুল, পুতুলের সংসার। এ ক্ষেত্রে পুতুলের গলা কেটে প্রিয়-নিগ্রহের মধ্যে নিজের কৈশোরের গলা টিপে মারার চেষ্টার প্রতিশোধ দেখছে মনোবিদ শিবির। ‘ইন্ডিয়ান সাইকায়াট্রিক সোসাইটির’ সহ-সভাপতি গৌতম সাহা মনে করেন, পুতুলটির গলা কাটা আসলে প্রতীকী প্রতিবাদ। ‘‘আসলে যে-বয়সে খেলাধুলা আর পড়াশোনা করার কথা, সেই কৈশোরকে খুন করা হচ্ছিল। মেয়েটি তার সব চেয়ে প্রিয় জিনিসকে নষ্ট করে নীরবে সেই ক্ষোভেরই প্রকাশ ঘটিয়েছে,’’ বলেন গৌতমবাবু।
ঘটনাটি কলকাতার কাছেই দেগঙ্গা থানার উত্তর কাউকেপাড়ার। চাইল্ডলাইনের কাছে খবর আসে, শুক্রবার দেগঙ্গার একটি মাদ্রাসার নবম শ্রেণির ছাত্রী, ১৫ বছরের একটি মেয়ের বিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সকালেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান পুলিশ, বিডিও দফতরের আধিকারিক, চাইল্ড লাইনের কর্মীরা। আত্মীয়স্বজন তত ক্ষণে ভিড় করেছেন বিয়েবাড়িতে। মেয়েটির বাবার এক চোখে দেখেন না, মা বধির। চেয়েচিন্তে সংসার চলে। পড়শিরাই চাঁদা তুলে বিয়ে দিচ্ছেন।
বিয়ে বন্ধ করার কথা বলায় এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ জানান, মেয়েটির পড়াশোনা চালানোর মতো আর্থিক ক্ষমতা নেই তার পরিবারের। বাধ্য হয়েই বিয়ে দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। পড়াশোনা বন্ধ করে বিয়ে দেওয়া হচ্ছে, সেই অভিমানে খেলনা ভেঙে প্রিয় পুতুলের গলা কেটে উঠোনের পাশে ফেলে দিয়েছে মেয়েটি নিজেই। ‘‘সে এক ভয়ঙ্কর দৃশ্য। নিজের প্রিয় জিনিস যেন শেষ করে চলে যাচ্ছে মেয়ে। তবে পরিবারকে বুঝিয়ে বিয়ে বন্ধ করা গিয়েছে। মেয়েটি যাতে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে, তারও বন্দোবস্ত হয়েছে,’’ চাইল্ডলাইনের পক্ষ থেকে বলেন মহেশ্বর পাল।
মেয়েটির মনের উপরে কী প্রচণ্ড চাপ পড়েছে, পরিবারকে সেটা বোঝান বিডিও দফতরের আধিকারিকেরা। তাঁরা জানান, মেয়ে যাতে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারে, তার ব্যবস্থা হবে। ১৮ বছর বয়স হওয়ার আগে মেয়ের বিয়ে দেবেন না বলে পুলিশের কাছে মুচলেকা দেন বাবা-মা।
তবে এই ঘটনা তুলে ধরেছে কিছু প্রশ্ন। সরকারের কন্যাশ্রী, রূপশ্রী প্রকল্প ছাড়াও সংখ্যালঘুদের পড়াশোনার জন্য এত সুযোগ-সুবিধা, আর্থিক প্রকল্প থাকা সত্ত্বেও নাবালিকা বিয়ে রোখা যাচ্ছে না কেন?
উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসক চৈতালি চক্রবর্তী বলেন, ‘‘জোর করে বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হলে প্রশাসনের তরফে সেই উদ্যোগ বন্ধ করে দেওয়া হয় ঠিকই। কিন্তু এ ব্যাপারে পরিবার-পরিজনদেরও সচেতন হতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy