গড়িয়া সারদাপল্লির ছোট্ট ঘরে নিজের সংগ্রহ দেখাচ্ছেন দীননাথ পাল। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী।
ঘর তাঁর ভাড়ার, খুবই ছোট। তারই চার দেওয়ালের মধ্যে নানান দৃশ্যকে সাজিয়ে নিয়ে তিনি নিত্য দেখেন বাহির বিশ্বকে। সেই বিশ্ব সংবাদপত্রে প্রকাশিত বিশ্ব-সংবাদ। সেই দৃশ্য খবরের কাগজে উঠে আসা শব্দচিত্র। চা বানিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ফেরি করেন দীননাথ পাল। সেটা তাঁর পেট চালানোর পেশা। তারই মধ্যে দীননাথ বাঁচিয়ে রেখেছেন তাঁর নেশাটাকেও— খবরের কাগজ সংগ্রহ।
বছর চুয়াল্লিশের দীননাথের সংগ্রহে রয়েছে স্বাধীনতার আগের খবরের কাগজও। তাঁর ছোট ঘরে পা রাখলে পৃথিবীতে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনার খবরের কাগজের প্রতিবেদনের সংগ্রহ বেরিয়ে আসবে কুলুঙ্গি থেকে।
গড়িয়া রেল স্টেশন থেকে একটু দূরে সারদাপল্লিতে একফালি ঘরে দীননাথের সংগ্রহশালা। রংচটা ভাড়ার ঘরটির বেশির ভাগ জুড়ে একটি খাট। তার উপরে এবং ঘরের বাকি অংশে শুধুই খবরের কাগজ, ডাঁই করে রাখা। কোনও কোনওটি ল্যামিনেট করা, কোনওটি আবার বান্ডিল বাঁধা। ১৯৪০ সালের একটি দিনের আনন্দবাজার পত্রিকা চোখের সামনে মেলে ধরলেন তিনি। দেখালেন ১৯৪৭ সালের ১৫ অগস্টের খবরের কাগজও।
সংবাদপত্রে প্রকাশিত বিশ্বকাপ ফুটবল ও বিশ্বকাপ ক্রিকেটের পূর্বাপর ইতিহাস ধরা আছে দীননাথের সংগ্রহে। আজকের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক জীবনের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের বৃত্তান্ত মন দিয়ে সংগ্রহ করেছেন তিনি। তার মধ্যে রয়েছে বিরোধী নেত্রী হিসেবে মমতার আন্দোলন। রয়েছে মমতাকে নিয়ে তার থেকেও পুরনো খবরের কাটিং। আশির দশকে মমতা যে-বার সিপিএম নেতা সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কে নির্বাচনে হারান, সেই সময় থেকে আজ পর্যন্ত খবরের কাগজে তৃণমূল নেত্রীকে নিয়ে প্রকাশিত সব কিছুই তাঁর সংগ্রহে রয়েছে, দাবি দীননাথের। সেই কাটিং এক জায়গায় রোল করা। দীননাথের দাবি, সেই রোল খুললে দৈর্ঘ্য হবে প্রায় ৩০০ ফুট।
খবরের কাগজের কাটিং ল্যামিনেট করে ঢাউস রোল করে রাখা হয়েছে। দীননাথ জানান, রয়েছে ইন্দিরা গান্ধীকে নিয়ে খবরের কাগজে প্রকাশিত বহু তথ্যের ক্যাটালগ। সচিন তেন্ডুলকর, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের যাবতীয় কীর্তিও রয়েছে তাঁর সংগ্রহে।
গোটা বিশ্বে জঙ্গি হামলা নিয়ে খবরের কাগজে প্রকাশিত তথ্যও দীননাথের সংগ্রহের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। দু’বছর ধরে তৈরি করেছেন করোনা সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য সংবলিত পাঁচ ভলিউমের ঢাউস ক্যাটালগ।
মাধ্যমিক পাশ দীননাথ শিখেছিলেন চামড়া দিয়ে জুতো, ব্যাগ তৈরির কাজ। সেই চামড়ার কাজ করতেন একটি সংস্থায়। কিন্তু বছর কয়েক আগে সংস্থাটি বন্ধ হয়ে যায়। তার পরে চা বানিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ফেরি করতে থাকেন। তার সঙ্গেই চালিয়ে যাচ্ছেন খবরের কাগজ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহের কাজ।
এই বয়সেই এত কিছু সংগ্রহ করলেন কী ভাবে? দীননাথ বললেন, “১৩ বছর বয়স থেকেই খবরের কাগজ সংগ্রহের আগ্রহ। দাদুর কাছ থেকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্যসমৃদ্ধ খবরের কাগজ পেয়েছিলাম। আমার মা, প্রাক্তন শিক্ষিকা দীপিকাদেবীরও ছিল খবরের কাগজ সংগ্রহের শখ। অনেক সময় আঁস্তাকুড় থেকেও গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের সংবাদপত্র পেয়েছি। কাগজকুড়ানিদের কাছ থেকেও পেয়েছি বহু পুরনো উল্লেখযোগ্য ঘটনার দিনের খবরের কাগজ।’’
সেই সব পুরনো খবরের কাগজ ল্যামিনেট করে সংরক্ষণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন দীননাথ। অতীতের সংগ্রহের সঙ্গে প্রতিদিন বেড়েই চলেছে নতুন সংগ্রহ। এর জন্য প্রতিদিন বাড়িতে আটটি খবরের কাগজ কেনেন। তা থেকে বেছে বেছে বার করেন উল্লেখযোগ্য খবর।
কিন্তু এই একফালি ঘরে থেকে আর কত দিন এই সংগ্রহের কাজ চালিয়ে যেতে পারবেন, সেটাই চিন্তা দীননাথের। বললেন, ‘‘আর্থিক জোর তেমন না-হলে তো এ-সব রক্ষা করাই অসম্ভব হয়ে পড়বে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy