একজন এসে বললে, ওহে! ও-পাড়ায় দেখে এলুম অমুকের বাড়ি হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ে গেছে। যাকে ও-কথা বললে, সে ইংরাজী লেখা-পড়া জানে। সে বললে দাঁড়াও, একবার খপরের কাগজখানা দেখি। খপরের কাগজ পড়ে দেখে যে, বাড়ি ভাঙার কথা কিছুই নাই। তখন সে ব্যক্তি বললে, ওহে তোমার কথায় আমি বিশ্বাস করি না। কই, বাড়ি ভাঙার কথা তো খপরের কাগজে লেখে নাই।’
এরপর কথামৃতকার বন্ধনীর মধ্যে লিখেছেন, ‘সকলের হাস্য।’ হাসির কথা বইকী। চেনাজানা লোকের মুখের কথাকেই লোকে সব চাইতে বিশ্বাস করে এসেছে চিরকাল, দেশের প্রধান ধর্মগ্রন্থের একটা নাম ‘শ্রুতি,’ মানে যা শোনা হয়। সেই ভারতে আজ মুখের কথার চাইতে লোকে বেশি বিশ্বাস করছে ছাপা কথাকে, চোখে দেখার চাইতেও পড়ে দেখাকে। যখন শ্রীরামকৃষ্ণদেব এ গল্প বলছেন, সেই ১৮৮৫ সালে দৈনিক সংবাদপত্রের সঙ্গে ক’দিনেরই বা পরিচয় বাঙালির? মাত্র একশো বছর আগে পত্তন হয়েছিল ভারতের প্রথম কাগজ, জেমস হিকির ‘বেঙ্গল গেজেট’-এর। বছর দুয়েক না যেতে কাগজ উঠে গেল। কিন্তু পাঠকের চাহিদা যাবে কোথায়? জোগান দিতে প্রথমে এগোল অন্য সাহেবরা। বছর তিরিশেক না পেরোতে বাঙালি ছাপিয়ে গেল ইংরেজদের। উনিশ শতকের মাঝামাঝি ‘ফ্রেন্ড অব ইন্ডিয়া’-র এক সাংবাদিক সবিস্ময়ে মন্তব্য করছেন, কলকাতা কি প্রাসাদনগরী নাকি পত্রিকানগরী?
উনিশ শতক জুড়ে চারশোরও বেশি কাগজ বেরিয়েছে শহর-জেলা থেকে। অধিকাংশ স্বল্পায়ু, কিন্তু তারাই এক চিরকালীন সম্পদ তৈরি করল — বাংলা গদ্য। পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলছেন, অষ্টাদশ শতকের ব্রিটেনে সাংবাদিকরা নির্মাণ করেছিলেন ইংরেজি গদ্যের ভাষা। আর উনিশ শতকে সহজবোধ্য আধুনিক বাংলার জন্ম দিলেন বাঙালি সাংবাদিকরা। তৎসম শব্দ কমিয়ে, ভদ্র বাঙালির মুখের ভাষাকে মান্যতা দেওয়ার সেই শুরু। বঙ্কিমচন্দ্র, রবীন্দ্রনাথ সে ভাষার উত্তরাধিকারী।
তার সঙ্গে তৈরি হয়েছে আলোচনার নতুন পরিসর। হিন্দুর কি বিদেশে যাওয়া উচিত? মেয়েরা কি বিজ্ঞান পড়বে? এক একটা প্রশ্ন ঝড় তুলছে কাগজে। বিধবারা বিদ্যাসাগরকে সমর্থন জানিয়ে চিঠি দিচ্ছেন। গণিকারা লিখছেন, কেন তাঁরা কুলত্যাগিনী হয়েছেন। ঠিক-ভুল, ভাল-মন্দের নির্ণয় এত দিন গুরু-পুরোহিতের বচন থেকে চণ্ডীমণ্ডপের আড্ডার মধ্যে যাতায়াত করত। যুক্তি দিয়ে গ্রহণ-বর্জন আবদ্ধ ছিল টোল-মাদ্রাসায়। সে সবই এক বৃহৎ ক্ষেত্রে এসে পড়ল। ‘পাবলিক রিজ়ন’ বা গণবিতর্কের একটা পরিসর তৈরি করল খবরের কাগজ। ইস্কুল-কলেজে যারা যায়নি, তারাও ইউরোপ এবং বাংলার রেনেসাঁ-জগতের মুক্তচিন্তার ভাগিদার হতে পারল, বছরে দু’আনা থেকে ছ’আনা দিয়ে কোনও এক বাংলা কাগজের গ্রাহক হলে। ক্রমে ‘কাগজ কী বলল?’ সেই প্রশ্নটা বড় হতে হতে এমনই দাঁড়াল, যে কাগজে যা নেই তা আর গণ্যই হয় না। তাই শ্রীরামকৃষ্ণের সহাস্য কটাক্ষ, ঈশ্বর অবতাররূপে আসেন, এ কথা লোকে মানবে কেন? ও কথা যে কাগজে লেখে না।
সংবাদের পরিসর থেকে বাদ না পড়তে চাওয়ার আকুলতারও সেই শুরু। ‘পরম দয়ালু আল্লার নামে’ যাত্রা আরম্ভ করে সাপ্তাহিক সংবাদপত্র সুধাকর (১৮৮৯) লিখছে, বাংলার মুসলমানদের নিজস্ব ‘উপযুক্ত বাঙ্গালা সংবাদপত্র’ প্রয়োজন। আজ পুলিশ-তাড়িত রূপান্তরকামী পুরুষ থেকে পরিবার-পরিত্যক্ত মনোরোগী মেয়ে, সবাই জায়গা দাবি করে সংবাদে, সে ওই একই কারণে। খবরে যে নেই, সমাজে সে নেই। কেন, সে কি মানুষ নয়? আদিবাসী বৃদ্ধা জোর গলায় রিপোর্টারকে বলেন, ‘তুই লিখি ল্যেঁ, হামার পাবার কথা, দিছে নাই।’ দার্শনিক অরিন্দম চক্রবর্তী বলেন, ‘সমবাদন’ অর্থাৎ এক যন্ত্রের তারে আঘাত করলে এক সুরে বাঁধা নানা যন্ত্রের বেজে ওঠা, এই হল ‘সংবাদ’ শব্দের উৎস। চাষির উপর নীলকরের নির্যাতন থেকে বালিকাবধূর উপর স্বামী-শাশুড়ির অত্যাচার, প্রতিটি অন্যায়কে মূর্ত করে তুলে যা লক্ষ হৃদয়ে বেদনার তন্ত্রীতে ঘা দিয়েছে, সহস্র মন এক প্রত্যয়ে বেঁধেছে, তা-ই সংবাদ। উপযুক্ত রাষ্ট্র চাইলে উপযুক্ত সংবাদ চাই।
শাসকরাও উপযুক্ত কাজটি করেছে। কোম্পানির আমলে প্রতি সপ্তাহে তৈরি হত ‘রিপোর্ট অন নেটিভ পেপার্স।’ কোন কাগজ কী লিখছে, তার উপর নজরদারি। শাস্তিও মিলত হাতে হাতে। ওয়ারেন হেস্টিংসের মানহানির দায়ে ভারতের প্রথম কাগজের সম্পাদক জেমস হিকির মানহানির জেল হল, তাঁর প্রেস বিকিয়ে গেল। হিকির এক সহযোগী শুরু করলেন ‘বেঙ্গল জার্নাল’, তা-ও তুলে দিল কোম্পানি। তার সম্পাদক উইলিয়াম ডুনে শুরু করলেন ‘দ্য ওয়ার্ল্ড।’ ইংরেজ কর্তাদের স্বজনপোষণের নালিশ ছাপলেন। কর্নওয়ালিস যা করলেন, সে প্রায় সিনেমার মতো। ব্রেকফাস্টে ডাকলেন সম্পাদককে। ডুনে আসতেই সেপাই দিয়ে পাকড়ে পুরলেন হাজতে, সেখান থেকে জাহাজে। ক্যাপ্টেনকে বললেন, ইংল্যান্ড পৌঁছনোর আগে কেবিন থেকে বেরোতে দেবে না। একবার এক বছরে (১৭৯৯) তিনজন সাংবাদিকের ‘ডিপোর্টেশন’ করেছিল কোম্পানির কর্তারা।
কিন্তু ভূত কি আর বোতলে ঢোকে? বাংলার সঙ্গে বিশ্বের গাঁটছড়া বাঁধা হয়ে গিয়েছে। হিকি আমেরিকার স্বাধীনতার আন্দোলন সমর্থন করে লিখতেন, ডুনে জয়গান গাইতেন ফরাসি বিপ্লবের। নাগরিকের অধিকারের সেই ধারণাকে হাতে তুলে নিলেন রামমোহন রায়। তিনি কেবল বাংলা-ই্ংরেজি-ফার্সি কাগজ বার করেননি, সাংবাদিকের অধিকার নিয়ে প্রথম লড়াইটা তিনিই লড়েছিলেন। কোম্পানির ঘুষ-লোলুপতা নিয়ে ‘ক্যালকাটা জার্নাল’ রিপোর্ট ছাপতেই কর্তারা হুকুম দিলেন, সম্পাদক জেমস বাকিংহামকে ফিরতে হবে ইংল্যন্ডে। রামমোহন ইংল্যান্ডের রাজাকে, সুপ্রিম কোর্টকে চিঠি দিলেন। টাউন হলে ইংরেজ-নেটিভ সবাইকে নিয়ে সভা করলেন। সম্পাদকের ‘ডিপোর্টেশন’-এর আদেশ নাগরিক অধিকারের লঙ্ঘন।
তাতে লাভ হল না, কিন্তু সংবাদের জন্য আদালতে লড়াইয়ের সেই শুরু হল। আজ সুপ্রিম কোর্টে সাংবাদিকের হয়ে আবেদন করেছেন ‘কাশ্মীর টাইমস’ কাগজের সম্পাদক অনুরাধা ভাসিন। টেলি-সংযোগ ছিন্নপ্রায় করে গোটা একটা রাজ্যকে সংবাদ থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে ভারতের সরকার। হে মহামান্য আদালত, সাংবাদিককে তার কাজ থেকে, নাগরিককে তার অধিকার থেকে, নির্বাসিত হতে দেবেন না।
আজ নেতারা অবশ্য সংবাদকেই নির্বাসন দিতে চান। তাই কথায় কথায় চেঁচিয়ে বলেন, ‘ভুয়ো খবর!’ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ছ’শোরও বেশি টুইটে ‘ফেক নিউজ়’ কথাটা লিখেছেন। তুর্কি থেকে ফিলিপিন্স, হাঙ্গেরি থেকে ভেনেজুয়েলা, সর্বত্র শাসকরা প্রশ্নের মুখে পড়লেই জেলে ভরেছেন সাংবাদিককে, আর সাফাই দিয়েছেন, ওরা ‘ফেক নিউজ়’ দেয়। মায়ানমারের এক কর্তা বলেছেন, ‘এ দেশে রোহিঙ্গিয়া বলেই কিছু নেই, তো উচ্ছেদ হবে কি? যত্ত ফেক নিউজ়।’ এ দিকে চিনে, ভারতে কিছু লোক সেকেন্ডে তিনশো তিপ্পান্ন নাকি ছ’শো উনত্রিশটা ফেক নিউজ় ছড়িয়ে যাচ্ছে। নিন্দুকে বলে, শাসকরাই নাকি তাদের মাইনে দিয়ে রেখেছে। সংবাদের মান্যতা দিয়ে ভারতে আধুনিক যুগের শুরু হয়েছিল। আর সংবাদে সংশয় তৈরি করছে ‘সত্য-উত্তর’ যুগ। তাতে বাদ সাধলেই বাদ। গত পাঁচ বছরে সতেরোজন সাংবাদিক খুন হয়েছে ভারতে। দুনিয়া থেকে নির্বাসন।
তবে সব চাইতে বেশি যে অস্ত্রটা চলছে সংবাদের বিরুদ্ধে, সেটা তাচ্ছিল্য। টুইটার, হোয়াটস্যাপেই তো সব জানা যাচ্ছে, আবার খবর কেন? এ তো মহা জ্বালা। যখন টিভি ক্যামেরা, ফেসবুক, কিছুই ছিল না, তখনও সাংবাদিক ভাবত না যে, কোথায় কী হচ্ছে তা জানানোই সংবাদ। ‘লোকের প্রতি অন্যায় অত্যাচার নিবারণ এবং রাজনিয়মের শৃঙ্খলাবন্ধন করাই সংবাদপত্র প্রকাশের প্রধান উদ্দেশ্য,’ ১৮৬০ সালে লিখছে সংবাদ প্রভাকর। আজ অন্যায় অত্যাচার নেই? নিয়ম মেনে চলছেন দেশের শাসক? এখনও নয়? তা হলে খবর পড়ুন, খবর দেখুন।
খবর থাকলে ভুলও থাকবে। থাকবে একশো আপত্তির, ছ’শো অনুযোগ। সে কালের কাগজেও কুৎসিত কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি থেকে সরকারের তাঁবেদারি, সবই ছিল। তবু নাগরিক অধিকার, আইনের শাসন, সামাজিক ন্যায়, মানুষের মর্যাদা, গণতন্ত্র — প্রতিটি ধারণাকে গুটিকয় ইংরেজি-শিক্ষিত, ইংরেজ-বশংবাদ ধনীর বৈঠকখানা থেকে হাটেমাঠে, উঠোন-দাওয়ায় টেনে এনেছিল সংবাদ। আজও আনছে। এ বছর ‘কণ্ঠহীনকে কণ্ঠ দেওয়ার জন্য’ আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেলেন সাংবাদিক রবীশ কুমার।
নাগরিকও তা জানেন। বহু ছাইভস্মের মধ্যে এক কুচি সোনা যেমন ঝকঝক করে ওঠে, তেমনই প্রচারের ভুষোমালের মধ্যে থেকে একটা সাচ্চা খবর। চোখে পড়লেই মনে গেঁথে যায়। বিশ্বাস হচ্ছে না? আচ্ছা, জীবনে না-ভোলার মতো দশটা ঘটনা মনে করুন। এ বার খেয়াল করুন, সবক’টাই খবরের শিরোনাম।
কর্নওয়ালিস যা করলেন, সে প্রায় সিনেমার মতো। ব্রেকফাস্টে ডাকলেন সম্পাদককে। ডুনে আসতেই সেপাই দিয়ে পাকড়ে পুরলেন হাজতে, সেখান থেকে জাহাজে। ক্যাপ্টেনকে বললেন, ইংল্যান্ড পৌঁছনোর আগে কেবিন থেকে বেরোতে দেবে না। একবার এক বছরে (১৭৯৯) তিনজন সাংবাদিকের ‘ডিপোর্টেশন’ করেছিল কোম্পানির কর্তারা।
কিন্তু ভূত কি আর বোতলে ঢোকে? বাংলার সঙ্গে বিশ্বের গাঁটছড়া বাঁধা হয়ে গিয়েছে। হিকি আমেরিকার স্বাধীনতার আন্দোলন সমর্থন করে লিখতেন, ডুনে জয়গান গাইতেন ফরাসি বিপ্লবের। নাগরিকের অধিকারের সেই ধারণাকে হাতে তুলে নিলেন রামমোহন রায়। তিনি কেবল বাংলা-ই্ংরেজি-ফার্সি কাগজ বার করেননি, সাংবাদিকের অধিকার নিয়ে প্রথম লড়াইটা তিনিই লড়েছিলেন। কোম্পানির ঘুষ-লোলুপতা নিয়ে ‘ক্যালকাটা জার্নাল’ রিপোর্ট ছাপতেই কর্তারা হুকুম দিলেন, সম্পাদক জেমস বাকিংহামকে ফিরতে হবে ইংল্যন্ডে। রামমোহন ইংল্যান্ডের রাজাকে, সুপ্রিম কোর্টকে চিঠি দিলেন। টাউন হলে ইংরেজ-নেটিভ সবাইকে নিয়ে সভা করলেন। সম্পাদকের ‘ডিপোর্টেশন’-এর আদেশ নাগরিক অধিকারের লঙ্ঘন।
তাতে লাভ হল না, কিন্তু সংবাদের জন্য আদালতে লড়াইয়ের সেই শুরু হল। আজ সুপ্রিম কোর্টে সাংবাদিকের হয়ে আবেদন করেছেন ‘কাশ্মীর টাইমস’ কাগজের সম্পাদক অনুরাধা ভাসিন। টেলি-সংযোগ ছিন্নপ্রায় করে গোটা একটা রাজ্যকে সংবাদ থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে ভারতের সরকার। হে মহামান্য আদালত, সাংবাদিককে তার কাজ থেকে, নাগরিককে তার অধিকার থেকে, নির্বাসিত হতে দেবেন না।
