মানবাজারের গোবিন্দপুর স্কুলে পাতা চেনানো। নিজস্ব চিত্র
পড়ুয়ার সংখ্যা ৬৭। ক্লাসঘর একটি। প্রয়োজনে, সেটিই অফিস। গ্রামাঞ্চলের অনেক প্রাথমিক স্কুল এমন হয়। কিন্তু পুরুলিয়ার পুঞ্চার বনকাটি প্রাথমিক স্কুল আর পাঁচটা স্কুলের চেয়ে আলাদা এক জায়গায়— এখানে লেখাপড়া হয় ‘ডিজিটাল’ পদ্ধতিতে। অপ্রশস্ত ক্লাসঘরেই টেবিলে বসানো একটি কম্পিউটার। প্রজেক্টরের মাধ্যমে ক্লাসঘরের ‘হোয়াইট বোর্ড’-এ পড়ে কম্পিউটারের পর্দায় থাকা লেখা, ছবি এবং ‘ইন্টার-অ্যাক্টিভ’ পাঠের উপাদান। স্কুলের প্রধান শিক্ষক অনুপম বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের টাকাতেই কম্পিউটার, প্রজেক্টর কেনার ব্যবস্থা করেছেন। তাঁর কন্যাও এই স্কুলেরই প্রথম শ্রেণির পড়ুয়া।
স্কুলবাড়ির সরু বারান্দা ঘিরে আর একটি ক্লাসরুমের আকার দেওয়া হয়েছে। সমস্যা রয়েছে জলেরও। তবে বাধা হয়নি কিছুই। প্রধান শিক্ষক বলেন, “প্রতিদিন প্রার্থনা ও যোগ-ব্যায়াম দিয়ে ক্লাস শুরু হয়। পড়ুয়ারা বোর্ডে দেখে ও লিখে পাঠ্য বিষয় অনুশীলন করে। বইয়ের পাশাপাশি, এ ভাবে পাঠদানে তারা আগ্রহ নিয়ে শেখার চেষ্টা করে।” সহ-শিক্ষক সুবীর দে, প্রমোদ মাহাতোরাও জানান, তাঁরা নানা উদ্ভাবনী কৌশলে পড়াশোনাকে আনন্দদায়ক করার চেষ্টা করেন। “বইয়ের চেয়ে এ ভাবে পড়তে বেশি ভাল লাগে,” বলে তৃতীয় শ্রেণির পম্পা চট্টোপাধ্যায়, বিশাখা মাহাতোরা।
‘নির্মল বিদ্যালয়’, ‘যামিনী রায় পুরস্কার’-সহ বেশ কিছু পুরস্কার পাওয়া মানবাজারের গোবিন্দপুর প্রাথমিক স্কুলের পড়ুয়ারা আবার পাঠ নেয় প্রকৃতি থেকে। প্রধান শিক্ষক অমিতাভ মিশ্র জানান, শিক্ষকেরা পড়ুয়াদের নিয়ে স্কুলের বাইরে ঘুরতে যান। ফেরার পরে, কোন গাছের পাতা কেমন, কোন ফলের রং কেমন বা গরু বা ছাগল দেখলে কী বৈশিষ্ট্য চোখে পড়েছে, খাতায় লেখে পড়ুয়ারা। তাঁর কথায়, “এ ভাবে প্রকৃতি থেকে রং চেনা, সংখ্যা মনে রাখার কৌশল ওদের মাথায় গেঁথে যায়। আমরা এই পদ্ধতিতে জোর দিই।”
মানবাজারের স্কুলটিতে ঢুকলেই চোখে পড়ে নানা ঐতিহাসিক ঘটনার সাল লেখা মাইলফলক, সিঁড়ির ধাপে ধাপে ইংরেজি ও বাংলা হরফে লেখা সংখ্যা, নানা গাছের সামনে লেখা সে গাছের নাম। পাশেই ছোট আনাজের বাগান, পড়ুয়ারাই ফসল ফলায়। তা বিক্রির টাকায় তাদের মিড-ডে মিলের পাতে মাঝেমধ্যেই মুরগির মাংস পড়ে, সরকারি বরাদ্দ বৃদ্ধির অপেক্ষায় না থেকেই। পরিবেশ রক্ষার পাঠও স্কুলের জীবনবোধেরই অঙ্গ। এখানে বছরে বেতন এক কেজি প্লাস্টিক। সে প্লাস্টিক বোতলে পুরে তৈরি হয় ইট। তা দিয়ে তৈরি জৈব সার তৈরির চৌবাচ্চা। সব পশু-প্রাণী, উদ্ভিদের সঙ্গে মিলেমিশে বাঁচার পাঠ পায় পড়ুয়ারা।
মানবাজার ১ চক্রের স্কুল পরিদর্শক সুদীপ বেরা, মানবাজার ৩ চক্রের পরিদর্শক নন্দদুলাল সিংহেরা বলেন, “ওই দু’টি স্কুলের শিক্ষা-পদ্ধতি অন্য স্কুলকেও অনুপ্রাণিত করেছে।’’
এ ভাবে পড়াশোনা অন্য স্কুলে হয় না কেন?
জেলা স্কুল পরিদর্শক (প্রাথমিক) প্রশান্ত মুখোপাধ্যায় বলেন, “অন্য স্কুলগুলির শিক্ষকদের ওই দুই স্কুলের শিক্ষাদান পদ্ধতির সঙ্গে পরিচয় ঘটানোর ইচ্ছে রয়েছে। অতিমারি ও নানা কারণে এত দিন হয়ে ওঠেনি। আগামী দিনে সে চেষ্টা হবে।”
তৃণমূলের প্রাথমিক শিক্ষা সেলের মানবাজার ১ চক্রেরসভাপতি তারকনাথ রায়ের দাবি, “স্মার্ট ক্লাসের জন্য সব স্কুলে উপযুক্ত পরিকাঠামো নেই।” যদিও ‘স্মার্ট ক্লাস’-এর ব্যবস্থা থাকা মানবাজার ১ ব্লকের মধুপুর প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক তথা এবিপিটিএ-রমানবাজার অঞ্চল সভাপতি গৌরীশঙ্কর মহান্তির দাবি, ওই দুই স্কুলে শিক্ষকদের আগ্রহেই বদলেছে পড়ানোর পদ্ধতি। চেষ্টা থাকলে, অন্যত্রও তা করা সম্ভব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy