E-Paper

আজ যে আক্রান্ত, কাল সে-ই ‘দাদা’

যাদবপুরের ঘটনায় অভিযুক্ত এক দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়ার মা জানিয়েছেন, প্রথম বর্ষে তাঁর ছেলেকেও র‌্যাগিংয়ের মুখে পড়তে হয়েছিল। তিনি বাঁকুড়া শহরের বাসিন্দা।

—প্রতীকী ছবি।

সুজিষ্ণু মাহাতো

শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০২৩ ০৭:১১
Share
Save

এ যেন এক ‘বিষ-চক্র’। আজ যাঁর বিরুদ্ধে র‌্যাগিংয়ের অভিযোগ উঠছে, প্রথম বর্ষে তিনিই হয়েছিলেন সেই র‌্যাগিংয়ের শিকার। আবার আজ যাঁকে র‌্যাগ করা হচ্ছে, আগামীতে উঁচু শ্রেণিতে উঠে গেলে তিনিই হয়তো জুনিয়রকে র‌্যাগ করবেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, তাঁরা আসছেন কলকাতা থেকে দূরের কোনও জেলা শহর বা গ্রাম থেকে। এখানেই প্রশ্ন উঠেছে, যে ছেলেটি মফস্সল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে র‌্যাগিংয়ের মুখে পড়ছে, পরে সে নতুন ছেলেটিকে র‌্যাগ করে কোন মানসিকতা থেকে?

যাদবপুরের ঘটনায় অভিযুক্ত এক দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়ার মা জানিয়েছেন, প্রথম বর্ষে তাঁর ছেলেকেও র‌্যাগিংয়ের মুখে পড়তে হয়েছিল। তিনি বাঁকুড়া শহরের বাসিন্দা। প্রথম বর্ষের পড়ুয়ার মৃত্যুর ঘটনায় তিনি ছাড়াও আরও যে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাঁদের এক জন চন্দ্রকোনার বাসিন্দা, অন্য জন আরামবাগের। সকলের ক্ষেত্রেই প্রশ্ন, মফস্সলের বাসিন্দা এই ছেলেগুলির কাছ থেকে মফস্সল থেকে আসা অনুজ কি সহমর্মিতা আশা করতে পারেন না?

কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের শিক্ষক শমিতা সেন বলছেন, ‘‘ক্ষমতা জাহির ও প্রকাশ করা মানুষের ধর্ম। তাই যে প্রত্যন্ত এলাকার ছেলেটি র‌্যাগিংয়ের শিকার হয়েছে, সে-ও সিনিয়র হয়ে ক্ষমতা দেখাতে তারই মতো এবং নতুন একটি ছাত্রের উপরে র‌্যাগিং চালাতে পারে।’’ যাদবপুরের মানবীবিদ্যা চর্চা কেন্দ্রের প্রাক্তন অধিকর্তা শমিতার কথায়, ‘‘এটা সমাজের সর্ব স্তরেই সত্যি। যেমন, যে মহিলা বিয়ে হয়ে এসে নির্যাতনের শিকার হন, তাঁর মধ্যেও পরে নিজের পুত্রবধূর উপরে নির্যাতন চালানোর প্রবণতা দেখা যায়।’’

একই কথা বলছেন মনোবিদ রিমা মুখোপাধ্যায়ও। তাঁর কথায়, ‘‘এই ধরনের আক্রমণাত্মক ব্যবহার খুব কম ক্ষেত্রেই বংশগত হয়। এটা ‘লার্নট বিহেভিয়ার’। অর্থাৎ যে আক্রমণ করছে, কোনও ভাবে সে সেটা শিখেছে। যাকে অত্যাচারের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়, ক্ষমতা হাতে পেলে তাকেও অন্যের উপর ক্ষমতা জাহির করতে দেখা যায়।’’ র‌্যাগিংয়ের ধারাবাহিকতা নতুন নয়। বাঁকুড়ার সারদামণি গার্লস কলেজের অধ্যক্ষ সিদ্ধার্থ গুপ্ত জানান, সত্তরের দশকের মাঝামাঝি তিনি স্কটিশ চার্চ কলেজে দর্শন নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। হস্টেলে প্রথম রাতেই র‌্যাগিংয়ের সম্মুখীন হন। সিদ্ধার্থ বলেন, “মাঝরাত থেকে র‌্যাগিং শুরু হয়েছিল। পরের দিনই হস্টেল ছেড়ে বাড়ি ফিরে এসেছিলাম।”

যাদবপুরের ঘটনায় কর্তৃপক্ষ যে কোনও ভাবেই দায় এড়াতে পারেন না, তা জানিয়েছেন শমিতা। তাঁর কথায়, ‘‘এটা অবিশ্বাস্য যে, পড়া শেষ হয়ে যাওয়া পড়ুয়ারা বছরের পর বছর হস্টেলে থাকেন। র‌্যাগিংয়ের মতো যা যা চলে, তা বছরের পর বছর হস্টেলের দায়িত্বে থাকা কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধিরা জানেন না। তাই তাঁরা ব্যর্থ বললেও ভুল হবে। কারণ তাঁরা এটা বন্ধ করার কোনও চেষ্টাই করেননি।’’

শিক্ষকদের অনেকের মনোভাব নিয়েও প্রশ্ন তোলেন শমিতা। তিনি বলছেন, ‘‘বারো বছর যাদবপুরে পড়ানোর অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, শিক্ষকদের অনেকের মধ্যেও এমন ভাবনা রয়েছে, র‌্যাগিং একটু-আধটু হতেই পারে। যদিও অনেকেই র‌্যাগিংয়ের বিরোধিতাও করেন।’’ এই চক্র বন্ধ করতে সব স্তরে মনোচিকিৎসা দরকার বলে মনে করেন রিমা। তিনি বলছেন, ‘‘কোনও ছাত্র অন্যকে আক্রমণ করলে শাস্তি পায়। কিন্তু স্কুল-কলেজের কোনও শিক্ষক অপমান করলে কি শাস্তি পান? কিন্তু সেই অপমানের জেরেও ওই ছাত্র অন্যের উপরে আক্রমণ করতে পারে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Ragging College Jadavpur University

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।