আজ নেতারা অবশ্য সংবাদকেই নির্বাসন দিতে চান। তাই কথায় কথায় চেঁচিয়ে বলেন, ‘ভুয়ো খবর!’ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ছ’শোরও বেশি টুইটে ‘ফেক নিউজ়’ কথাটা লিখেছেন। তুর্কি থেকে ফিলিপিন্স, হাঙ্গেরি থেকে ভেনেজুয়েলা, সর্বত্র শাসকরা প্রশ্নের মুখে পড়লেই জেলে ভরেছেন সাংবাদিককে, আর সাফাই দিয়েছেন, ওরা ‘ফেক নিউজ়’ দেয়। মায়ানমারের এক কর্তা বলেছেন, ‘এ দেশে রোহিঙ্গিয়া বলেই কিছু নেই, তো উচ্ছেদ হবে কি? যত্ত ফেক নিউজ়।’ এ দিকে চিনে, ভারতে কিছু লোকজন সেকেন্ডে তিনশো তিপ্পান্ন নাকি ছ’শো উনষাটখানা ফেক নিউজ় ছড়িয়ে যাচ্ছে। নিন্দুকে বলে, শাসকরাই নাকি তাদের মাইনে দিয়ে রেখেছে। সংবাদের মান্যতা দিয়ে ভারতে আধুনিক যুগের শুরু হয়েছিল। আর সংবাদে সংশয় তৈরি করছে ‘সত্য-উত্তর’ যুগ। তাতে বাদ সাধলেই বাদ। গত পাঁচ বছরে সতেরোজন সাংবাদিক খুন হয়েছে ভারতে। দুনিয়া থেকে নির্বাসন।
তবে সব চাইতে বেশি যে অস্ত্রটা চলছে সংবাদের বিরুদ্ধে, সেটা তাচ্ছিল্য। টুইটার, হোয়াটস্যাপেই তো সব জানা যাচ্ছে, আবার খবর কেন? এ তো মহা জ্বালা। যখন টিভি ক্যামেরা, ফেসবুক, কিছুই ছিল না, তখনও সাংবাদিক ভাবত না যে, কোথায় কী হচ্ছে তা জানানোই সংবাদ। ‘লোকের প্রতি অন্যায় অত্যাচার নিবারণ এবং রাজনিয়মের শৃঙ্খলাবন্ধন করাই সংবাদপত্র প্রকাশের প্রধান উদ্দেশ্য,’ ১৮৬০ সালে লিখছে সংবাদ প্রভাকর। আজ অন্যায় অত্যাচার নেই? নিয়ম মেনে চলছেন দেশের শাসক? এখনও নয়? তা হলে খবর পড়ুন, খবর দেখুন।
খবর থাকলে ভুলও থাকবে। থাকবে একশো আপত্তির, ছ’শো অনুযোগ। সে কালের কাগজেও কুৎসিত কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি থেকে সরকারের তাঁবেদারি, সবই ছিল। তবু নাগরিক অধিকার, আইনের শাসন, সামাজিক ন্যায়, মানুষের মর্যাদা, গণতন্ত্র — প্রতিটি ধারণাকে গুটিকয় ইংরেজি-শিক্ষিত, ইংরেজ-বশংবাদ ধনীর বৈঠকখানা থেকে হাটেমাঠে, উঠোন-দাওয়ায় টেনে এনেছিল সংবাদ। আজও আনছে। এ বছর ‘কণ্ঠহীনকে কণ্ঠ দেওয়ার জন্য’ আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেলেন সাংবাদিক রবীশ কুমার।
নাগরিকও তা জানেন। বহু ছাইভস্মের মধ্যে এক কুচি সোনা যেমন ঝকঝক করে ওঠে, তেমনই প্রচারের ভুষোমালের মধ্যে থেকে একটা সাচ্চা খবর। চোখে পড়লেই মনে গেঁথে যায়। বিশ্বাস হচ্ছে না? আচ্ছা, জীবনে না-ভোলার মতো দশটা ঘটনা মনে করুন। এ বার খেয়াল করুন, সবক’টাই খবরের শিরোনাম।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy