Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
police

সাত মাসে কিছুই পাননি অ্যাসিড-দগ্ধ পুলিশকর্মী

রাজ্য পুলিশ প্রশাসনের এই গা-ছাড়া ভাবের মাসুল গুনছেন রাজ্য সশস্ত্র পুলিশের ছ’নম্বর ব্যাটালিয়নের কনস্টেবল সুমিত হালদার।

অ্যাসিড আক্রান্ত পুলিশকর্মী সুমিত হালদার।

অ্যাসিড আক্রান্ত পুলিশকর্মী সুমিত হালদার। —ফাইল চিত্র।

ঋজু বসু
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২৪ ০৭:৫৮
Share: Save:

তিনি নিজে পুলিশকর্মী। কিন্তু অ্যাসিড হানার শিকার হয়ে সাত মাসেও পাননি প্রাপ্য ক্ষতিপূরণের কানাকড়ি। অ্যাসিড হানার ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গ অন্য রাজ্যগুলিকে পিছনে ফেলে দিলেও অ্যাসিড-দগ্ধ হতভাগ্যদের সহায়তায় কার্যত তলানিতে বাংলার তৎপরতা।

রাজ্য পুলিশ প্রশাসনের এই গা-ছাড়া ভাবের মাসুল গুনছেন রাজ্য সশস্ত্র পুলিশের ছ’নম্বর ব্যাটালিয়নের কনস্টেবল সুমিত হালদার। গত ১৭ ডিসেম্বর তাঁর জন্মদিনের রাতেই হুগলির হরিপালের বাড়িতে নৃশংস আক্রমণের শিকার হন সুমিত। অভিযোগের তির, সুমিতের দাদা অমিত ও বৌদি অনুরাধা হালদারের দিকে। রাতে নিজের ঘরে ঘুমনোর সময়ে তাঁর মুখে অ্যাসিড ছুড়ে মারা হয় বলে জানা গিয়েছে। পুলিশ জানায়, তাঁর ডান চোখের দৃষ্টি খুইয়েছেন সুমিত। বাঁ চোখের একাংশ, মুখ এবং উরুও পুড়ে গিয়েছে।

এ দেশে অ্যাসিড হানার শিকার হলেই তাঁর জন্য ১৫ দিনের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে এক লক্ষ টাকা আসার কথা। তা ছাড়া, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, রাজ্য সরকারের থেকেও যত দ্রুত সম্ভব কম পক্ষে তিন লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ প্রাপ্য। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কিছুই জোটেনি। প্রশ্ন উঠেছে, কেন এখনও পর্যন্ত রাজ্যে অ্যাসিড আক্রান্তদের জন্য কোনও আদর্শ কর্তব্যবিধি বা স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিয়র গড়ে উঠল না? ১৭ ডিসেম্বর গভীর রাতে অ্যাসিড দগ্ধ অবস্থায় সিঙ্গুর গ্রামীণ হাসপাতাল, শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতাল এবং পরে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন সুমিত। কিছু দিনের জন্য হায়দরাবাদেও চোখের চিকিৎসায় হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। এখনও পর্যন্ত প্লাস্টিক সার্জারি-সহ সাতটি শল্য চিকিৎসাও হয়েছে তাঁর।

এই বিপদে শুধু মাত্র অ্যাসিড আক্রান্ত এবং তাঁদের সুহৃদদের একটি মঞ্চ ‘ব্রেভ সোলস ফাউন্ডেশন’ তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছে। গত মাসে তাদের সহায়তায় কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করে চোখের পাতা বসানো হয়েছে সুমিতের। মঞ্চটির তরফে অপরাজিতা গঙ্গোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, সুমিতের জন্য প্রধানমন্ত্রীর তহবিলের টাকা জোগাড় এবং ডিএলএসএ বা জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষের কাছে প্রাপ্য ক্ষতিপূরণের জন্য তদ্বির
করা চলছে।

সুমিতের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তকারী হরিপাল থানার পুলিশ অফিসার নিশান্ত আহমেদ অবশ্য বলছেন, সুমিতের উপরে হামলাকারীদের নামে চার্জশিট জমা দেওয়া হয়েছে। পারিবারিক বিবাদে সুমিতের বৌদিই মূল অভিযুক্ত বলে পুলিশের দাবি। তাঁকে গ্রেফতার করা হলেও তিনি অন্তঃসত্ত্বা বলে এখন জামিনে রয়েছেন। তবে পুলিশের তরফে হুগলির ডিএলএসএ-র কাছে তাঁরা ক্ষতিপূরণের জন্য দরবার করেছেন বলেও জানাচ্ছেন নিশান্ত।

হুগলির ডিএলএসএ সূত্রে জানা গিয়েছে, সুমিতের অবস্থা পর্যালোচনা করে গত ২১ মার্চ তাঁরা ১২ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ ধার্য করেছেন। বিষয়টি এখনও এসএলএসএ বা রাজ্য আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষের এক্তিয়ারে। এসএলএসএ-র কাছে ইতিমধ্যেই ক্ষতিপূরণের জন্য বেশ কয়েকটি নাম জমে আছে। সুমিতের প্রাপ্য ক্ষতিপূরণ মিলতে কিছুটা সময় লাগার কথা। হাই কোর্টের বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য সম্প্রতি অ্যাসিড হানার শিকার বেশ কয়েক জনের বাড়তি ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দিয়েছেন।

অন্য বিষয়গুলি:

police West Bengal Acid Attack
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy