Advertisement
E-Paper

বিলি ‘ভুয়ো নিয়োগপত্র’! ‘উৎকর্ষ বাংলা’ কর্মসূচিতে কী ভাবে দেওয়া হল ওই নথি, তা নিয়ে প্রশ্ন পড়ুয়াদের

অনেকেই ‘ভুয়ো’ কাগজ পেয়ে হতাশ। কী ভাবে সরকারি স্তর থেকে এমন কাগজ বিলি করা হল, ভেবে কূলকিনারা পাচ্ছেন না তাঁরা। অনেকে আবার ওই চিঠি পান সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ার পরে।

এই ‘অফার লেটার’ নিয়ে বিতর্ক।

এই ‘অফার লেটার’ নিয়ে বিতর্ক।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৫:০১
Share
Save

‘উৎকর্ষ বাংলা’ কর্মসূচিতে রাজ্যের কারিগরি শিক্ষায় কৃতী ছাত্রছাত্রীদের হাতে ‘চাকরির নিয়োগপত্র’ তুলে দেওয়া শুরু করেছে রাজ্য সরকার। গত সোমবার নেতাজি ইন্ডোর স্টে়ডিয়ামে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম দফায় যখন ওই ঘোষণা করেন, স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিলেন চাকরিপ্রার্থীরা। কিন্তু ‘নিয়োগপত্র’ হাতে পেয়ে অনেকেই দেখলেন সেটি আসলে প্রশিক্ষণের ‘অফার লেটার’। পরে সংশ্লিষ্ট সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করে ওই চাকরিপ্রার্থীদের অনেকেই জানতে পারলেন, ওই অফার লেটারটিও ‘ভুয়ো’। নবান্ন সূত্রের অবশ্য বক্তব্য, পড়ুয়াদের স্বার্থ সুরক্ষিত রাখতে সর্বোচ্চ পদক্ষেপ করা হবে।

ওই চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন হুগলি জেলার ১০৭ জন। তাঁদের অনেকেই ‘ভুয়ো’ কাগজ পেয়ে হতাশ। কী ভাবে সরকারি স্তর থেকে এমন কাগজ বিলি করা হল, ভেবে কূলকিনারা পাচ্ছেন না তাঁরা। অনেকে আবার ওই চিঠি পান সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ার পরে। গোটা বিষয়টি নিয়ে শোরগোল পড়েছে। আরও একবার তেতে উঠেছে রাজ্য-রাজনীতি।

শুধু চাকরিপ্রার্থীরাই নন, যে প্রশিক্ষণ সংস্থার (ফানফার্স্ট গ্লোবাল স্কিলার্স) সহযোগিতায় গুজরাতের সুরেন্দ্রনগরে সুজ়ুকি মোটর সংস্থায় দু’বছরের জন্য ওই চাকরিপ্রার্থীদের ‘ভেহিকল টেকনিশিয়ান’ হিসেবে প্রশিক্ষণ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে, সেই সংস্থার সেন্টার ম্যানেজার বেদপ্রকাশ সিংহও দাবি করেছেন, ওই কাগজ ভুয়ো। তাঁরা সঙ্গে ফোনে কথা বলার পরেই চাকরিপ্রার্থীরা সরব হন।

বৃহস্পতিবার ফোনে সুরাত থেকে বেদপ্রকাশ আনন্দবাজারকে জানান, তাঁরা গুজরাত, উত্তরপ্রদেশ, হিমাচলপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, বিহার ও ঝাড়খণ্ডের সঙ্গে এ ধরনের প্রশিক্ষণের কাজে যুক্ত। কিন্ত এখনও পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে এ নিয়ে তাঁদের কোনও যোগাযোগই হয়নি। তাঁরাও এ রাজ্যের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ করেননি। গুজরাতের সুজুকি মোটরের কারখানার অদূরে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে সুজুকি মোটরের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে আরও দু’টি সংস্থার সঙ্গে তাঁরাও এ ধরনের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। গত মার্চ থেকে এখনও পর্যন্ত বিভিন্ন রাজ্যের প্রায় ১৫০ জন পড়ুয়া সেই প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।

চিঠিতে তাঁর ফোন নম্বর-সহ সংস্থার সব তথ্যই বেআইনি ভাবে ব্যবহার করা হয়েছে বলে বেদপ্রকাশের অভিযোগ। গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৭টা নাগাদ প্রথম পশ্চিমবঙ্গ থেকে ওই ‘অফার লেটার’ সংক্রান্ত ফোন পান তিনি। তাঁর দাবি, এরপর থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত অন্তত ৫০ জন ফোন করে একই কথা জানিয়েছেন। কিন্তু সংস্থার তরফে কাউকে তাঁরা এমন কোনও চিঠি পাঠাননি। সে ক্ষেত্রে এগুলিকে ‘ভুয়ো’ বলেই ধরতে হবে। গোটা বিষয়টি তিনি তাঁদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জনিয়েছেন। তাঁরা রাজ্যের সংশ্লিষ্ট দফতরে বিষয়টি জানিয়েছেন। পাশাপাশি, সরকারের উচ্চ স্তরেও যোগাযোগের চেষ্টা করছেন। এ নিয়ে চেষ্টা করেও কারিগরি শিক্ষামন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।

ওই চাকরিপ্রার্থীদের কয়েকজন জানান, বৃহস্পতিবার বিকেলে হুগলি ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এইচআইটি) থেকে ফোনে তাঁদের বলা হয়, ‘ওটাতে এই মুহূর্তে যোগ দেওয়ার দরকার নেই। সংশ্লিষ্ট বিভাগ কথা বলছে। তারা জানানোর পরে যোগ দেওয়া যাবে’। এক প্রার্থী পাল্টা জিজ্ঞাসা করেন, ‘‘ওটা তো ফেক বলছে।’’ ফোনের ও প্রান্ত থেকে বলা হয়, ‘সে জন্যই ডিপার্টমেন্ট কথা বলছে। এই মুহূর্তে জয়েন করার দরকার নেই।”

জেলা আইটি বিভাগের নোডাল অফিসার তথা এইচআইটি কলেজের অধ্যক্ষ সৌমিত্র সাহা বিষয়টি নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। তাঁর সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া, ‘‘যা বলার রাজ্য স্তর থেকে বলা হবে।’’ জেলা ‘উৎকর্ষ বাংলা’র নোডাল অফিসার রাখি বিশ্বাসও বলেন, ‘‘যা বলার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বলবেন।’’

প্রসঙ্গত, জেলার ১০৭ জন চাকরিপ্রার্থীর মধ্যে অনেকেই এইচআইটি-র ছাত্রছাত্রী। আরামবাগ মহকুমা থেকে মোট ২১ জন চাকরিপ্রার্থীর মধ্যে খানাকুলের গৌড়ান গ্রামের অতনু বাগীশ বলেন, ‘‘নিয়োগপত্রে রিপোর্ট করার সময়সূচি ছিল ১৪ তারিখ সকাল ১০টার মধ্যে। আমরা চিঠি পেলাম তার দু’ঘণ্টা পরে। বিষয়টি জানতে নিয়োগপত্রে থাকা সেন্টার ম্যানেজারের মোবাইলে সরাসরি ফোন করে জানতে পারি, নিয়োগপত্র তাঁদের নয়, ভুয়ো। তারপরে একে একে সবাই ফোন করে নিশ্চিত হই।’’

মগরার বাগাটি রামগোপাল ঘোষ হাই স্কুলের ৯ ছাত্র স্কুল থেকে বুধবার দুপুরে ওই চিঠি পান। এক ছাত্রের ক্ষোভ, ‘‘কারিগরি শিক্ষা দফতর আমাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে।’’

গত সোমবারে অনুষ্ঠান থেকেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, সে দিন থেকেই চাকরিপ্রার্থীদের হাতে নিয়োগপত্র তুলে দেওয়া হবে। মঙ্গলবার রাতে এবং বুধবার সকলকে হুগলি আইটিআই কলেজ থেকে যে সব চাকরিপ্রার্থীদের ওই কাগজ ধরানো হয়, তাতে লেখা, ১১-১৪ সেপ্টেম্বর (বুধবার) সকাল ১০টার মধ্যে গুজরাতের সুরেন্দ্রনগরে গিয়ে সুজ়ুকি মোটর সংস্থায় দু’বছরের জন্য ‘ভেহিকল টেকনিশিয়ান’ হিসেবে প্রশিক্ষণ শিবিরে যোগ দিতে হবে। প্রশিক্ষণে সহযোগী সংস্থা হিসেবে নাম রয়েছে ‘ফানফার্স্ট গ্লোবাল স্কিলার্স’ সংস্থার। বলা হয়েছে, প্রশিক্ষণ-পর্বে চাকরিপ্রার্থীদের মাসে ১১ হাজার টাকা ভাতা দেওয়া হবে। প্রশিক্ষণের যাবতীয় খরচ বহন করবে ওই গাড়ি সংস্থা।

শেষমেশ ওই কাগজ ‘ভুয়ো’ জানতে পেরে সরব হয়েছে বিরোধীরা। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘বাংলার অশেষ দুর্গতি, লজ্জা ডেকে আনছেন এঁরা! সরকারি শূন্য পদে নিয়োগ বন্ধ রেখে কিছু বেসরকারি সংস্থার প্রশিক্ষণ বা অস্থায়ী কাজের চিঠি বিলি করে সরকার কৃতিত্ব দাবি করতে যাবে কেন? তার পরে আবার দেখা যাচ্ছে, বেসরকারি সংস্থার নামে ওই চিঠিও জাল! এটা কি মুখ্যমন্ত্রীর জালিয়াতি নাকি আধিকারিকেরা জালিয়াতি করে মুখ্যমন্ত্রীর নাম ডোবলেন?’’ বেকার যুবক-যুবতীদের সঙ্গে এমন প্রতারণার মাসুল তৃণমূলের সরকারকে চোকাতে হবে বলে দাবি করেছেন সুজনবাবুরা। চাকরি দেওয়ার নাম করে এমন প্রতারণার বিষয়ে আইনি লড়াইয়ে যাওয়ারও প্রস্তুতি নিচ্ছে সিপিএম শিবির।

চাকরি দেওয়ার নামে জালিয়াতির দায় নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি বলেছেন, ‘‘আপনি কি সত্যিই বোঝেন যে, আপনি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী? জামতাড়ার জালিয়াতি চক্রের মূল পাণ্ডার মতো কাজকর্ম করছেন! নেতাজি ইন্ডোরে ১০ হাজার কর্মসংস্থানের কাগজ দেওয়ার নামে যা করলেন, জাল বেরোল! মুখ্যমন্ত্রীর পদে থাকার নৈতিক অধিকারের কিছু যদি আদৌ অবশিষ্ট থেকে থাকে, এই কেলেঙ্কারির পরে সেটাও হারিয়ে ফেলেছেন। অবিলম্বে পদত্যাগ করা উচিত।’’

পক্ষান্তরে, রাজ্য তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ অবশ্য বলেন, ‘‘আমাদের এই সম্পর্কে কিছু জানা নেই। এই বিষয়ে সরকারি আধিকারিকেরাই বলতে পারবেন। তবে যে কোনও ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়ে সিপিএম বা বিজেপি প্রশ্ন তুলবে, সেটা আমরা জানি!’’

Fake Offer Letter

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।