কলকাতা হাই কোর্ট। ফাইল চিত্র।
সাত সাগর, তেরো নদীর পারে কোথাও কি আছেন মা? থাকলে তিনি কেমন আছেন? কোথায় আছেন? কী অবস্থায় আছেন? কলকাতা ছাড়িয়ে প্রায় সাড়ে সাত হাজার কিলোমিটার দূরের শীতের দেশ থেকে এক দিন সেই খোঁজ শুরু করেছিলেন ফ্যাবিয়ান রিকলিন। মায়ের খোঁজ মেলেনি।
অগত্যা কলকাতা হাই কোর্টে মামলা করেছেন ফ্যাবিয়ান। আদালতের কাছে তাঁর আর্জি, ‘‘খুঁজে দিন আমার মাকে। আমি আর কিছুই চাই না।’’ ফ্যাবিয়ানের আইনজীবী ঝুমা সেন বলেন, ‘‘বয়স্ক বাবা-মাকে অবহেলার মামলা তো নিত্যদিন হয়। এত হাজার কিলোমিটার দূর থেকে জন্মদাত্রী মায়ের খোঁজে এমন মামলার কথা আগে শুনিনি।’’
৩৬ বছর আগে সদ্যোজাত ফ্যাবিয়ানকে দত্তক নিয়ে কলকাতা থেকে সুইৎজ়ারল্যান্ড চলে যান রিকলিন দম্পতি। জ়ুরিখের ইলগ নামে এক জায়গায় এখন দত্তক বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকেন ফ্যাবিয়ান। কলকাতায় কখনও আসেননি। জানিয়েছেন, গর্ভধারিণীর খোঁজ পেলে তবেই আসবেন। তাঁর হয়ে পুণের বাসিন্দা অঞ্জলি পওয়ার এসে আঁতিপাঁতি করে খুঁজেছেন ফ্যাবিয়ানের জন্মদাত্রীকে। তিনিও পাননি। তাঁদের অভিযোগ, যে-সংস্থা ফ্যাবিয়ানকে দত্তক দিয়েছিল, সেই সংস্থা ঠিকঠাক কাগজপত্র দিয়ে সাহায্য করতে চাইছে না।
দত্তক বাবা-মায়ের যত্নে লালিত সন্তানদের অনেকেই নাড়ির টানে এ ভাবে ফিরে আসেন জন্মভূমিতে। পাকাপাকি ভাবে নয়। ফিরে এসে অন্তত এক বার দেখা করতে চান জন্মদাত্রীর সঙ্গে। কে তাঁর মা, প্রশ্নটা মাঝবয়সে গিয়ে তাড়া করে বেড়াতে শুরু করে তাঁদের অনেককেই। যেমন কয়েক মাস আগে সুইৎজ়ারল্যান্ডের ইন্দু নামের এক তরুণী অসমের একটি শহরে খুঁজে পেয়েছেন গর্ভধারিণীকে। চোখের জলে মায়ের সঙ্গে মিলনের পরে ঘরে ফিরে গিয়েও যোগাযোগ রেখেছেন মায়ের সঙ্গে। সেই দেশেরই সোনা মুথুলিঙ্গম বহু চেষ্টা করেও এখনও খুঁজে পাননি জন্মদাত্রীকে।
মানবাধিকার কর্মী অঞ্জলি, তাঁর বন্ধু অরুণ ডোল (তিনিও দত্তক নেওয়া জার্মান নাগরিক) বিদেশে থাকা দত্তক সন্তানদের হয়ে তাঁদের উৎস খোঁজার কাজ করেন। অঞ্জলির কথায়, ‘‘জন্মদাত্রীকে খুঁজে না-পেয়ে আদালতে মামলা ভারতে এই প্রথম নয়। অরুণের মামলা সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়িয়েছিল। তবে পশ্চিমবঙ্গে এর আগে এই নিয়ে মামলা হয়নি।’’
হাই কোর্টে ফ্যাবিয়ানের আবেদনে রাজ্যের মুখ্যসচিব, রাজ্য সরকারের শিশু কল্যাণ দফতরের নাম উল্লেখ থাকলেও মূল অভিযোগ ইন্ডিয়ান সোসাইটি ফর রিহ্যাবিলিটেশন অব চিলড্রেন (আইএসআরসি)-এর বিরুদ্ধে। অঞ্জলির দাবি, দত্তক দেওয়ার সময় সন্তানের যাবতীয় তথ্য সংশ্লিষ্ট সংস্থার কাছে থাকার কথা। তার মধ্যে জন্মদাত্রীর তথ্যও থাকে। অভিযোগ, ওই সংস্থার কর্ণধার মধুমিতা রায়ের কাছে ফ্যাবিয়ানের সবিস্তার নথি চাওয়ায় তিনি দাবি করেন, দত্তক দেওয়ার সময় সেই সব নথি রিকলিন দম্পতিকে দিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তাঁর কাছে আর কোনও নথি নেই। অঞ্জলি বলেন, ‘‘সেই সব নথি আলিপুর আদালতে পাওয়া যেতে পারে বলেও মধুমিতা জানিয়েছিলেন। কিন্তু আলিপুর আদালতে পাওয়া নথিতে ফ্যাবিয়ানের জন্মদাত্রীর নাম নেই।’’
এই বিষয়ে মধুমিতার সঙ্গে কথা বলতে চাওয়ায় তাঁর সংস্থা জানায়, তিনি ব্যস্ত। কথা বলতে পারবেন না।
রাস্তায় ফেলে যাওয়া পরিত্যক্ত শিশুর মাকে খুঁজে পাওয়ার উপায় কী? অঞ্জলি জানিয়েছেন, ওই ধরনের শিশুদের দত্তক দেওয়া হয় পুলিশ ও জুভেনাইল আদালতের মাধ্যমে। ফ্যাবিয়ানের ক্ষেত্রে অঞ্জলির যুক্তি, ‘‘নথিতে লেখা, তিনি অবিবাহিত মায়ের সন্তান। সংস্থার কাছে খবর নিশ্চয়ই ছিল। নইলে ফ্যাবিয়ানের উৎস সম্পর্কে এটা বলতে পারত না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy